মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দোজাহানের শাহেনশাহ-১

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

সাবধানতার অভাবে কিংবা অজ্ঞতাবশত অথবা ইহুদি-খ্রিস্টান, মোশরেক তথা অমুসলিম লেখক পন্ডিতদের রচনায় বিভ্রান্ত হয়ে অনেকেই তাদের লেখায়, বক্তৃতায় বা ওয়াজে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে এইরূপ ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি করে থাকেন যে, বিশ্বনবী সারওয়ারে কায়েনাত, দোজাহানের সম্রাট, আকায়ে নামদার হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) ছিলেন গরিব-দরিদ্র বা ফকির-অভাবী (নাউযু বিল্লাহ)। এরূপ অশালীন কদর্য ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য রাসুল (সা.)-এর সুমহান শানের প্রতি ঘৃণ্য কটাক্ষ, অবমাননাকর, গোস্তাখি ও বেয়াদবির শামিল।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহতাআলা সৃষ্টি না করলে, আসমান-জমিন কিছুই সৃজন করতেন না এবং তাঁকে সমগ্র বিশে^র জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন, বলেছেন খোদ আল্লাহ। কোরআনে ঘোষণা করেছেন, তাঁকে তাঁর করুণারাজি ও সৌভাগ্যের সম্পদভান্ডার দান করেছেন এবং তাঁর পরেই তাঁকে সম্মান ও মর্যাদার সুমহান স্থান দিয়েছেন (মোকামে মাহমুদ) এবং ‘ইন্না রাফআনা লাকা জিকরাক’ বলে তাঁর স্মরণকে সমুন্নত করেছেন। তিনি ‘দরিদ্র’ (গরিব) ছিলেন এরূপ নির্লজ্জ বাক্য কোনো মোমেন-মুসলমানের মুখে নিসৃত হতে পারে, তা ভাবাও যেতে পারে না।

জান-মাল, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি তথা সবকিছুই আল্লাহর দান, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন এবং ইচ্ছা হলে হরণ করেন। আল্লাহ জীবন দাতা। আল্লাহ মানবক‚লের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তিনি ধনী, তোমরা ফকির (দরিদ্র)। আল্লাহ চাইলে কাউকে মুহূর্তে পথের ভিখারী করতে পারেন, কাউকে রাজা-বাদশাহও বানাতে পারেন।’
আল্লাহর নেয়ামত-দান অসীম-অফুরন্ত, তার নেয়ামতের অসীম ভান্ডার হতে যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি দান করেন। তাঁর এ নেয়ামতের সীমা-পরিসীমা নেই। তাঁর আসমানি-ঐশী নেয়ামতের বারিধারার ন্যায় জমিনী নেয়ামতের সীমাও বিশাল।

এ জমিনী নেয়ামতকে সীমাবদ্ধ করে দেখা হলে বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, জমিনে আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠার অধিকার লাভ করা তার নেয়ামতসমূহের অন্যতম এবং এ জন্য নবুওয়াত-রেসালত ও সুলতানাত-সাম্রাজ্য লাভ করা প্রয়োজন। আল্লাহর প্রিয় নবীগণের মধ্যে যারা এ অপূর্ব নেয়ামতের অধিকারী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র নাম সবার শীর্ষে, তবে ভিন্ন প্রকৃতির।
মহানবী (সা.)-এর গুণবাচক নামগুলোর মধ্যে এমন কিছু নাম রয়েছে, যাতে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতসমূহ বণ্টনসহ এরূপ কিছু বিষয়ের সন্ধান পাওয়া যায়, যেগুলো নবী-রসূল ও সুলতান-শাসকগণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি নামের ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
১. কাসেমুন: তিনি ছিলেন কাসেম। এর শাব্দিক অর্থ বণ্টনকারী। বণ্টন কে করে? যার কাছে অর্থ সম্পদ বা কোনো বস্তু মওজুদ থাকে সেই বণ্টন করে অন্যকে ভাগ করে দেয়। আল্লাহতাআলা তাঁর অসীম অর্থ-সম্পদ, ধন-দৌলত, জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা তাঁর খাজানা-ভান্ডারগুলো হতে যা কিছু তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (সা.)-কে দান করেছিলেন, তিনি তা থেকে যত ইচ্ছা দান করতেন, বণ্টন করতেন। বিশেষত অর্থ-সম্পদ, দান-সদকা ও বণ্টন করে দিতেন, কিছুই তাঁর নিকট অবশিষ্ট রাখতেন না। তিনি আল্লাহর নিকট যা প্রার্থনা করতেন, তা প্রাপ্ত হতেন। তাঁর নিকট কিছুই অবশিষ্ট থাকত না, সমস্তই তিনি বণ্টন করে দিতেন।
২.
৩. গানিয়্যুন (গনি): ধনী-ধনাঢ্য ব্যক্তিকে বলা হয় গনি। যার মাল বা অর্থ-সম্পদ অধিক থাকে সাধারণত তাকে ধনীবলাহয়। তবে ধনী হওয়াটা অর্থ বাধন-দৌলতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বহু প্রকারের ধন-সম্পদের অধিকারী হওয়া যায়। যেমন, যার সন্তানাদি অধিক, সেও এক প্রকারের ধনী। আল্লাহতাআলা হুজুর (সা.)-কে নানা রকমের অর্থ সম্পদ দান করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার কিছুই জমা করে রাখেননি, যথাসময় যথাস্থানে বিলি-বণ্টন করে দিয়েছেন মানবতা ও দরিদ্রদের কল্যাণে। তাঁর হৃদয় ছিল বিশাল সাগরের ন্যায় প্রশস্ত। তাই সা’দী (রহ.) বলেছেন, ‘তাওয়াঙ্গার ব-দিলাস্ত, না-বমাল।’ অর্থাৎ মাল-সম্পদের প্রাচুর্য্য ধনী হওয়ার পরিচায়ক নয়, ধনী সে ব্যক্তি যার হৃদয়-মন বিশাল ও বদান্যতা পূর্ণ। হুজুর (সা.) ছিলেন সেই অনন্য গুণের অধিকারী।
৪.
উপরে হুজুর (সা.-এর দুটিমাত্র গুণবাচক নাম উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। এ দুটি ছাড়াও দানবীর-দানশীল, সদয়, দয়ালু, ন্যায়বিচারক, জ্ঞানবান প্রভৃতি গুণাবলী তাঁর মহানুভবতা ও প্রজ্ঞা-জ্ঞানের পরিচায়ক। মহানবী (সা.) দোজাহানের সম্রাট, পাপী-তাপীদের সুপারিশকারী। তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করতে হয় আল্লাহর প্রতিটি এবাদত বন্দেগিতে। এ দুরূদ পাঠ করা ব্যতীত কোনো মোমেন মুসলমান জান্নাত লাভ করতে পারবে না। তাঁর প্রতি অবমাননাকারীর ঠিকানা জাহান্নাম। কেয়ামতের সময় যখন সকল নবী-রসূল ‘ইয়া নাফসি’ ‘ইয়া নাফসি’ বলবেন, তখন নবীক‚লের সর্দার মহানবী (সা.) ‘ইয়া উম্মতি’ ‘ইয়া উম্মতি’ বলে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের সাথে মহানবী (সা.)-এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ছাড়া কেউ জান্নাত লাভ করতে পারবে না।

এরূপ হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে, যা অকাট্যরূপে প্রমাণ করে যে, মহানবী (সা.)-ই দোজাহানের সম্রাট, সকলের নেতা। আরতা খোদ আল্লাহরই ঘোষণা। তিনি ফকির-গরিব-দরিদ্র-অভাবী ছিলেন না। তিনি ছিলেন এই শ্রেণির লোকদের পরম বন্ধু, মদদগার, অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Jaker ali ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবিকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত তথা করুণার আধার করে সৃষ্টি করেছেন। যারা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের ওপর ঈমান আনবে, সে প্রিয়নবির রহমত ও করুণা গ্রহণ করবে। এ রহমত ও করুণার ফলে ওই ব্যক্তি দুনিয়া ও পরকালে সুখ শান্তি লাভ করবে।
Total Reply(0)
Habib ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
প্রিয়নবি যেহেতু বিশ্ববাসীর জন্য রহমত সেহেতু তিনি বিশ্ববাসীকে দুনিয়া ও পরকালের সুখ-শান্তি ও সঠিক পথের সন্ধান দিতে আগমন করেছেন
Total Reply(0)
Unit chief ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
উলামায়ে কেরাম তাঁকে এ অর্থে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, ‘প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কারণেই বিশ্ববাসী ব্যাপক ধ্বংসের হাত থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। কেননা পূর্ববর্তী অনেক জাতিকে যেভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল সেভাবে উম্মতে মুহাম্মাদিকে আজাব দিয়ে ধ্বংস করে নির্মূল করা হয়নি।
Total Reply(0)
Kader sheikh ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
তিনি শুধু মুসলিম উম্মাহর জন্যই ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ ছিলেন না, তিনি মুশরিকদের জন্যও রহমত স্বরূপ ছিলেন। কারণ, মুশরিকদের ওপর বদদোয়া বা অভিশাপ না করাও ছিল তাঁর করুণারই একটি অংশ।
Total Reply(0)
Yusuf samin ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
মুসলিম উম্মাহর উচিত, করুণার আধার প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জবিন-যাপন করা।
Total Reply(0)
Neamat Ullah ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে তাঁর বিধান ও প্রিয়নবির সুন্নাত অনুযায়ী জীবন গঠন করে পরকারে হাশরের ময়দানের কঠিন দিনে তাঁর সুপারিশ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
Md. Zakior Hossain ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৫০ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে তাঁর বিধান ও প্রিয়নবির সুন্নাত অনুযায়ী জীবন গঠন করে পরকারে হাশরের ময়দানের কঠিন দিনে তাঁর সুপারিশ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
সাইফ ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৫২ এএম says : 0
আল্লাহ্‌ সম্মানিত লেখক সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিদান অবশ্যই দেবেন. সবাই নাফসি নাফসি তে বিভোর তখন তাজেদারে কয়েনাত বলবেন উম্মাতি উম্মাতি. এর পরও কি সেই সব দুর্ভাগারা মনে করতে পারে যে নবী (সাঃ) তাদেরই মত??? নাউজুবিল্লাহ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন