সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মোটরসাইকেলেই নিহত ৯৭

১০ দিনে সড়কে প্রাণ গেল ২৪৯ জনের অর্ধেকেরও বেশি অপ্রাপ্তবয়স্ক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকাসহ দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ঈদযাত্রা ও ঈদ উদযাপনের গত ১০ দিনে সারাদেশে ৯৭ জন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫১ জনই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। অর্থাৎ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৫৭ শতাংশের বয়স ছিল ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। গতকাল রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানিয়েছে। মোটরসাইকেল আরোহীর ঘন ঘন লেন পরিবর্তন, নিয়ম না জানা বা জানলে না মানা, যানজট এড়িয়ে তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত সারাদেশে ১৭৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন মোট ২৪৯ জন। নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন ৯৭ জন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। নিহত ৫১ জনের বয়স ছিল ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৫৭ শতাংশ ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এতো বেশি নিহতের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ঈদযাত্রায় গণপরিবহনের বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়েছে। তাই দুর্ঘটনাও বেশি হয়েছে।
সংস্থাটির অপর একটি পরিসংখ্যান বলছে, গত ১ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত ১১২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন। একই সময় ৫৬ জন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। যা মোট মৃত্যুর ৪০ দশমিক ২৮ শতাংশ।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার নরসিংদীর দুই তরুণ মোটরসাইকেলে চেপে ঈদের আনন্দ করতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে তারা ছিটকে পড়েন। এতে ওই দুই তরুণের মৃত্যু হয়।
আড়াইহাজার থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা জানান, নিহত দুই তরুণ হলেন নরসিংদী সদরের সাহেপ্রতাব-সংলগ্ন পুলিশ লাইনস এলাকার খোকন মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া ও শীলমান্দী এলাকার লিটন মিয়ার ছেলে লাদেন মিয়া। নিহত দুজনই শহরের একটি বেসরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হৃদয় ও লাদেন সহপাঠী ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ঈদের আনন্দ উদ্যাপন করতে মোটরসাইকেল নিয়ে তারা দুজন বাড়ি থেকে বের হন। ঘোরাঘুরি শেষে বিকেলে নরসিংদী-মদনগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক ধরে নরসিংদীতে ফিরছিলেন তারা। বিকেল পাঁচটার দিকে আড়াইহাজারের ব্রাহ্মন্দী বাজারসংলগ্ন সড়কে তাদের চলন্ত মোটরসাইকেলটিকে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ধাক্কা দেয়। এতে ওই দুই তরুণ সড়কে ছিটকে পড়েন এবং মোটরসাইকেলটি পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন হৃদয়। অন্যদিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান লাদেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ নিহত তরুণদের লাশ উদ্ধার করে আড়াইহাজার থানায় নিয়ে যায়। পরে তাদের পরিবারের সদস্যরা ওই থানায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।
গতকাল আমাদের তিতাস (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, হোমনা-বাঞ্ছারামপুর-মুরাদনগর সংযোগ সেতু তথা শেখ হাসিনা ওয়াই ব্রীজে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় হাজী মো. কালু মিয়া নামে এক বৃদ্ধ পথচারী নিহত হয়েছে। তিনি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ভুরভুরিয়া গ্রামের মধ্যপাড়ার মৃত চান মিয়ার ছেলে। গত বুহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে হোমনা উপজেলা অংশে ওয়াই ব্রীজের ঢালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতের ভাতিজা দেলোয়ার হোসেন জানান, আমার খালু নিহত কালু মিয়া মাগরিব নামাজের পর সেতুর পাশ দিয়ে হেটে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একটি মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দিলে তিনি মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে হোমনা থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপরই ইয়াসিন ও ওমর ফারুকসহ মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে। যাহার রেজিষ্ট্রেশন নং-৪৬-৬২৪৮। তারা উভয়ই উপজেলার কাঞ্চন গ্রামের বাসিন্দা। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাদারীপুর থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, মাদারীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর সদর উপজেলার তাঁতিবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আশিক মিয়া মেহেরপুর জেলার নীরব উদ্দিনের ছেলে এবং শাহাদাৎ হোসেন একই এলাকার আরিফ হোসেনের ছেলে।
জানা গেছে, বন্ধু শাহাদাৎ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ভ্রমণ শেষে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজ বাড়ি মেহেরপুরে ফিরছিলেন আশিক। শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার তাঁতিবাড়ি এলাকায় এলে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে মোটরসাইকেলটি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আশিক।
এদিকে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শহর থেকে মানুষ গেছেন। এই যাত্রায় বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনের পাশাপাশি এবার ব্যাপকহারে যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। যেসব মোটরসাইকেল রাজধানীতে রাইড শেয়ার করতো, তারাই বাড়ি যাওয়ার সময় নিজ নিজ এলাকার যাত্রীদের নিয়ে চলে গেছেন। মোটরসাইকেলের চাপে এবার ফেরিঘাটগুলোতে আলাদা ফেরি দিতে হয়েছিল। আর এ কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও বেশি ছিল।
মোটরসাইকেল গণপরিবহন না, তবে গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সড়কের ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এখন অনেকেই কোনোরকম মোটরসাইকেল চালানো শিখেই রাস্তায় যাত্রীবহন করতে নেমে পড়ছে। এতে যাত্রী ও চালকের দুজনের ঝুঁকি বাড়ছে।
‘মানুষ বাধ্য হয়ে গণপরিবহন হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে’ বলে মনে করেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের গণপরিবহন ব্যবস্থা নাজুক। তাই মানুষ মোটরসাইকেলকে বিকল্প হিসেবে দেখছে। এতে অনেকে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারলেও তাদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, গণপরিবহন ব্যবস্থা জনবান্ধব করলে এসব মৃত্যু থেকে মানুষকে রক্ষা করা যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন