সমাজে ‘বেদ্বীন’ শব্দটি বহুল প্রচলিত। যার কোনো ধর্ম নেই তার সম্পর্কেই এরূপ বলা হয়। তবে হাদীসে এর অর্থ ভিন্ন। যেমন বলা হয়েছে, ‘লা দ্বীনা লাহু লিমান লা মোহাব্বাতা লাহু।’ অর্থাৎ যে ব্যক্তির মধ্যে মোহব্বতের অংশ অবর্তমান সে ‘বেদ্বীন’।
আল্লাহতাআলা মানব স্বভাব-চরিত্রকে যে সব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত করেছেন, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে মোহাব্বাত (ভালোবাসা)। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে লক্ষ্য করা যায়, প্রত্যেক ব্যক্তি কোনো না কোনো বস্তুকে অবশ্যই ভালোবাসে, নতুবা কোনো কাজই সে সম্পন্ন করতে পারে না।
ইসলাম ‘দ্বীনে ফিতরত’ বা প্রকৃতির অথবা স্বভাবধর্ম, যা মানুষের স্বভাব, যোগ্যতা, গুণাবলিকে সঠিক ও সুদৃঢ়ভাবে উজ্জীবিত করে থাকে। তাই ইসলাম মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য মোহাব্বাত সম্বন্ধে উপরোক্ত ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। ইসলা মমানুষের অন্তরে মোহাব্বতের বীজ বপণ করে, তার উভয় জাহানের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ কামনা করে এবং যা তার মোহাব্বতের পরিপূর্ণতার পূর্ণাঙ্গ, সঠিক রূপ।
ইশকে মোস্তফা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কোফরকে ভালোবাসে। আর তোমাদের যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা সীমালঙ্ঘনকারী (অত্যাচারী)। বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্মী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় করো এবং তোমাদের বাসস্থানকে তোমরা পছন্দ করো, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এবং তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা করো আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।’ (সূরা তওবা: ২৪)।
সূরা তওবার আয়াতটি আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নাজেল হয় মূলত তাদের ব্যাপারে, যারা হিজরত করেনি। মাতা-পিতা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী-পরিবার ও অর্থ-সম্পদের মায়া হিজরতের ফরজ আদায়ে এদের বিরত রাখে। এদের সম্পর্কে আল্লাহতাআলা রাসূলে করিম (সা.)-কে নির্দেশ দেন যে, ‘আপনি তাদেরকে বলে দিন’ (যা আয়াতে বর্ণিত)।
বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসের বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসাকে অপরাপরের ভালোবাসার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া, শত্রুতা ও মিত্রতায় আল্লাহ এবং রাসূলের হুকুমের অনুগত থাকা, পূর্ণতর ঈমান লাভের পূর্বশর্ত। খাঁটি আশেকানে রাসূলুল্লাহ (সা.) যুগে যুগে রাসূল প্রেমের অজানা অসাধারণ নিদর্শন রেখে গেছেন, তাতে প্রসিদ্ধ, অপ্রসিদ্ধ এবং ক্ষুদ্র-নগণ্য বহুবিধ ঘটনা রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ্য। এক রাসূল প্রেমিক সাধারণ লোক মনে মনে ধারণা পোষণ করত, তার পেশার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি তার ভালোবাসাটি কীভাবে প্রকাশ করা যায়। আল্লাহতাআলা তার অজান্তে তার সেই আশা পূরণ করে দেন। অর্থাৎ- লোকটি অবচেতনভাবে তার ভালোবাসার কাজটি করে ফেলে, যা একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। আল্লাহতাআলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে কীভাবে ভালোবাসেন, তার অপূর্ব দৃষ্টান্ত উম্মুল মোমেনীন হজরত আয়েশা (রা.)-এর জবানীতে লক্ষযোগ্য:
হুজুর (সা.) হজরত আলী (রা.)-কে ডেকে বললেন, ‘আমার এ আংটিতে ‘মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ’ খোদাই করিয়ে দাও।’ খাঁটি রূপার এ আংটি তিনি নকশাকারীর নিকট নিয়ে যান এবং বলে দেন, বাক্যটি এতে খোদাই করে দিতে। যে পারিশ্রমিক ধার্য করা হয়, তা গ্রহণে সে সম্মতি জ্ঞাপন করে। আল্লাহতাআলা ‘নাক্কাশ’ (নকশাকারীর) তা এমনভাবে বদলে দেন যে, সে ‘মোহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’ খোদাই করে ফেলে। এতে হজরত আলী (রা.) বললেন, ‘কী ব্যাপার! আমি তোমাকে বলেছিলাম ‘মোহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ’ খোদাই করতে।’ নাক্কাশ বলল, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতাআলা আমার হাত ফিরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আমি সেটাই খোদাই করতে চেয়েছিলাম, অজ্ঞাতসারে এটা খোদাই হয়ে গেছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন