শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

শম্ভুকগতিতে এগোচ্ছে কাজ

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প প্লট মালিকদের হতাশা

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

২৬ বছরেও শেষ হয়নি পূর্বাচলের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রকল্পের কাজ। প্রকল্প পাসের পর বারবার নকশা সংশোধন আবার দাফতরিক জটিলতার অজুহাতে অনেকটা শম্ভুকগতিতে এগোচ্ছে প্রকল্পটি। এদিকে অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন কাজে ধীরগতির কারণে প্লট মালিকরা হতাশায় থাকলেও ৩শ’ ফুট সড়ক উন্নয়নের কাজে সরাসরি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে আবাসিক প্লট রয়েছে ২৫ হাজারের অধিক। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার প্লট হস্তান্তর করেছে সংস্থাটি। কিন্তু নাগরিক পরিষেবা না থাকায় প্রকল্প এলাকা এখনো বাসযোগ্য হয়নি। স্থানীয় আদিবাসি প্লট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রকল্পটি পাসের পর রাজউক ২০০৪, ২০০৫, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে এর নকশা সংশোধন করে। আবার ২০১৭ সালে পঞ্চমবারের মতো নকশা সংশোধন করে রাজউক। পঞ্চম সংশোধনীতে প্রায় ১০০ একর জায়গায় ‘আইকনিক টাওয়ার’, আবাসিক প্লটের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক প্লট কাটাছেঁড়া, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তাতে আবাসিক প্লটের সংখ্যা ২৫ হাজার ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার ৯১ করা হয়। এতে ৩ কাঠার ৬০টি, ৫ কাঠার ১৪টি ও ১০ কাঠার ১টিসহ মোট ৭৫টি প্লট বাড়ে।
এদিকে পূর্বাচলের ১৯ নম্বর সেক্টরটি সিবিডি (ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক অঞ্চল) এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই এলাকার প্রায় ১০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে ‘কনসোর্টিয়াম অব পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড অ্যান্ড কাজিমা করপোরেশন’। তাদের এখানে ১০০ থেকে ১৪২ তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণ করার কথা। এখনো আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়নি। একইভাবে ৪নং সেক্টরে বঙ্গবন্ধু চায়না বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারটি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও তা চালু হয়নি। সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে প্লট হস্তান্তর প্রক্রিয়া বিদ্যমান হলেও কবে নাগাদ শেষ হবে পূর্বাচলের কাজ তা জানে না খোঁদ কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বাসস্থানের নিমিত্তে ১৯৯৫ সালে রাজধানী ঢাকার সম্প্রসারণে নেয়া হয় ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প’। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বাস্তবায়নাধীন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। ২৬ বছর আগে শুরু হওয়া সরকারের সর্ববৃহৎ এ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়ও দ্বিগুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৭৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এরপরও ১৯৯৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৬৮ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি প্রকল্পের মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে আরো তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করে রাজউক। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এমন দীর্ঘ সূত্রিতাকে ভোগান্তির কারণ বলে দাবি করছেন আদিবাসি প্লট মালিকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও পূর্বাচল নতুন শহরের প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, মানুষ মারা গেছে, মামলাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। তবে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের যতটুকু কাজ হবে, সেখানেই প্রকল্প শেষ করা হবে। পরবর্তী কাজের জন্য আমরা ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ করে পুরো কাজটা সম্পন্ন করব। কারণ গাড়ি-ঘোড়া না থাকায় ১৫০ ফুট রাস্তা এখনই সম্পন্ন করব না। মানুষজন যখন ঘর-বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করবে, সবার বাড়িতে যখন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন দেয়া হবে, তখন আমরা সে রাস্তাটা সম্পন্ন করব। তবে ৩শ’ ফুট সড়কটি বিশেষভাবে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এটা মেগা প্রকল্পের একটি। তা নির্মাণের সময় বিকল্প রাস্তা রেখেই কাজ চলমান। তবে ভোগান্তি থাকলেও তা মেনে নিতে হবে। এ সময় প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, এ প্রকল্পের আওতায় চলমান পূর্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় প্রয়োজন।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের ৬ হাজার ১৫০ একর জমিতে বাস্তবায়ন শুরু হয় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প। তবে প্রকল্প হাতে নেয়ার পর কাগজপত্র ঠিক করতে লেগেছে সাত বছর। প্রাথমিকভাবে প্রকল্প কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০০৫ সালে। এরপর আবার বাড়িয়ে ২০১০ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রকল্পে জটিলতা দেখা দেয়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশের জমি অধিগ্রহণ শেষ হয় ২০০৩ সালে। আর গাজীপুর অংশের জমি অধিগ্রহণই শেষ হয় ২০০৯ সালে। এরপর আরেক দফা সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তারপরও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। যদিও মোট ৩৩টি সেক্টরের মধ্যে ১৫-১৬টি সেক্টর বাড়ি করার মতো হয়েছে বলে রাজউক দাবি করছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অংশে রয়েছে ৪ হাজার ৫৭৭ দশমিক ৩৬ একর এবং গাজীপুর অংশে ১৫০০ একর জমি; যা ৩০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন