দেশের আট অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ ষ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গরম কাপড়ের বিক্রি বেড়েছে
নিম্ন আয়ের মানুষের খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা ঘর গরম করা হিটার-গিজারের বিক্রি বেড়েছে
শীতে কাঁপছে দেশ। হিমালয়ের পাদদেশে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের ৮ অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অনেক হাসপাতালে রোগীদের ভিড়ে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে গরম কাপড় বিক্রি বেড়ে গেছে। ঘর গরম করা হিটার, পানি গরম করার গিজারের বিক্রি বেড়েছে। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঠান্ডার কারণে খেটে খাওয়া মানুষ বাসা-বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়কে বিভিন্ন যানবাহন ধীর গতিতে চলাচল করছে। বৈরী আবহাওয়ায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিপন্ন মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণের কোনো চিত্র চোখে পড়ছে না।
৮ অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ : দেশের ৮ অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকার বৃহস্পতিবার আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হামিদ মিয়া এ তথ্য জানিয়ে বলেন, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস; আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি।
এই আবহাওয়াবিদ জানান, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য হ্রাসের কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভ‚তি অব্যাহত থাকতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা পর্যায়ের ক্লিনিকগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। সাধারণ দিনের তুলনায় প্রতিটি হাসপাতালে দ্বিগুণ-তিনগুণ রোগী চিকিৎসার জন্য আসছে। শীত নিবারণের জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। প্রতিটি জেলায় হাসপাতালে কয়েকশ’ করে রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসছেন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। রাজধানী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতাল, আইসিডিডিআর’বিসহ প্রতিটি হাসপাতালে রোগী স্বাভাবিক দিনের তুলনায় এখন বেশি ভর্তি হচ্ছেন। কেউ কেউ বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
ঢামেকে ঠাঁই নেই : প্রচন্ড শীতে ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়ে গেছে। শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়াও আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনটি ভবনে রোগীর ধারণক্ষমতা ২৬০০। অথচ বর্তমানে সাড়ে তিন হাজারের মতো রোগী ভর্তি হয়েছে। রোগীকে শয্যা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঢামেকের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় কোথাও শয্যা খালি নেই। নিরুপায় হয়ে রোগীরা প্রচন্ড শীতেও মেঝেতে থাকছেন। এই হাসপাতালে কোনো রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়ার নজির নেই। সারা দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন বহু রোগী ছুটে আসছেন হাসপাতাললে। রোগীর চাপের সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ওয়ার্ডে থাকা গুটিকয়েক কর্মী টাকার বিনিময়ে রোগীদের সিটের ব্যবস্থা করে দেন।
ঢামেকের পুরাতন ভবনের নিচতলায় মহিলা সার্জারি ওয়ার্ড দিয়ে প্রবেশ করলেই ডান দিকে পরে ১০৯ নম্বর ও বাম দিকে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ড। মাঝে বারান্দা, সেখানেও অনেক বয়স্ক নারীতে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তাদের ভর্তি নেয়া হয়েছে। একটা শয্যায় দু’জন করে রোগীকেও থাকতে দেখা গেছে।
সিরাজগঞ্জ কামারখন্দ এলাকা থেকে ৫৫ বছর বয়সী দুখিনী বেগম ফোঁড়াজনিত সমস্যা নিয়ে গত ১০ দিন আগে ভর্তি হন এখানে। তখন থেকেই তিনি বিছানা না পেয়ে বারান্দায় অবস্থান করছেন। তার মেয়ে খুশি আক্তার জানান, প্রচন্ড শীতে মাকে নিয়ে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে অবস্থান করছি। ওয়ার্ডের ভেতরে কোনো সিট খালি নেই। একটি শয্যায় দু’জন করে রোগীকে থাকতে হয়। তাছাড়া সেখানে বিছানা খুঁজতে গেলে ওয়ার্ডে থাকা নারী কর্মীরা টাকা দাবি করেন। কি আর করা, বয়স্ক মাকে নিয়ে এই শীতে ফ্লোরে অবস্থান করছি। চিকিৎসা পাচ্ছি, শুধু শয্যা সঙ্কট।
ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী ভর্তি আছেন। আমরা কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেই না। এমনও দেখা গেছে কোনো কোনো ওয়ার্ডের শয্যায় তিনজন রোগীকে রাখা হয়েছে। এখন হাসপাতালে শয্যা খালি নেই বলে আমরা যদি রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেই, তাহলে এই অসহায় রোগীগুলো কোথায় যাবে? তাই আমাদের শয্যা খালি না থাকলেও আমরা কোনো রোগীকে ফেরত পাঠাই না। প্রথম দিকে শয্যা পেতে রোগীদের একটু কষ্ট হলেও পরে তাদের ধারাবাহিকভাবে দেয়া হয়।
শীতে কাঁপছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল : মৃদু শৈত্যপ্রবাহে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। গত দু’দিন কিছু জায়গায় সূর্যের দেখা নেই। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শীতের হিমেল হাওয়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দুপুরের দিকে সূর্য উঁকি দিলেও কমেনি ঠান্ডার প্রকোপ। দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত শীত জেঁকে বসছে। জেলা হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বেড়েছে। খুলনা আবহাওয়া অফিসার ইনচার্জ আমিরুল আজাদ বলেন, খুলনা অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনেইদহ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিরা জানান, কনকনে শীতে কাঁপছে জেলার মানুষ। টানা দু’দিন সূর্যের দেখা নেই। কোথাও কোথাও বৃষ্টির মতো ঝরেছে কুয়াশা। হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেছে যানবাহন। হিম বাতাসে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ আর ছিন্নমূল মানুষ। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। অব্যাহত রয়েছে শৈত্যপ্রবাহ, মৃদু বাতাস বইছে। তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান বলেন, তীব্র শীতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশির ভাগই শিশু রোগী। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে তিন থেকে চার শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় ৪০০ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ায় তীব্র শীত জেঁকে বসেছে। গত কয়েক দিনের টানা তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। সকাল ও সন্ধ্যার পর খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতের প্রকোপে হতদরিদ্র মানুষ কাবু হয়ে পড়েছে। এদিকে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে। ছিন্নমূল মানুষরা সকাল-সন্ধ্যা খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শহরেও মানুষের আনাগোনা কম। সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর জেলায় একই চিত্র। কনকনে শীত পড়ছে, সঙ্গে বাতাস আরো শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। মাগুরা, মেহেরপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, বাগেরহাটেও গত দু’দিন ধরে হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। ঘন কুয়াশা ও হিম বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। জেলা হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মধ্যবিত্ত ও পেশাজীবীরা গরম কাপড়ের জন্য শহরের মার্কেটগুলোতে ভিড় করছেন। সুযোগ বুঝে দোকানিরা গরম কাপড়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
যশোর ব্যুরো জানায়, হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যশোরের জনজীবন। ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। শৈত্যপ্রবাহের তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। বেলা বাড়লেও ঘর থেকে বের হতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়ছে জনজীবন। শহরের খড়কি এলাকার রিকশাচালক নূর হোসেন বলেন, গত তিন-চার দিন যে পরিমাণ শীত পড়ছে; তাতে বাইরে রিকশা চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রিকশা না চালালে ভাত জুটবে না; তাই বাধ্য হয়েই পথে নামতে হয়েছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাঁচি-কাশিসহ কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অপরদিকে শীতের কারণে সারাদিনই গরম পোশাক পরে মানুষজনকে ঘুরতে দেখা যায়। শীতকালীন রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পেতে গরম পানি পান করাসহ গরম কাপড় ব্যবাহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আবদুস সামাদ বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। রোগীর চাপ থাকলেও হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
রংপুর বিভাগে চিত্র : হিমালয়ের পাদদেশে রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধায় হিমেল হাওয়ার সঙ্গে জেঁকে বসেছে শীত। তাপমাত্রা ওঠা-নামা করার সঙ্গে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। শিশুদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্করাও। শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে ঘটছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাও। এতে করে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। গত এক সপ্তাহে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছে তিন শতাধিকের বেশি রোগী। ভর্তি হওয়া এসব রোগীর মধ্যে সাত দিনে ১৫ শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। যাদের বয়স এক মাস থেকে চার বছরের মধ্যে। এছাড়া শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ দুই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. তানভীর চৌধুরী জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা কম। আগের সপ্তাহে ৪ শতাধিক রোগী সেখানে চিকিৎসা নিয়েছে। রংপুর সিভিল সার্জন ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পৌষের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। দিন দিন তাপমাত্রা কমে আসায় শীতে শিশু ও বয়স্করা কাবু হচ্ছেন। তবে চলতি সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শামীম আহমেদ জানান, শীতের কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের মধ্যে যাদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন মনে হচ্ছে, তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। তবে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রংপুর হাসপাতালের শিশু বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এক সপ্তাহে ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুরের ১০ মাসের শিশু ওমর আলী, লালমনিরহাট পাটগ্রামের ৩ বছরের শিশু, গাইবান্ধার নবজাতক, কুড়িগ্রাম চিলমারির আড়াই বছরের শিশু, রংপুর নগরীর শালবন এলাকার ১৯ মাসের মাহমুদুল হাসান রয়েছে।
গরম কাপড়ের বিক্রি বেড়েছে : সারা দেশের মতোই কংক্রিটের রাজধানী ঢাকাও কাঁপছে পৌষের শীতে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে গরম কাপড়ের চাহিদা। বড় শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথের দোকানে সব শ্রেণির ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। বিক্রিও হচ্ছে গরম কাপড়। নতুন কাপড়ের দাম বেশি হওয়ায় রাজধানীর নি¤œ আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষের বেশিরভাগ পুরনো ও তুলনামূলক একটু কম দামি কাপড়ের দোকানের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকায় শীতের তীব্রতা বাড়ায় গরম কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। গত মঙ্গলবার ও বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, বঙ্গবাজার, মতিঝিল, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশের ফুটপাথ, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, মহাখালী, নিউ মার্কেট ও বসুন্ধরা সিটির শপিংমলের সামনে ক্রেতাদের প্রচÐ ভিড়। একাধিক শীতের পোশাক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশু ও বয়স্কদের শীতের কাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে। এসব কাপড়ের মধ্যে মাফলার, সোয়েটার, হুডি, মাথার টুপি, ফুলহাতা গরম কাপড়ের গেঞ্জি বিক্রি হচ্ছে বেশি। বঙ্গবাজারে শীতের কাপড় বিক্রি করছেন মো. আনোয়ার শেখ। তিনি বলেন, শীত বেশি পড়ায় গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে কম আয়ের লোকজন, যেমন রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিকরা অধিক হারে কিনতে আসছেন।
শীত বেশি পড়ায় গরম কাপড়ের দাম বেশি নিচ্ছেন এমন অভিযোগ করে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা গরম কাপড়ের দাম বেশি নিচ্ছে। শীতের তীব্রতার বৃদ্ধির সঙ্গে তারা (ব্যবসায়ীরা) দাম বেশি নিচ্ছেন। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, শীত বেশি পড়ায় গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। এ জন্য দাম একটু বেশি। মতিঝিলের এক ফুটপাথ ব্যবসায়ী জানান, গরম কাপড় মৌসুমি ব্যবসা। তাই একটু দাম বেশি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন