গত আলোচনায় হুজুর আকরাম (সা.)-এর ত্যাগ ও ধৈর্য নিয়ে একটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছিল, যা ছিল অসম্পূর্ণ। আজ তা শেষ করার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ। হযরত ওমর (রা.) নবী করিম (সা.)-এর আদেশ মোতাবেক আমাকে নিয়ে গেলেন এবং আমার পূর্ণ দাবি মিটিয়েও বিশ ছা’অ খেজুর বেশি দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই বিশ ছা’অ কেন? তিনি বললেন, হুজুর (সা.) তা-ই আদেশ করেছেন। আমি বললাম, ওমর, আপনি আমাকে চেনেন কি? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, আমি যায়েদ ইবনে শানা। তিনি বললেন, সেই ইহুদিদের বড় পন্ডিত? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমিই ইহুদিদের বড় পন্ডিত। তিনি বললেন, এত বড় সম্মানিত লোক হয়েও তুমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে এমন নিকৃষ্ট ব্যবহার করলে কেন? আমি বললাম, নবুওয়াতের আলামতসমূহের মধ্যে দু’টি আলামত পরীক্ষা করার সুযোগ আমি ইতঃপূর্বে পাইনি। একটি এই যে, তার সহিষ্ণুতা তার ক্রোধের ওপর প্রবল হবে।
দ্বিতীয় এই যে, তার সাথে যতই মূর্খজনোচিত ব্যবহার করা হবে, তার সহিষ্ণুতা ততই বৃদ্ধি পাবে। এখন এ দু’টি আলামতও পরীক্ষা করে দেখলাম। এখন আমি আপনাকে আমার ইসলাম গ্রহণের সাক্ষী করছি। আমার অর্ধেক মাল উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য সদকা। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ফিরে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম। যায়েদ ইবনে শানা এরপর বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অবশেষে তাবুক যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। (মজউল ফাওয়ায়েদ, খাসায়েলে নববী)।
ইমাম বুখারী (রহ.) হযরত আনাস (রা.)-এর বাচনিক রেওয়ায়েত করেন যে, একবার আনাস (রা.) রাসূলে আকরাম (সা.)-এর সাথে যাচ্ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাঁধে শক্ত পাড়বিশিষ্ট একটি নাজরানি চাদর ছিল। এ সময় এক বেদুইন এসে তার চাদর ধরে হ্যাঁচকা টান মারল। হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাঁধের দিকে চেয়ে দেখি চাদরের শক্ত প্রান্তের টানে তার কাঁধ ছিলে গেছে। এরপর বেদুইন বলল, মুহাম্মাদ আপনার কাছে রক্ষিত আল্লাহ তায়ালার মাল থেকে আমাকে কিছু দান করার নির্দেশ দিন। এমতাবস্থায়ও রাসূলুল্লাহ (সা.) তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন এবং তাকে কিছু দেয়ার জন্য আমাকে বললেন। (মাদারিজুন নবুওয়াত)।
একবার মক্কায় এমন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যে, লোকেরা হাড্ডি ও মৃত জন্তু খেতে শুরু করে দেয়। আবু সুফিয়ান তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘোর শত্রু ছিল। সে এসে বলল, মুহাম্মাদ, আপনি মানুষকে পারস্পরিক আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার শিক্ষা দেন। আপনার সম্প্রদায় দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারাচ্ছে। আপনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দুআ করছেন না কেন? কুরাইশদের নির্যাতন ও অনিষ্টকারিতা যদিও সকল সীমা-পরিসীমা অতিক্রম করেছিল, কিন্তু আবু সুফিয়ানের কথা শুনে তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) দুআর হাত উত্তোলন করলেন। দুআর ফলে আল্লাহ তায়ালা এত বৃষ্টি বষর্ণ করলেন যে, চার দিকে কেবল পানি আর পানি দেখা যেতে লাগল এবং দুর্ভিক্ষ দূর হয়ে গেল। (বুখারী : তাফসীর, সূরা দুখান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন