ঈদে ঘরমুখো মানুষকে বহন করা যানবাহনের চাপ সামলাতে দেশের মহাসড়কগুলো প্রস্তুত। কিন্তু তবুও ভোগান্তির শঙ্কা রাজধানী ঢাকা থেকে ৮০ লাখ থেকে এক কোটি মানুষ ঈদ করতে গ্রামে নির্বিঘ্নে যেতে পারবেন তো? করোনার ভয়াবহতায় গত দুই বছর ঈদে ঘরমুখি মানুষের চাপ ছিল কম। এবার করোনা পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। তাই ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে বাড়ি যাবেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু ঘরমুখি মানুষের জন্য নেই সুখবর। সড়ক পথ, আকাশ পথ, রেল কিংবা নৌ পথে সব জায়গায় চরম ভোগান্তির আশঙ্কা।
ঢাকা থেকে বেরোনোর পথগুলোয় এখনই শুরু হয়েছে যানজট। সামনের দিনে এটা আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এবার ট্রেনে ৫ গুণের বেশি যাত্রী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলানোই এবার ট্রেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নৌ পথে যেন গ্যাঞ্জাম লেগে গেছে। যারা আকাশ পথে বাড়ি ফিরতে চান তাদের সেই ইচ্ছাও পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ ইতোমধ্যে দেশের সব রুটের এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট হাওয়া।
ঢাকা থেকে বের হওয়ার সড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা করছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি নিয়েই রওয়ানা হতে হবে। রাজধানীর গাবতলী-নবীনগর-ধামরাই, এয়ারপোর্ট-আশুলিয়া-বাইপাইল, এয়ারপোর্ট-গাজীপুর মহাসড়কের কোথাও ভাঙাচোরা, আবদুল্লাপুর-কামার পাড়া, গুলিস্তান-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ি, বংশাল-বাবু বাজার ব্রিজ, দোলাইপাড় মো-জুরাইন রেলক্রাসিং, গাবতলী-আমিনবাজার, সাইনবোর্ড-কাঁচপুর ব্রীজ, যাত্রাবাড়ি-ডেমরা স্টাফ কোয়াটার মোড় এখনই ভয়াবহ যানজট শুরু হয়েছে। ঈদের ছুটিতে শত শত যানবাহন যখন রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করবে তখন ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হবে।
পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা থেকে ভায়া টাঙ্গাইল হয়ে রংপুর সড়কে কিছুটা ঝামেলা হলেও ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আপাতত তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে ঈদে গাড়ির চাপ বাড়ার সঙ্গে এসব মহাসড়কেও যানজট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। লঞ্চে এখনোই অব্যবস্থাপনা শুরু হয়ে গেছে। টেনের টিকেট নিয়ে তেলেসমাতি কারবার হয়েছে। কমলাপুর স্টেশনে হাজার হাজার মানুষ ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকেট পাননি।
ইনকিলাবের জেলা, উপজেলা পর্যায়ের প্রতিনিধিরা জানান, ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলামুখি সড়ক ও মহাসড়কের অনেকগুলোই প্রস্তুত। তারপরও ভোগান্তির আশঙ্ক রয়ে গেছে। নৌ পথে দৌলদিয়া-পাটুরিয়া, আরিচা-কাজির হাট, মাওয়া-বাংলাবাজার, শিমুলিয়া-বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন রুটের চিত্রই বলে দেয় সব প্রস্তুতির কথা বলা হলেও ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে ঘরে ফেরা মানুষকে।
ঈদে ভোগান্তির অপর নাম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ ২৬টি জেলার মানুষ চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। ফলে ঈদে বাড়তি পরিবহনের চাপে পড়ে মহাসড়কটি।
মহাসড়কটির এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক এখনো দুই লেনে রয়েছে। এছাড়া সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ ও উঁচু নিচু থাকায় স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এতে যানজটের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সেতু কর্তৃপক্ষ খানাখন্দে কুচি পাথর ছিটিয়ে দায় সারছে। যা ভালোর চেয়ে খারাপই হচ্ছে। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা হতে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত দুই লেনের সড়কে তিনটি লিঙ্করোড রয়েছে। একটি এলেঙ্গা থেকে ময়মনসিংহ-জামালপুরগামী, এলেঙ্গা থেকে ভূঞাপুর-তারাকান্দিগামী রোড এবং বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব গোলচত্ত্বর থেকে ভূঞাপুর-তারাকান্দি রোড সড়ক। এই লিঙ্করোডের পরিবহন মহাসড়কে প্রবেশের সময় একপাশের পরিবহন আটকে রাখা হয়। এতে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও সিরাজগঞ্জের অংশের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে সড়ক প্রশস্তের কাজ। ইতোমধ্যেই এই রোডের একটি ফ্লাইওভার ও দুটি সেতু খুলে দেয়া হলেও ঝিনাইগাতি লিংকরোড, সায়েদাবাদ, মুলিবাড়ী, কড্ডা, ভূইয়াগাতি ও চান্দাইকোনা লিংকরোডসহ কয়েকটি এলাকার লিংক রোডের কারণেও ঈদযাত্রায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল এবং সিরাজগঞ্জের কাড্ডা থেকে রংপুর ও অন্যান্য জেলা রোড ফোর লেনের হলেও বঙ্গবন্ধুর সেতু থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত সরু সড়ক। এই ১৩ কিলোমিটার যানজটের কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে এবার উন্নয়ন কাজ না থাকলেও এ সড়কে ছোট বড় মিলিয়ে ১১টি সিগন্যাল রয়েছে। এর মধ্যে মদনপুর চৌরাস্তা, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ও মেঘনা টোল প্লাজায় বড় ৩টি সিগন্যাল রয়েছে। এসব সিগন্যালে পড়ে দীর্ঘক্ষণ এখনই মানুষকে গাড়িতে বসে থাকতে হয়। এছাড়াও মেঘনা ও গোমতী সেতুতে টোল আদায়ে বিলম্ব যানজটের বড় কারণ হতে পারে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পেলে সঙ্কট আরো বাড়তে পারে। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি, মদনপুর চৌরাস্তা ও মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় লোকাল বাসের স্ট্যান্ড রয়েছে। এখানে যাত্রী ওঠা-নামা করার করাণে যানজট লেগে থাকে। এ দুটি স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যানজটে পড়তে হবে না।
ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক
টঙ্গী থেকে মো. হেদায়েত উল্লাহ জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের টঙ্গী ও গাজীপুর সড়কের কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ঢাকা বিমানবন্দর পর্যন্ত তীব্র যানজট ছিল বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন। এছাড়া টঙ্গী আব্দুল্লাহপুর, স্টেশন রোড, বোর্ড বাজার ও চান্দনা চৌরাস্তায় এসময়ে কিছুটা যানজট ছিল। বাকি সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজের দরুন গাড়ি চলাচলে ধীরগতি পরিলক্ষিত হলেও যানজটের তীব্রতা আগের তুলনায় কম ছিল। বিকাল ৩টার পর থেকে বিমানবন্দর, উত্তরা আজমপুর ও আব্দুল্লাহপুর এলাকায় যানজট কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
সাভার আশুলিয়া মহাসড়কে ভোগান্তির শঙ্কা
এখনই যানজট সাভারের মহাসড়কে
সাভার থেকে সেলিম আহমেদ জানান, ঈদযাত্রার প্রস্তুতি চলছে অথচ এখনো সড়ক-মহাসড়কে চলছে মেরামত ও উন্নয়নের কাজ। ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ সাভারের প্রতিটি শাখা সড়কে যানবাহনের চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ফলে শাখা সড়কগুলোতেও ঘরমুখো মানুষকে তীব্র যানজটে পড়ে চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাভারে সড়কের কয়েকটি স্থানে খোঁড়াখুঁড়ি, ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ ও সড়ক বিভাজন স্থাপনের কার্যক্রম চলমান। ফলে চলাচলের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে যানজট ও ভোগান্তি। এ ছাড়া যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ে তৈরি হচ্ছে জনদুর্ভোগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ড, সিঅ্যান্ডবিতে সড়ক বিভাজন স্থাপন, ধামরাইয়ের কালামপুর ও শ্রীরামপুরে কার্পেটিংয়ের কাজ চলমান থাকায় এসব এলাকায় দেখা দিচ্ছে যানজট।
এ ছাড়া নবীনগর থেকে চন্দ্রা সড়কের বাইপাইল, ডিইপিজেড বাসস্ট্যান্ড, বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া, জিরাবো বাসস্ট্যান্ডে পরিবহন বাসের এলোমেলো পার্কিংয়ে তৈরি হচ্ছে যানজট।
খানাখন্দে ভরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতে জমে থাকে পানি। সড়ক সংস্কারের নামে বিভিন্ন স্থানে পাথর ও পিচ এর পরিবর্তে এ সড়কে নিম্নমানের ইট দিয়ে জোড়াতালির সংস্কার করা হচ্ছে। গাড়ির চাকায় চাপা পড়ে মিশে যাচ্ছে সেই ইট। রাজধানীর উত্তরা থেকে আশুলিয়া হয়ে বাইপাইল পর্যন্ত যানজট প্রতিদিনের চেনা চিত্র এ সড়কে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আশুলিয়ার জিরাবো, নরসিংহপুর, বেরণ, জামগড়া ফ্যান্টাসী কিংডম, ইউনিক, বাইপাইল, পল্লীবিদ্যুৎ, ডিইপিজেড, বলিভদ্র, জিরানী ও কবিরপুর এলাকায় সড়কের দু’পাশে ফুটপাতে কাঁচাবাজার ও বিভিন্ন হকাররা সড়ক দখল করে বিভিন্ন ধরনের পোশাকসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রির কারণে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। এছাড়া জামগড়া এলাকার সড়ক সামান্য বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
আবার ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন বাসস্টপেজে চলছে নীরব চাঁদাবাজি। বাইপাইল, নরসিংহপুর, জিরানী, জিরাবো, নবীনগর ও ডেন্ডাবর পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় স্থানীয় চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় এ চাঁদাবাজি হয়। ঢাকা-আরিচা ও আব্দুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি ফলে যানজটের কবলে পরে পরিবহণ যাত্রীরা।
ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, ঈদকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সড়কে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম সমাপ্ত করার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি। যে সকল স্থানে যানজট দেখা দিচ্ছে সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত কাজ চলছে। এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পের কাছে হস্তান্তর করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)। সড়কটির সম্পূর্ণ দেখভাল করছেন তারাই।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. শাহবুদ্দিন খান বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাছ থেকে আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর যেখানেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে গুরুত্ব বিবেচনা করে সেগুলোর সমাধান করা হচ্ছে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার থেকে নবীনগর পর্যন্ত চার লেনের রাস্তাকে আট লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। পাশাপাশি ফুটপাত প্রশস্ত করা হচ্ছে। কাজ চলছে ক্রস ড্রেনেরও। সব মিলিয়ে এ মহাসড়কে প্রতিদিনের যানজটে অতিষ্ঠ যাত্রীরা।
সাভার ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানাযায়, ঈদে সড়কে ঘরমুখো মানুষের গাড়ির বাড়তি চাপ থাকবেই। সেইসাথে সড়ক সংস্কার ও যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামানোর কারনে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সার্বক্ষণিক যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন।
আবার নিত্যদিনের এই যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়েছে গাড়ি চালক ও বাস যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। সকাল থেকে শুরু হওয়া এই যানজট থাকে বিকেল পর্যন্ত কখনো এর তীব্রতা থাকে মধ্যরাত অবধি। তীব্র গরম প্রচণ্ড রোদ সেই সাথে রাস্তায় যানজট সবমিলিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এরমধ্যে পোশাক কারখানা ছুটি হলে যানজটের মাত্রা বেড়ে যায় আরো কয়েকগুন।
বাস চালক মো. জসিম বলেন, সড়ক বড় করা হলেও যানজট কমছে না। যত্রতত্র সড়কে গাড়ি পার্কিং, সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট বন্ধ করে সংস্কার কাজের কারণেই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের কারণে অনেক সময় সড়কে গাড়ি দীর্ঘসময় বসে থাকতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে একাধীক ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ কাজ করলেও যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না কোনোভাবেই। যার ফলে তীব্র যানজটে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়ছে মহাসড়ক ব্যবহারকারী মানুষজন।
ঢাকা জেলা (উত্তর) ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আব্দুস সালাম বলেন, মহাসড়কে উন্নয়নমূলক কাজ এবং সড়ক বিভাজক তৈরির কাজগুলো পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে সড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার চেষ্টা করছি।
ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, উন্নয়ন কাজের জন্য সাময়িক এ অসুবিধা। যানজটের কথা মাথায় রেখেই সাভারে দ্রুত চলছে চার লেন করে আট লেনে উন্নয়ন কাজ।
সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক আতিকুর রহমান বলেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার যানজট কম। নির্বিঘ্নে মানুষ বাড়ি ফিরতে পারবে। দুই একটি পয়েটে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হলেও ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক তা নিরসনে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় দীর্ঘ লাইন
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা শাহীন তারেক জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রধান প্রবেশদ্বার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ছোট বড় ১৯টি ফেরির মধ্যে গত দুই দিন ধরে ২টি ফেরি নষ্ট হওয়ার ১৭টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। নষ্ট হওয়া ফেরি দুইটি ভাসমান কারখানায় মেরামেতের জন্য রয়েছে। ঈদের এখনো সপ্তাহখানেক বাকি থাকলেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ আগেই বাড়ি ফেরা শুরু করেছে। যার কারণে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ঘাটে পারের অপেক্ষায় আটকে আছে ৫০০ এর ওপর পন্যবাহী ট্রাক। মঙ্গলবার সকাল থেকে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারেরও চাপ বেড়েছে।
এই নৌরুটে চলাচলকারী ১৯টি ফেরির মধ্যে গত দুইদিন ধরে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ও এনায়েতপুরী নামের দুইটি বড় ফেরি নষ্ট হওয়ায় সেগুলো মেরামতে রয়েছে। এছাড়াও হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা ও মাধবীলতা ফেরি তিনটিও বিকল হলেও সেগুলোকে সাময়িক মেরামত করে পুনরায় চালানো হচ্ছে। ফেরি কমে যাওয়ায় এবং একসঙ্গে বাস-ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ি পারাপার করতে গিয়ে হিমশিমে পড়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।
একদিকে, ঘাটে পারের অপেক্ষায় ৫০০ এর ওপরে পন্যবাহী ট্রাক আটকে রয়েছে। পাশাপাশি যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসগুলো ফেরি পার হতে ঘাটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত। বাসযাত্রীরা অভিযোগ করেন, অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের কারণে যাত্রীবাহী বাস ও প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের ব্যক্তিগত গাড়ি পারাপারে সময় বেশে লাগছে।
বিআইডবিউটিসি আরিচ সেক্টরের ডিজিএম শাহ নেওয়াজ বলেন, ঈদযাত্রার ঘরমুখো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে।
আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে দুরাবস্থা
আরিচা থেকে শাহাজাহান বিশ্বাস জানান, করোনা না থাকায় এবার মানুষ অনেকে আগে-ভাগেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। দিন যাচ্ছে আর মহাসড়ক এবং নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ছে। কিন্তু এখনো আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ঈদের নেই কোনো প্রস্তুতি। চরম দুরাবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস। ফলে এবার ঈদে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা ।
আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ২টি ছোট এবং ১টি ডাম্ব মোট ৩টি ফেরি চলাচল করছে। এসব ফেরি পুরানো হওয়ায় ১৪ কিলোমিটার নৌপথে যাতায়াতে ৪/৫ ঘণ্টা করে সময় লাগছে। ফেরিগুলো অনেক দিনের পুরাতন হওয়ায় মাঝে-মধ্যে দু’/একটি ফেরি মেরামতে থাকছে। ইঞ্জিন সমস্যার কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে ডাম্ব ফেরি রাণীক্ষেত ও ছোট ফেরি কপোতি আরিচা ঘাটে মেরামতে থাকতে দেখা গেছে। কদম নামের একটি মাত্র ফেরি দিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে যানবাহন পারাপার করা হছে। এতে যানবাহনগুলোকে ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে এক দিন পর ফেরি পারাপার হতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে আরিচা ঘাটে ছোট গাড়ির চাপ ছিল অনেক। ঘাট এলাকা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ওপর ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। ওপারে পাবনার কাজিরহাটে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি রয়েছে।
ঈদে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলগামী ঘরমুখো মানুষের বিকল্প রুট হতে পারে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট। পাবনা, ঈশ্বরদীর মানুষ এমনিতেই এখান দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। অনেক সময় বঙ্গবন্ধু সেতু ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট হলে ওই রুটের গাড়িগুলো আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। যানজট এড়াতে এবং সময় ও অর্থ সাশ্রয় হওয়াতে অনেকেই এই রুট ব্যবহার করছে। পাবনা, ঈশ্বরদিসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়তের সুবিধার্থে ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র ২টি ফেরি দিয়ে দীর্ঘ ২২ বছর পর পুনঃরায় চালু করা হয় আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি সার্ভিস। এক বছরেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ নৌরুটটি। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মটরসাইকেল ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ প্রতিদিন গড়ে দুই পার মিলে প্রায় ৩৫০ যানবাহন পারাপার হচ্ছে।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে মো. শওকত হোসেন জানান, ঈদকে সামনে রেখে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে সকাল থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ আরো বাড়তে থাকে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে যাত্রী ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার, পণ্যবাহী ট্রাক ও অন্যান্য হালকা যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। এদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশ পথ হিসেবে খ্যাত শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি নৌরুটে আজ নতুন যুক্ত হওয়া একটি ফেরিসহ মাত্র ৮টি ফেরিতে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে ঈদের আগেই বহরে আরো ২টি ফেরি যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন শিমুলিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকে ঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় ছোটবড় দুই শতাধিক গাড়ি দেখা গেছে। তবে এ বছর ঈদের চাপ শুরুর আগেই মানুষ ঘরমুখো হয়েছেন নানা ধরনের ভোগান্তি এড়াতে। শিমুলিয়া ঘাটে ফেরির তুলনায় লঞ্চে ও স্পিডবোটে বেশি যাত্রী পারাপার হতে দেখা গেছে। ঈদের বাকি আরো ৭দিন। এরমধ্যেই ঘুরমুখো মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঈদযাত্রায় ফেরিতে ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগেই এ নৌরুট দিয়ে গ্রামের পথে ছুটছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী ঘরমুখো মানুষ।
বিআইডব্লিউটিএ শিমুলিয়া ঘাটের পরিদর্শক মো. সোলেমান জানান, নৌপথে ১৫৩টি স্পিডবোট ও ৮৩টি লঞ্চ চলাচল করছে। ফেরির সংখ্যা কম থাকায় লঞ্চেই বেশি সংখ্যক যাত্রী পার হচ্ছেন। স্পিডবোট চলাচল করছে সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত এবং লঞ্চ চলাচল করছে রাত ১০টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক মাহবুব হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এ নৌরুটে সর্বমোট ৮টি ফেরি চলাচল করছে। দেড় শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আছে বলে জানান।
যানজটমুক্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
তরিকুল ইসলাম নয়ন, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে প্রতিবছরই ঈদের সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট লেগে থাকে। তবে এবার আসছে ঈদ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এখন পর্যন্ত কোনো যানজট লক্ষ করা যায়নি। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় যানজটমুক্ত মহাসড়ক। কোথাও কোনো যানজট নেই। এমনকি ট্রাফিক পয়েন্টেও কোনো যানজট নেই। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জে সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। মহাসড়কে যেন কোনোমতে যানজট সৃষ্টি না হয় সেজন্য হাইওয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। স্টার লাইন বাস কাউন্টার মালিক নাছির উদ্দিন জানান, আমি সকাল থেকে কাউন্টারের আছি। কোনো যানজটের খবর পাইনি। আমাদের পরিবহনের বাসগুলো যথাসময়ে যাতায়াত করছে। সিডিউরেল কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
ডিবি ড্রীম লাইন লি: জিএম, ইন্দ্র্রজিৎ চৌধুরী সাগর জানান, আমাদের পরিবহন ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড হয়ে নোয়াখালী বসুর হাট পর্যন্ত যাতায়াত করে। তবে কুমিল্লার দিকে যানজট থাকলেও নারায়ণগঞ্জের কোথাও যানজট নেই। এব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইওয়ে পুলিশের টি আই সফরউদ্দিন জানান, ঈদের বাড়ি ফেরা মানুষ যে যানজটমুক্ত নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সেই জন্য হাইওয়ে পুলিশ দিনরাত কাজ করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন