মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকারের বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। নারীর প্রতি সদয় আচরণ করার তাকিদ প্রদান করেন। তিনি বলেন : হে মানুষ, নারীদের বিষয়ে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করো না। তাদের ওপর যেমন তোমাদের অধিকার আছে, তেমনই তোমাদের ওপরও তাদের অধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের কল্যাণের দিকে সব সময় খেয়াল রেখো।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন : নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের ওপর পুরুষদের। কিন্তু নারীদের ওপর পুরুষদের মর্যাদা আছে। আর আল্লাহ শক্তিমান তত্ত্বজ্ঞানী। সূরা বাকারা : ২২৮। আল্লাহতায়ালার দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাদের তিরস্কার-পুরস্কারের মধ্যেও কোনো ফারাক নেই। পবিত্র কোরআনের অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে : আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, নম্র পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও নারী। যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক সম্মানকারী পুরুষ ও নারীর জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও প্রতিদান রেখেছেন। সূরা আহযাব : ৩৫।
আল্লাহর দৃষ্টিতে সেই উত্তম, সেই ক্ষমা ও প্রতিদানের অধিকারী যে আত্মসমর্পণকারী, বিশ্বাসী, অনুগত, সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, নম্র, দানশীল, রোজা পালনকারী, যৌনাঙ্গ হেফাজতকারী এবং আল্লাহকে অধিক সম্মানকারী। এ ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি।
রাসুল্লাহ (সা.) নারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে পুরুষদের অধিকতর দায়িত্বশীলতা প্রদর্শনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। নারীরা দৈহিকভাবে দুর্বল ও নাজুক। তাদের মন-মানসিকতা নরম ও কোমল। ধৈর্যশীলতা ও সহ্যশক্তি তাদের বেশি। সৃষ্টি বা প্রকৃতিগত কারণেই তাদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, অবিচার, অত্যাচার ও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। বলাবাহুল্য পুরুষের তরফ থেকে। সে জন্যই রাসুলে খোদা (সা.) পুরুষদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। নিষ্ঠুর-নির্দয় আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তাদের সম্মানের প্রতি সব সময় খেয়াল রাখতে বলেছেন।
দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, যুগে-যুগে, কালে-কালে নারীরা পুরুষদের দ্বারা অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারের শিকার হয়েছে, নিগ্রহ, অপমান ও অমর্যাদার সম্মুখীন হয়েছে, সঙ্গত অধিকারী ক্ষমতা ও প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। হত্যা, সহিংসতা, ধর্ষণ ও যৌনদাসত্বের মতো সভ্যতাবিরোধী অপরাধ, অপকর্ম ও জুলুম থেকেও তারা রেহাই পায়নি। মানবসভ্যতার চূড়ান্ত উৎকর্ষের একালেও নারীরা অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের দেশেও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এখানে নারী হত্যা, নারীর প্রতি সহিংসতা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ ইত্যাদির সয়লাব দেখা দিয়েছে। ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে, কর্মস্থলে কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। ৯২ শতাংশ মুসলিমের দেশে এরকম পরিস্থিতি হওয়ার কথা নয়। আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে না চলাই এর মূল কারণ।
আমরা যদি আল্লাহ ও রাসুল (সা.) নির্দেশিত পথ অনুসরণ করি, নারীদের প্রতি যথাযথ আদব ও মর্যাদা দেখাই, তাদের কল্যাণ ও মঙ্গলের দিকে সদা দৃষ্টি রাখি, তবে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে। শুধু আইন করে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা, হত্যা, ধর্ষণ নিরোধ করা যাবে না। নারী-পুরুষের চৈতন্য, মনন ও মূল্যবোধে পরিবর্তন আনতে হবে। নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে মানুষের ভেতরে সুবোধ ও মানবতার জাগরণ ঘটাতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন