বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সড়কে চাঁদার জাল!

শুধু স্ট্যান্ডেই নয় টাকা দিতে হয় পথে পথে

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশের সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি চলছেই। জিম্মি হয়ে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। চাঁদা না দিলে গাড়ি থামিয়ে রাখা হয়। মাঝ রাস্তায় যাত্রীদের নিয়ে বিড়ম্বনা এড়াতে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা লাইনম্যানদের হাতে নির্ধারিত চাঁদার টাকা তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রমিকরা। শুধু বাসষ্ট্যান্ডেই নয় টাকা দিতে হয় পথে পথে। চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের কাছে পরিবহন শ্রমিকরা অসহায় হয়ে পড়েছে।
ঢাকাসহ বড় জেলাগুলোর বাস টার্মিনাল ও স্ট্যান্ডগুলোতে এই অনাচার অনেকটাই প্রকাশ্য। কিন্তু জেলা উপজেলা এবং পৌর এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে অটোরিকশা ও ইজিবাইক কেন্দ্রীক চাঁদাবাজি। এরসঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলীয় কিছু নেতার নাম আসছে। বিভিন্ন সংগঠনের নামে-বেনামে চাঁদা তোলা হচ্ছে। তবে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদা তোলার পয়েন্টগুলো বদল হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী ব্রিজ পার হওয়ার পর পূর্বাঞ্চলীয় সড়কের বিভিন্ন নতুন পয়েন্টে এখনো চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি চাঁদাবাজির সময় র‌্যাব-১১ কয়েক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তবে সড়ক পরিবহন সংগঠনের নেতারা দাবি করছেন, পরিবহন সেক্টরের সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সব সংগঠন একমত হয়ে চাঁদা না তুলতে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছে। জানা যায়, দেশের পূর্বাঞ্চলীয় সড়কের প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদার ভাগ পান স্থানীয় পুলিশ, ক্ষমতাসীন দলের নেতাসহ অনেকেই। শ্রমিকদের অভিযোগ, একজন শ্রমিক সারা দিন গাড়ি চালিয়ে যা উপার্জন করে তা থেকে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা আর মালিকের পাওনা শোধ করে আর তেমন কিছু টিকে না। এ অবস্থায় সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাঁদা দিতে না চাইলে তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন।
ভুক্তভোগী শ্রমিক কামরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, করোনার জন্য প্রায় দুই মাস রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারেন নি তারা। লকডাউন শিথিল হলে রাস্তায় অটো চালাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও চাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই নেই তাদের। প্রতিদিন মালিকের জমা খরচ ও নিজের সংসারের খরচ ওঠানোই কষ্টের বিষয়। সেখানে সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে লাঠি হাতে জোর করে চাদা আদায় চলছে। সব দেখেও চুপচাপ থাকছে পুলিশ প্রশাসন।
স¤প্রতি দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে পলাশ নামে এক অটো চালককে মারধর করে পা ভেঙে দেয় পুলিশ। প্রতিবাদে কুমিল্লা-লক্ষীপুর সড়কে বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন চালকরা। পরে এসপি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে লক্ষীপুর থেকে বদলি করেন। ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই কিছুদিন পর ট্রাফিক পুলিশ ১০টি অটোরিকশা আটক করে। প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩-১০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। পর দিন এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলসহ সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধরা। শুধু এ দুটি ঘটনাই নয়, প্রতিদিন দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশির নামে পুলিশসহ বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদার টাকা আদায় করে বলে অভিযোগ চালকদের।
এছাড়া সড়কে গাড়ি চললে ওইসব সংগঠনকে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এইসব চাঁদা অনেকটাই প্রশাসনের সামনে এবং এসব বিষয় তাদের নাজরে থাকলেও যেন কোরো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এসব টাকা সরকার দলের নাম ভাঙিয়ে প্রভাবশালী কিছু কয়েক লোক ভাগবাটোয়ারা করে নেন বলে অভিযোগ আছে। মহাসড়কের কুমিল্লায় চাঁদা আদায়কারী সাইফুল বলেন, আমি শুধু টোল আদায়কারী হিসেবে কাজ করি। স্থানীয় নেতা বাছির খানের নির্দেশে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। প্রতিদিনের চাঁদার টাকা বাছির ভাইকে দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে বাছির খানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমি শ্রমিক ইউনিয়নকে সহযোগিতা করছি মাত্র। তবে এসব টাকা কোথায় যায় তা তিনি কিছুই জানেন না বলে জানায়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা জানান, আদায় করা জিপির টাকা আমাদের কোনও উপকারে আসে না। এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফকির আলমগীর জানান, সরকারি কোনো বিধান নেই। কারা কোনো আইনে টাকা তোলেন এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না বলে জানান।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এবং ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানান, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি আমাদের কাম্য না। কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবেও না। চাঁদাবাজি বন্ধে আমাদের টিম কাজ করছে। তবে পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়, এমন কিছু লোক চাঁদাবাজির চেষ্টা করছে। তারা কেউ আমাদের সংগঠনের লোক না। যদি আমাদের কারো বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী প্রায় সব সিএনজি ও মেসি-মারতি বিভিন্ন সমিতির অধীনে চলে। এসব সমিতির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। এদিকে জিপির নামে চাঁদাবজির কারণে কুমিল্লার শাসনগাছা-ব্রাহ্মণপাড়া সড়কে বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে অভিযোগ সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীদের। চালকদের অভিযোগ, শাসনগাছা-ব্রাহ্মণপাড়ার ২৩ কিলোমিটার সড়কে জিপির নামে প্রতিদিন সিএনজি প্রতি ৩৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।
তবে এ ব্যাপারে আমজাদ ও সাইফুল নামের দুই সিএনজিচালক জানান, হঠাৎ করেই কোন কারণ ছাড়াই আমাদের জিপি ৬০ টাকা থেকে করা হয় ১৩০ টাকা। অতিরিক্ত জিপি কমানোর জন্য আন্দোলন করেন চালকরা। কিন্তু তা না কমিয়ে উল্টো কয়েকজন চালককে জেলে নেয়া হয় এবং জিপি নির্ধারণ করা হয় ২৫০ টাকা। আর এক্ষেত্রেও যাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় ৪০ টাকার স্থলে অতিরিক্তি ১০ টাকা। অন্যদিকে জিপি আদায়কারীদেরও গাড়িপ্রতি দিতে হয় ৫০ টাকা। এ নিয়ে প্রায় সময় যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের মারামারির ঘটনাও ঘটে। অনেকটা বাধ্য হয়েই বর্তমানে এই রাস্তা দিয়ে চলতে হয় যাত্রীদের।
এ প্রসঙ্গে পূবাঞ্চলীয় হাইওয়ে পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন,‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো। যাত্রী ও চালক হয়রানির প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি বন্ধ হলে কোনো কোম্পানিকেই অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাতায়াতের করলেরও লোকসান গুনতে হবে না মন্তব্য করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Nannu chowhan ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৩৭ এএম says : 0
Pulish oporadh korle tader bodli kora othoba pulish shodor doftore close eai dhoroner shaja ki kono shaja holo ? Tahole eai pulish notun jaigai bodli hoyeo abar oporadhei lipto hobe ete onno pulishrao tader oshot kormo kando chalaite otshahito hobe,eaita kono bichar holo ,kenoi eai pulisher proti proshashoner eto durbolota ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন