শহর বাস্তবায়নের জন্য ‘পূর্বাচল নতুন শহর’ নামে রাজধানীর অদূরে নারায়তগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ও দাউদপুর ইউনিয়নসহ গাজীপুরের কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নের বরকাউ ও পারাবর্তা মৌজায় গড়ে তোলা হচ্ছে পরিকল্পিত নগর। আর এ শহর বাস্তবায়নের ফলে বরকাউ, পারাবর্তা মৌজায় থাকা ভাওয়াল স্টেটের অধীনে থাকা গজারি বনের মাটি চুরির হিড়িক পড়েছে।
এতোদিন দিনে-দুপুরে মাটি চুরি হলেও সম্প্রতি ৩শ’ ফুট এলাকায় সেনাবাহিনী পরিচালিত সড়ক উন্নয়নের কাজ চলমান থাকায় চোরাকারবারিরা রাতের বেলায় মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ওই বনের গাছ কেটে বন ধ্বংস করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তবে নিষ্ক্রিয় ভ‚মিকায় রয়েছে রাজউক ও বনবিভাগ।
সরজেমিন ঘুরে দেখা যায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট তৈরিতে ভাওয়ালগড়ের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে রূপগঞ্জ সংলগ্ন কালীগঞ্জের বড়কাউ ও পারাবর্ত মৌজার লালমাটির উঁচুনিচু ভূমি কেটে সমান করা হচ্ছে। কেটে ফেলা হচ্ছে সেখানকার বনভ‚মি। এমনকি বিভিন্ন ঠিকাদারের নিয়োগ করা শ্রমিক ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সহায়তায় বেকু আর মালবাহী ট্রাকে মাটি বহন করে শহরের বাইরে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে একটি মহল। সস্তায় মাটি কিনে নিচ্ছেন আশপাশের লোকজন। তবে এমটিএফ নামে প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার মুসলেউদ্দিন দাবি করেন এসব বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
সূত্র জানায়, পূর্বাচল প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহন করা ১ হাজার ৩০০ একর জমির বেশিরভাগ শাল ও অন্যান্য বৃক্ষে আচ্ছাদিত। এর ৬৭৭ একরের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এলাকায় ছিল বৃক্ষরাজি; যা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন হিসেবে চিহ্নিত। এখানে শুধু দুই মৌজায় ২ হাজার প্লট তৈরি করতে ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ গাছ কাটা হয়েছে। এর আগে বন বিভাগ পূর্বাচলের বড়কাউ, পারাবর্ত মৌজাসহ মোট পাঁচটি মৌজাকে বন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
পরিবেশবিদ ইকবাল হাবিব মুঠোফোনে বলেন, ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তনের ক্ষমতা বিভিন্ন সংস্থার হাতে দিয়ে রাখাটাই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করে ভূমি পরিবর্তন করে বলে এটি বন না। তখনি কাটাকাটি জায়েজ হয়ে যায়। রাজধানীর পরিবেশ ঠিক রাখতে পূর্বাচল প্রকল্পের নামে বনের জমি কিংবা বনভ‚মি ধ্বংস না করার জোর তাগিদ দিয়ে আসছি আমরা। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
এসব বিষয় নিয়ে পূর্বাচল নতুন শহরের গাজীপুর অংশের বৃদ্ধিতে একোয়ার পরবর্তী পরিবেশবাদীদের করা উচ্চ আদালতে এক মামলার জবাবে এ প্রকল্পের উদ্যোক্তা রাজউক তথা সরকার ও আদালতে দাখিল করা তথ্যমতে ওই গাছগুলো বনভ‚মির নয় দাবি করেন। তবে সে সময়ে পরিবেশ অধিদফতর অনুসন্ধান শেষে এক প্রতিবেদনে জানায়, পারাবর্তা ও বড়কাউ মৌজার ৮০ শতাংশ এলাকাতেই শালজাতীয় গাছ রয়েছে। যা বন বিভাগের অন্তর্গত।
এসব বিষয়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) উজ্জল মল্লিক বলেন, পূর্বাচল দেশের সবচেয়ে বড় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা। ৬ হাজার ১৫০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত ওই প্রকল্পে ২৬ হাজার প্লট ও ৬২ হাজার ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছে। এখানে কাজ চলমান। বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্ন ঠিকাদার কাজ করছেন। বন দেখা বা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের নয়। বনবিভাগ রয়েছে। কোন অনিয়ম পেলে তারা ব্যবস্থা নিবে। তবে পূর্বাচল প্রকল্পের মাটি শহরের বাইরে বিক্রি বা নেয়ার নিয়ম নাই। এসব প্রমাণিত হলে রাজউক চেয়ারম্যানকে জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন