শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সত্য অনুসন্ধানে মগ্ন থাকাতেই মুক্তি নিহিত : খুৎবা-পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

সত্য অনুসন্ধানে মগ্ন থাকাতেই মুক্তি নিহিত রয়েছে। মিথ্যা পরিহারে সচেষ্ট থাকতে হবে। সত্যবাদিরা আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হন। কোরআন, হাদিস, দ্বীন ইসলাম মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত, এ নেয়ামতের শুকর আদায় করতে হবে। শিরক, কুফর ও বিদাআত থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আজ রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন মসজিদে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। নগরীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচুর মুসল্লি জুমার নামাজে অংশ নেন। জুমার নামাজের আগে বিভিন্ন মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণায় বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষিত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে মসজিদে আসবেন। বাসা থেকে জায়নামাজ নিয়ে ওজু করে মসজিদে আসবেন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার খুৎবার বয়ানে বলেন, কোরআন, হাদিস, দ্বীন ইসলাম মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এই নেয়ামতের শুকর আদায় করতে হবে। শিরক, কুফর ও বিদাআত থেকে মুক্ত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আপনি বলুন আল্লাহর ফযল ও তাঁর মেহেরবাণীতে (এসেছে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন)। অতএব, এতেই তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত তা সে সব বস্তু থেকে উত্তম যা তারা সঞ্চয় করছে। (সূরা ইউনূস : ৫৮) পেশ ইমাম বলেন, করোনাকালের এ সময়ে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ করতে হবে। গরিব-মিসকিনদের দান করতে হবে এবং অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার করতে হবে। স্বাস্থ্যসুরক্ষায় ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। মাস্ক ব্যবহারসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে আরো আন্তরিক হতে হবে।

ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদে খতিব মাওলানা মো. মনিরুল ইসলাম খুৎবার বয়ানে বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইত্তেবা করতে হলে তার জীবনী জানতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসুলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। বিধায় একজন রাসুল প্রেমিক সর্বদা খোঁজে যে, নবীজী কীভাবে চলতেন, কীভাবে তাঁর দিনগুলো অতিবাহিত হতো। তাই আমি আপনাদের সামনে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রোজনামচা উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ।

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের সাথে জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করতেন। অতপর, সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাজের স্থানে বসেই জিকির-আসকার করতেন। কখনো কখনো সাহাবাগন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহিয়ের সাথে বসে থাকতেন, তাঁর সাথে কথা বলতেন, জাহেলি যুগের স্মৃতি উল্লেখ করতেন।

হজরত আয়শা (রাদি) বলছেন, নবীজি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার রাকাত চাশতের নামাজ আদায় করতেন। কখনো কখনো চার রাকাতের অধিকও আদায় করতেন।
নবীজি (সা.) সামনে যে খাবারই দেয় হোক না কেন তিনি তার দোষ ধরতেন না। নবী (সা.) আউয়াল ওয়াক্তে আসরের নামাজ আদায় করতেন। অতপর নিজের স্ত্রীদের সাথে দেখা করতেন, তাদের সাথে বসতেন, কথা বলতেন। এভাবে তিনি এ সময়টু নিজ পরিবারে কাটাতেন।

মুলমানদের মাঝে ঘুরে ঘুরে তাঁদের খোঁজ-খবর নিতেন; তাদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হতেন। দুঃখী মানুষকে সাহায্য করতেন, তাদেরকে উপদেশ ও দিকনির্দেশনা দিতেন, তাদের সালামের উত্তর দিতেন, তাদের প্রয়োজন মেটাতেন, তদেরকে সদকা জের আদেশ দিতেন, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) এক খাদ্য স্ত‚পের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তিনি তাতে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। তাঁর হাতের আঙুল ভিজে গেল। তখন তিনি খাদ্যের মালিককে বললেন: একি? হে খাদ্যের মালিক! মালিক উত্তর দিল: বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। নবীজি (সা.) বললেন: তাহলে তুমি এই ভেজা খাবার উপরে রাখবে না? যাতে করে মানুষ তা দেখতে পায়। যে ধোকা দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়।

ঢাকার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদিস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি জুমার খুৎবাপূর্ব বক্তব্যে বলেছেন, সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার মমত্ববোধ যে পরিমাণ থাকে, উম্মতের প্রতি হজরত রাসূলে আকরাম (সা.) এর মমত্ববোধ তার চেয়েও বেশি ছিল। যারা তাঁর চলাচলের পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত তাঁকে কষ্ট দেয়ার জন্য, যারা তাঁকে গালি দিত এবং পাথর মেরে আহত করত তিনি তাদের প্রতি পরম মমতা ও মহানুভবতা প্রদর্শন করতেন। কখনো বা তাদের রোগাক্রান্ত হওয়ার সংবাদ শুনে খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য ছুটে যেতেন তাদের বাড়িতে। আবার কখনো বদ দোয়ার পরিবর্তে হেদায়েতের দোয়া করতেন তাদের জন্য। মহান আল্লাহর কতনা বড় অনুগ্রহ আমাদের উপর যে যিনি আমাদের এমন এক মহামানবের উম্মত বানিয়েছেন যিনি উম্মতের সদা কল্যাণকামী ছিলেন। শুধু তায়েফের ঘটনাই যথেষ্ট নবীয়ে রহমত (সা.) কে চেনার জন্য। নিষ্ঠুর তায়েফবাসী বখাটে ছেলেদের লেলিয়ে দিয়েছিল তাঁর পেছনে। তাদের প্রস্তরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় বেহুশ হয়ে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন মাটিতে। শরীর মোবারক থেকে নির্গত রক্ত পাদুকাদ্বয়ে গিয়ে জমাট বেঁধেছিল। চেতনা ফিরে পাওয়ার পর ফেরেশতা এসে আরজ করলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! দ্বীনের দাওয়াত দিতে এসে এমন নিষ্ঠুর আচরণ আপনার সাথে! হুকুম দিন পাহাড় উপরে তুলে তাদের মাথার উপর ফেলে দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেই। নবীয়ে রহমত (সা.) এর মমত্ববোধ ও মহানুভবতা যেন তখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আজাবের হুকুম না দিয়ে উল্টো তিনি হেদায়েতের দোয়া করলেন তাদের জন্য। বললেন ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করো। তারা আমাকে না বুঝার কারণে কষ্ট দিচ্ছে’।

রাজধানীর গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুতবা পূর্ব বয়ানে বলেন, হজরত মানসুর বিন মুতামির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সর্বদা সত্য অনুসন্ধানে মগ্ন থাকবে, যদিও তোমরা এতে বাহ্যত ক্ষতি দেখতে পাও। বস্তুত এতে মুক্তি নিহিত। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব)।

তিনি আরো বলেন, ইসলামের ইতিহাসে তিনজন মুসলিম সাহাবির নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে, যারা কোনো কারণ ছাড়াই তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। তারা হলেনÑ হজরত কাব ইবনে মালেক (রা.), দ্বিতীয় হজরত মুরারা ইবনে রাবী (রা.) এবং হেলাল ইবনে উমাইর (রা.)। যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার কারণ বর্ণনা করেছিলেন। যদিও এ কারণে তারা পঞ্চাশ দিন বয়কটের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ অবধি তাদের তওবা কবুল হওয়ার সুসংবাদ স্বরূপ কোরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাদের শাস্তির কারণে মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে তাদেরকে রহমত ও মাগফিরাতের সুসংবাদ দেয়া হয়। পক্ষান্তরে যেসব মুনাফেক মিথ্যা অজুহাত পেশ করে বাহ্যত শাস্তি থেকে নিজেদের সাময়িক রক্ষা করেছিল বটে; আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারিমে তাদের জাহান্নামি বলে ঘোষণা দেন। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে মিথ্যা পরিহার করার এবং সত্য কথা বলার তৌফিক দান করেনÑ আমিন।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন