মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রাসূলে আরাবী (সা.) যেদিন বিদায় নিলেন

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

রাসূলে আকরাম (সা.) যখন এই নশ্বর দুনিয়া থেকে বিদায় নেন তখন সমগ্র আরব ভূমি তার অধীনে ছিল। তখনকার সময়ের সকল শাসক, সম্রাট, রাজা, উজীর, আমীর সবাই তার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত থাকত। সবার অন্তরে ছিল তারই প্রভাব প্রতিপত্তি। সাহাবায়ে আজমাইন (রা.) তার জন্য নিজেদের জীবন, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ সবকিছু কোরবান করতে ছিল সদা প্রস্তুত।

এত সব সত্তে¡ও তিনি যখন ইহজগত থেকে বিদায় নেন তখন তার কাছে এক দীনার বা এক দিরহাম, দাস-দাসী কিছুই রেখে যাননি। শুধুমাত্র একটি খচ্চর ছিল সাদা রংয়ের। আর ছিল কিছু অস্ত্র শস্ত্র, যা তিনি জিহাদের ময়দানে আত্মরক্ষা করতেন। এক টুকরো জমিন ছিল, যেটি তিনি সদকা করে দিয়েছিলেন। (সহীহ বুখারী)।
হযরতের ইনতিকালের সময় তার লৌহবর্মটি এক ইয়াহুদীর নিকট বন্ধক ছিল ৩০ সা’ যবের বিনিময়ে। (সহীহ বুখারী)। কিন্তু তার কাছে এমন কিছুই ছিল না যা দিয়ে তিনি লৌবর্মটি ছাড়িয়ে আনতে পারেন। আর এভাবেই তিনি এই পৃথিবী থেকে চলে যান। (বায়হাকী)। অসুস্থ অবস্থায় ৪০ জন ক্রীতদাস মুক্ত করে দেন। ছয় অথবা সাত দীনার তার কাছে ছিল, যা বিলিয়ে দেয়ার জন্য হযরত আয়েশা (রা.)-কে আদেশ করেন। (আস সীরাতুল হলাবিয়্যা-খ. ৩, পৃ. ৩৮১)।

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, যে সময় রাসূলে আকরাম (সা.) ইন্তেকাল করেন, সে সময় আমার ঘরে এমন কিছু ছিল না যা জীবিত কোনো প্রাণী খেতে পারে। তবে সামান্য কিছু যব আমার তাকের ওপর রাখা ছিল। আমি এ থেকে কিছু খেয়েছি। অনেক দিন তা চলেছিল। একদিন তাও শেষ হয়ে যায়। (বুখারী : কিতাবুর রিকাক; মুসলিম : কিতাবু’য যুহদ)।

তিনি যেদিন চলে যান, সে দিনটি ছিল ভয়াবহতম ও অন্ধকার একটি দিন। সহ্য ক্ষমতার অতীত বিষাদময় পরীক্ষার একটি দিন। সমগ্র মানবজাতি ও মানবতার জন্য দিনটি ছিল বিরাট এক দুর্ঘটনা। যেমনিভাবে হযরতের আগমনের দিনটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জল ও বরকতময় একটি দিন।

হযরত আনাস ও হযরত আবূ সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, যেদিন রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় আগমন করেন, সেদিন মদীনার প্রতিটি বালুকণা তার আগমনে ধন্য, পূত-পবিত্র, আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠেছিল। আর যেদিন তিনি ইন্তেকাল করেন সেদিন সবকিছুই যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। উম্মু আয়মন কাঁদছিলেন।

লোকে তার কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে জানান, আমি জানতাম আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেন। আমি কাঁদছি এই জন্য যে, ওহীর ধারাবাহিকতা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে আমাদের থেকে চিরতরে ছিন্ন হয়ে গেল। (আস সীরাতুন নাবাবিয়্যা, ইবনে কাসীর : খ. ৪, পৃ. ৫৪৪-৫৪৬)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
বুলবুল আহমেদ ১৭ নভেম্বর, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
রাসুল (সা.) -এর জীবনে প্রতিটি পর্ব থেকেই আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে
Total Reply(0)
সাদ্দাম ১৭ নভেম্বর, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
লেখাটির জন্য উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
তুষার ১৭ নভেম্বর, ২০২০, ১:৩৩ এএম says : 0
আর আমরা কি করি? মরার আগ পর্যন্ত শুধুমাত্র অর্থের পিছনে ছুটতে থাকি
Total Reply(0)
মাহমুদ ১৭ নভেম্বর, ২০২০, ১:৩৭ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে তার রাসুল (সা.)-এর দেখানো পথে চলার তৌফিক দান করুক।
Total Reply(0)
Md. Younus biswas ১৭ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৫৫ এএম says : 0
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) উম্মতের মায়ায় সর্বাবস্থায় নাজাত কিভাবে পাবে কিভাবে মুক্তি মিলবে কেদেছেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন