নিষিদ্ধ সত্ত্বেও এবারও মহাসড়কের উপরেই বসেছে কোরবানির পশুর হাট। আবার কোনো কোনো এলাকায় মহাসড়কের পাশে বসা পশুর হাট দখল করে নিয়েছে মহাসড়ক। এতে করে চলার পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের। হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশেপাশে বসানো হাটের কারণে যান চলাচল ব্যহত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকার ভিতরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপরেই বসেছে কোরবানির পশুর হাট। রাজধানীর শনিরআখড়া হাটের বেশিরভাগই দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপরে। মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে শনিরআখড়া হয়ে এক কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ রায়েরবাগে গিয়ে মিলেছে এই হাট। আট লেন মহাসড়কের দুপাশের দুই লেন দখল করে নিয়েছে কোরবানির পশুর হাট। হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বেশিরভাগ বিক্রেতা মাস্ক পড়েন না। আবার ক্রেতাদের মধ্যেও দেখা গেছে মাস্ক পরায় অনীহা। গতকাল শনিবার দুপুরেও হাটে গিয়ে দেখা গেছে বেশিরভাগ বিক্রেতার মুখেই মাস্ক নেই। কুষ্টিয়া থেকে ১৬টি গরু এনেছেন মোতালেব মিয়া। তার সাথে এসেছে আরও চারজন। মোতালেব জানান, তারা যে এলাকা থেকে এসেছেন সেখানে করোনা সংক্রমণে অনেকেই মারা গেছেন। ঘরে ঘরে করেনোর রোগীও দেখেছেন তারা। সঙ্গী কেউ করোনায় আক্রান্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাতো পরীক্ষা না করে বলা যাবে না। তবে একজনের হালকা জ্বর আছে বলে স্বীকার করেন তিনি। আরেকজন এসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। তিনি এনেছেন ২৬টি গরু। সাথে এসেছে আরও ৫ জন। চাঁন মিয়া নামের এই ব্যাপারি জানান, তার এলাকায় করোনার অনেক মানুষ মারা গেছেন। তার ভাষায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাকেই ধরেছে, তাকে আর ছাড়ে নি। সঙ্গী সবাইকে সুস্থ দাবি করে তিনি বলেন, মাঝপথে কেউ আক্রান্ত হয়ে থাকলে দ্এুকদিনের মধ্যেই টের পাওয়া যাবে। হাটে কেউ অসুস্থ আছে কি না জানতে চাইলে কয়েকজন বিক্রেতা জানান, তারা কয়েকজনকে অসুস্থ হওয়ার খবর শুনেছেন। কে বা কারা অসুস্থ হয়েছে তা ইজারাদারের লোকজন বলতে পারবে।
এদিকে, করোনার সংক্রমণের মধ্যেও পাড়া মহল্লায় হাট বসায় মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে আছে। দনিয়া এলাকায় আরও ৪/৫দিন আগে থেকেই পাড়া-মহল্লার ভিতরেই হাট বসানো হয়েছে। এতে করে ঘর থেকে বের হলে ঠেলতে হচ্ছে ভিড়। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, যারা গরু এনেছে তাদের বেশিরভাগই দক্ষিণাঞ্চলের করোনা সংক্রমিত এলাকার। বিশেষ করে কুষ্টিয়া, চূয়াডাঙ্গা, খুলনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল এলাকা থেকে বেশি পাইকার এসেছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসব লোকজনের সংস্পর্শে আসতে বাধ্য হচ্ছে এলাকার মানুষজন। এটা ঈদের পর ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে। শুধু তাই নয়, কোরবানির পশুর কারণে রাস্তাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে গা ঘেঁষে চলতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
এ ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়কের উপরেই বসেছে কোরবানির হাট। এর মধ্যে পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় হাটের কারণে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে।
ভুক্তভোগিরা জানান, প্রতি বছরই কোরবানির হাট এলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মহাসড়কের উপর কোনো হাট বসবে না। কিন্তু হাট এলে সে কথা আর কেউ মনে রাখে না। ইজারাদাররা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই সড়ক-মহাসড়কের উপর হাট বসাতে পাইকারদের উৎসাহিত করে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন