রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ নগরী। ঢাকাকে ঘিরেই আবর্তিত হয় দেশের চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসাসহ দাপ্তরিক সব কার্যক্রম। তাই এ নগরীতে জনস্রোতও দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বাসস্থানের নিমিত্তে ১৯৯৫ সালে রাজধানী ঢাকার সম্প্রসারণে নেয়া হয় ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প’। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বাস্তবায়নাধীন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। ২৫ বছর আগে শুরু হওয়া সরকারের সর্ববৃহৎ এ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়ও দ্বিগুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৭৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর পরও ১৯৯৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৬৮ শতাংশ। শেষ বারের মতো চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার টার্গেট নির্ধারণ করেছে রাজউক। এ কারণে প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। বেড়েছে কর্মব্যস্ততা। সব মিলে প্রাণ ফিরেছে পূর্বাচলে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নের কাজ শেষ হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী ১ জানুয়ারী থেকে এই স্থায়ী প্যাভিলিয়নেই শুরু হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী ইনকিলাবকে বলেছেন, আগামী জানুয়ারীর আগেই পূর্বাচল প্রকল্পের রাস্তার কাজ সম্পন্ন হবে। এখন থেকে প্রতি বছরেই পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হবে। সে লক্ষ্যে রাজউক কাজ করে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়ন প্রস্তুত করা হয়েছে রাজউকের নতুন শহর প্রকল্পের পূর্বাচলের ৪ নং সেক্টরে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ এবং চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন নামে এ স্থায়ী প্যাভিলিয়ন দেখতে প্রতিদিন জড়ো হয় হাজারো দর্শনার্থী। তবে উদ্বোধন না করায় এর ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন না সাধারন লোকজন। এদিকে এশিয়ান বাইপাস চার লেনে উন্নীতকরন আর ৩শ’ ফুট সড়ক উন্নয়ন কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।
এদিকে বাংলাদেশ এবং চীনের যৌথ অর্থায়নে চীনের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান “চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন নির্মাণ করেছে বাণিজ্যমেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়ন। যার অবকাঠামোগত সকল কাজ গত বছরের ৩০ নভেম্বর সম্পন্ন হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান (প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা) এ.এইচ.এম আহসান জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমরা প্রাথমিকভাবে অনুমোদন পেয়েছি। আশা করা যায় আগামী বছর ১লা জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হবে । তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর প্রকোপের ওপর বাণিজ্য মেলার সময়কাল নির্ভর করবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা বাইপাস মহাসড়কের পাশে পূর্বাচলের এ নব নির্মিত অবকাঠামোটিতে সর্বমোট বরাদ্দকৃত জমির পরিমাণ ২৬ দশমিক ১০একর। সেন্টারের মোট ফ্লোর এর স্পেস ৩৩ হাজার বর্গমিটার, এক্সিবিশন ভবনের মোট ফ্লোর স্পেস ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার এবং এক্সিবিশন হল এর মোট আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার। ভবনটিতে পার্কিংয়ের জন্য দোতালার স্পেস ৭ হাজার ৯১২ বর্গমিটার যেখানে প্রায় একসাথে ৫০০টি গাড়ি এবং ভবনটির সামনের জায়গাটিতে প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ থাকবে। তাছাড়াও এক্সিবিশন হলে ৯ দশমিক ৬৭ বর্গমিটার করে ৮০০ টি স্টল থাকবে যেখানে দেশি-বিদেশি পণ্যের এক্সিবিশন চলবে। এছাড়াও রয়েছে ৪৭৩ আসনবিশিষ্ট একটি মাল্টি ফাংশনাল হল, ৫০ আসনবিশিষ্ট কনফারেন্স রুম, ৬টি মিটিং রুম, ৫০০ আসনবিশিষ্ট ক্যাফেটেরিয়া বা ফুড কোর্ট, নামাজের স্পেস, দুইটি অফিস রুম, মেডিকেল বুথ, গেস্ট রুম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, স্টোর রুম, সেন্ট্রাল এসি, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা এবং অটোমেটিক গেইট। আবার এমন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা বাইরে থেকে দেখতে অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর হিসেবে দর্শনার্থীদের আগ্রহ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিগত সময়ে দর্শনার্থী কম থাকলেও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন ঘুরতে আসে এখানে।
রাজউকের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী শহরের পাশে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ স্বয়ংসম্পূর্ণ নতুন শহর করাই ছিল পূর্বাচল প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ২৭৭ দশমিক ৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অংশে রয়েছে ৪ হাজার ৫৭৭ দশমিক ৩৬ একর এবং গাজীপুর অংশে ১৫০০ একর জমি; যা ৩০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। বাকি ১৫০ একর জমি ঢাকা জেলার খিলক্ষেত থানায় কুড়িল ফ্লাইওভার এবং লিংক রোড নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে। কল্পটিতে বিভিন্ন আকারের মোট ২৭ হাজার ১৭১টি প্লট এবং ৬২ হাজার অ্যাপার্টমেন্টের সুযোগ রয়েছে।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাণিজ্যমেলাকে টার্গেট করে রাস্তা নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। একদিকে চলছে মাটি ফেলার কাজ। অন্যদিকে বুলডোজার দিয়ে মাটি সমান করা হচ্ছে। বাণিজ্যমেলায় প্রবেশের জন্য তিনশ’ ফুট রাস্তার সাথে সংযোগ স্থাপনের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। নির্মাণ শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তার মাটি বসে গেলেই সেগুলো পাকাকরণ কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও পূর্বাচল নতুন শহরের প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, মানুষ মারা গেছে, মামলাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। তবে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের যতটুকু কাজ হবে, সেখানেই প্রকল্প শেষ করা হবে। পরবর্তী কাজের জন্য আমরা ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ করে পুরো কাজটা সম্পন্ন করব। এ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় অনেক কাজ হয়ে গেছে, কিন্তু কোনো একটি ছোট কাজের জন্য তা সম্পন্ন হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আমরা আলাদাভাবে সেগুলো সম্পন্ন করব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন