দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ৩০ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন ৗেনে ২শ টন চাল ও ৩৬ টন আটা খোলা বাজারে বিক্রী করছে খাদ্য অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলের প্রায় ৫ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে তিন মাস চাল বিক্রী কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। ওএমএস কার্যক্রমের আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় প্রতিদিন পর্যাক্রমে ১৫৩ জন ডিলারের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও জেলা সদরগুলোতে ২৪ টাকা করে আটা বিক্রী করছে খাদ্য অধিদপ্তর। বরিশাল মহানগরীতে ডিলারদের দোকানের বাইরে ট্রাকের মাধ্যমেও প্রতিদিন চাল ও আটা বিক্রী করছে খাদ্য অধিদপ্তর।
কনকনে শীতের সাথে হীমেল হাওয়ায় এসব দোকান ও ট্রাকের পেছনে প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষের লম্বা লাইন বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও সাধারন মনুষের অর্থনৈতিক অবস্থার জানান দিচ্ছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল।
তবে খোলা বাজারে চালের অগ্নিমূল্য প্রতিরোধে সরকারের এসব কার্যক্রম ইতিবাচক ভ’মিকা রাখবে বলে খাদ্য বিভাগ আশা করলেও এখন পর্যন্ত তা বড় কোন সুফল দেয়নি। ভরা আমন মৌসুমেও গত ১৫ দিনে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে চালের দাম কেজিপ্রতি ১ টাকা ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বরিশালের বাজারে এখন মাঝারী মানের ‘বিআর-২৮’ চাল বিক্রী হচ্ছে ৫৬-৫৮ টাকা কেজি দরে। মাঝারী ভাল মানের মিনিকেট চালের কেজি ৭৮Ñ৮০ টাকা কেজি। আর সর্ব নি¤œ মানের চালের কেজি ৪৮ টাকা ।
বর্তমান ওএমএস কার্যক্রমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ২০২ ডিলারের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ১৫৩ জনকে চাল বিক্রীর জন্য দেয়া হচ্ছে। বরিশাল মহানগরী ও অন্য জেলা সদরগুলোতে ডিলারদের মাধ্যমে প্রতিদিন দেড়টন করে আটাও বিক্রী করা হচ্ছে। বরিশাল মহানগরীতে ৪০ জন ডিলারের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ১১টি দোকানে চাল ও আটা এবং ৫টি ট্রাকে শুধু চাল বিক্রী করছে খাদ্য অধিদপ্তর।
তবে বর্তমান খোলা বাজারে চাল বিক্রী কার্যক্রম শুধু বরিশাল মহানগর এবং অন্য জেলা ও উপজেলা সদরে সীমাবদ্ধ রয়েছে। আর আটাও বিক্রী হচ্ছে শুধু বরিশাল মহানগর ও জেলা সদরগুলোতে। এ কর্মসূচীর আওতায় বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ১১ জন ডিলার ৩৬টন চাল ও ১১ টন আটা বিক্রী করছেন।
গত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে ৩০ টাকা কেজি দরে প্রায় ২৮ হাজার টন চাল খোলা বাজারে বিক্রী করেছে সরকার। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা সদরের বাইরে ইউনিয়ন ও পল্লী এলাকার ৪ লাখ ৮৬ হাজার পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমে ৩ মাসে প্রায় ৪৪ হাজার টন চাল বিক্রী করেছে সরকার।
গত কয়েক বছর ধরেই মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ওএমএস-এর আওতায় জেলা ও উপজেলা সদরে খোলা বাজার ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রী হচ্ছে। তবে বাজার নিয়ন্ত্রনে এবার তা আগামী ফেব্রুয়ারীর শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে খাদ্য মন্ত্রনালয় সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে।
পাশাপাশি গত সেপ্টেম্বরথেকে নভেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ও উপজেলা সদরের বাইরে পল্লী এলাকায় ১০ টাকা কেজি দরে ৪ লাখ ৮৫ হাজার পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রী কার্যক্রমও অব্যাহত ছিল। কিন্তু গত বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রী হলেও সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তা ৫০% বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়।
সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে এ কার্যক্রম উপকার ভোগীদের জন্য যথেষ্ঠ সুফল বয়ে আনলেও চালের দাম ১০ টাকা থেকে একলাফে ১৫ টাকায় উন্নীত করার বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট নন তারা। পাশাপাশি এ চাল বিক্রী কার্যক্রম দু দফায় বছরে ৫ মাসের পরিবর্তে ৮ মাসে উন্নীত করারও দাবী রয়েছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে এ কার্যক্রম বছরের অন্তত ৮ মাস চালু রাখালে তা গ্রামঞ্চলের হত দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যাপক সুবিধা এনে দেবে বলেও মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকগন।
বরিশাল মহানগরীর বাইরে জেলার ১০টি উপজেলার ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৩৬ টি পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে চাল কেনার সুবিধা পচ্ছেন। এ কার্যক্রমে পটুয়াখালীতে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯১৩, ভোলাতে ৮৩ হাজার ৪৩৭, পিরোজপুরে ৩৫ হাজার ৮০৯, বরগুনাতে ৫৫ হাজার ৮০৪ ও ঝালকাঠীতে ৩২ হাজার ১৪০টি পরিবার এ সুবিধার আওতায় রয়েছেন।
জনসংখ্যার অনুপাত সহ আর্থÑসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় ১৫ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহের কার্ড প্রদান করা হয়ে থাকে বলে খাদ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। এ লক্ষ্যে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বাছাই ও তদারকি কমিটির সুপারিশে উপজেলা কমিটি তালিকা চুড়ান্ত করে থাকে বলেও জানিয়েছেন বরিশালের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তবে এ কার্ড বিতরনে পক্ষপাতিত্বেরও অভিযোগ থাকলেও বিষয়টি সআনীয় সরকারথেকে উপজেলাও জেলা প্রশাসনের দেখভাল করার কথা বলে জানিয়েছে খাদ্য বিভাগের দয়িত্বশীল মহল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন