শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

শীতের রসনা মেটাতে খেজুরের গুড় তৈরির ধুম

পীরগঞ্জের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে মিষ্টি মধুর ঘ্রাণ

রুবাইয়া সুলতানা বাণী, ঠাকুরগাঁও থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

দেশের উত্তর সীমান্ত পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও দিয়ে প্রতি বছর শীত আসে। তবে এবার শীতের আগমন ঘটেছে বেশ আগেই। অথচ এর আগে তেমনটি খুব একটা দেখা যায়নি। অগ্রহায়ণের শুরুতে মধ্যরাতের পর মৃদু শীত অনুভূত হওয়া স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আবহাওয়ার খেয়ালী আচরণ এবার পুরো দৃশ্যপটই পাল্টে দিয়েছে। পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও জেলায় নবান্নের শুরুতেই রীতিমত শীত জেঁকে বসেছে। বিশেষ করে কর্তিক মাসের মধ্যভাগ অর্থাৎ নভেম্বরের শুরুতে মৃদু শীত অনুভূত হতে শুরু করে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে জেঁকে বসেছে শীত। যা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। অনেকেই বলছেন, আবহাওয়ার খেয়ালী আচরণে এমনটি হয়েছে।
এদিকে আগাম শীত আসায় খেজুরের গুড় তৈরির কারিগররা বেজায় খুশি। তাদের কথা, এবার আগে আগে শীত আসায় গুড় বিক্রি বেশ ভালোই হবে। গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে বর্তমানে তারা ভীষণ ব্যস্ত। বলতে গেলে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনের ধুম পড়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের একটি উপজেলা পীরগঞ্জ। উপজেলার বৈরচুনা গ্রামে পা রাখলে শীতের বাতাসে ভেসে আসে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ। গ্রামের সব বয়সের নারী-পুরুষ এখন এতোটাই ব্যস্ত যে অন্যদিকে তাকানোর সময় তাদের হাতে নেই।
শীতের লোভনীয় খাবার খেজুরের গুড় তৈরিকে কেন্দ্র করে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম। আগাম শীত বেকারদের গুড় তৈরির কাজে টেনে এনেছে। এতে চাঙা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষি বিভাগ তাল-খেজুর চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে পূর্বাকাশে সূর্য উঁকি দেয়ার আগেই শিশির ভেজা গ্রামের রাস্তা মাড়িয়ে লোকজনের ছুটে চল শুরু হয়। সবার গন্তব্য আগের দিন শেষ বিকালে খেজুর গাছে বেঁধে রাখা রসেভর্তি হাঁড়ি নামানো। কুয়াশা কেটে যাওয়ার আগেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে পাটালি গুড় তৈরি শুরু হয় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বৈরচুনা গ্রামে।
গ্রামের লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ কেজি গুড় উৎপাদন হয়। রাস্তার শোভা বর্ধনের জন্য খেজুর গাছ রোপন করেছিলেন গ্রামের দুই ভাই মোকসেদ ও সলেমান। এসব গাছের রস থেকে তৈরি হচ্ছে গুড়। তাদের সাফল্য দেখে তাল-খেজুর গাছ রোপনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকে। তাল-খেজুর গাছ থাকায় বজ্রপাত থেকেও রক্ষা পাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। ইতোমধ্যে বৈরচুনা গ্রাম পরিচিত লাভ করেছে খেজুর ও তালের গ্রাম নামে।
প্রতিদিন উপজেলার বাইরে থেকে রস ও গুড় কেনার জন্য বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের ভীড় জমে বৈরচুনা গ্রামে। অনেকে আবার রস ও গুড় সংগ্রহ করে নিজেদের এলাকার বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন। অপরদিকে গ্রামের বধূরা খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি করছেন শীতের বিভিন্ন ধরনের পিঠা, পায়েস ও মিষ্টান্নসহ নানা মুখরোচক খাবার।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে বৈরচুনা গ্রামের সম্পর্ক দুই যুগ চলছে। তিনি প্রতি খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করছেন। নজরুল বলেন, চারজন শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন গুড় উৎপাদান হয় ৫০ থেকে ৬০ কেজি। গুড় তৈরির পর অর্ধেকের বেশি বিক্রি হয়ে যায়। বর্তমানে প্রতি কেজি ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, খেজুর গুড়ের সম্ভাবনা নিয়ে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রায় ১৫ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। তবে একমাত্র পীরগঞ্জ উপজেলাতেই রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
H M Yousuf Ali ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২৫ এএম says : 0
খেজুরের গুড় আমার খুব প্রিয়
Total Reply(0)
কিরন ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২৬ এএম says : 0
শীতের সময় গ্রামে থাকতে খুব ভালো লাগে
Total Reply(0)
বাবুল ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২৬ এএম says : 0
বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে মিষ্টি মধুর ঘ্রাণ .............. খুব ভালো লাগে
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২৭ এএম says : 0
এতে চাঙা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।
Total Reply(0)
নয়ন ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২৮ এএম says : 0
শহরেও খেজুরের গুড়ের প্রচুর চাহিদা আছে.................
Total Reply(0)
ডালিম ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২৮ এএম says : 0
দেখেই জিবে পানি চলে আসে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন