শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পূর্বাচলে গ্রাহকদের বাড়ি নির্মাণের নির্দেশ

রাজউকের প্রকল্পে ৮৫ শতাংশ অগ্রগতি : ৬ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে স্টিয়ারিং কমিটির সুপারিশ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই ঢাকামুখী হচ্ছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়েই চলছে রাজধানীতে। এতে ঢাকার ওপর বাড়ছে চাপ। সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা। নাগরিক জীবনে পড়ছে প্রভাব। উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রায় আড়াই কোটির অধিক মানুষের বাস। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকার থেকে নেয়া হয়েছে মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে কাজ করছে রাজউক। এরই মধ্যে পূর্বাচলের পানি, বিদ্যুৎ এবং মাটি ভরাট কাজ শেষ করে বাড়ি নির্মাণের উপযোগী করে ২৬ হাজার প্লটের মধ্যে ২২ হাজার প্লট গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৪ হাজার প্লটের কাজ দ্রুত চলছে। আগামী বছর থেকে গ্রাহকদের বাড়ি নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছে রাজউক। সরকারি কিছু সংস্থাকে থানা, ফায়ার সার্ভিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখন তাদের কার্যক্রম শুরু করলেই কাজ দ্রুত সমাপ্ত হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির সভায় ৬টি প্রকল্প দ্রুত শেষ করার সুপারিশ করা হয়। এ প্রকল্পগুলো হচ্ছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প, গুলশান-বনানী-বাড়িধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প, ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প, মাদানী এভিনিউ থেকে বালু নদী সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোর্ডের উভয় পাশের খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্প, আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প এবং রাজধানীর গুলশান, মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া ও ধানমন্ডি এলাকার ৯টি পরিত্যক্ত বাড়িতে বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প। এছাড়া রাজউকের ৬টি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
নগরীর আশপাশে নগরবাসীর আবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি করে ঢাকা শহরের জনসংখ্যার চাপ হ্রাস করতে ১৯৯৫ সালে নেয়া হয় ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প’। উদ্দেশ্য ছিল পূর্বাচলে যথাযথ নগরায়নের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা। পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই পরিবেশ তৈরি করা। আবাসনের বিদ্যমান তীব্র সমস্যা হ্রাস করা। আশপাশের অঞ্চলে নগরায়নের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা প্রসারিত করা। নতুন জনপদের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করা। ভবিষ্যতের আবাসন চাহিদা হ্রাস করা। প্রকল্পটি ২৭ বছর আগে এ শুরু হলেও আগামী বছর শেষ হচ্ছে।
রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী ইনকিলাবকে বলেন, পূর্বাচল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। এটা যেহেতু উন্নয়ন প্রকল্প সব কাজ একসঙ্গে শেষ করা যাবে না। কিছু কাজ আছে বারবার সংস্কার করতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুত কাজগুলো শেষ করতে। এ প্রকল্পটি এখন মানুষের বসবাসযোগ্য হয়েছে। মানুষ বাড়িঘর নির্মাণ করতে পারবে। যারা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেনÑ তাদের এখানে বাড়িঘর নির্মাণের আহ্বান জানাচ্ছি। বসবাস শুরু হলেই প্রকল্পটির বাস্তবতা ফুটে উঠবে। পূর্বাচলের রাখা কয়লা অপসারণের কাজ দ্রুত শুরু হচ্ছে।
রাউজকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পটি ২৭ বছর আগে এ শুরু হলেও আগামী বছর শেষ হবে। আমরা এরই মধ্যে পূর্বাচলের ২৬ হাজার প্লটের মধ্যে ২২ হাজার প্লট গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করেছি। আগামী বছর থেকে প্লট মালিকরা যাতে বাড়ি নির্মাণ করতে পারে, সেসব কাজ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছেÑ আবাসনের বিদ্যমান তীব্র সমস্যা হ্রাস করা, পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই পরিবেশ তৈরি করা। আমরা সে কাজগুলো করছি। দফায় দফায় প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে অবশেষে আগামী বছর প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের ৮৫ ভাগ কাজসম্পন্ন হয়েছে জানিয়েছেন, রাউজকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক আর সংশোধিত মেয়াদকাল অনুযায়ী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
এখন পর্যন্ত এর সামগ্রিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ শতাংশ। ওয়াটার পাইপলাইন, রোড নেটওয়ার্ক, ব্রিজ নির্মাণ, আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং, ওয়াকওয়ে, ইকোপার্ক, লেক খননসহ কাজ প্রায় শেষ। এ সময়েও স্কুল-মসজিদ-মাদরাসা ও মন্দিরের কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই। এনিয়ে জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি দ্রুত এ কাজগুলোর কার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর যানজট নিরসনের কথা বলে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকের উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় ৪১০.২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। পরে ২০১৩ সালে জুন পর্যন্ত করা হয়। পবরর্তীতে চার ধাপে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ২০২৪ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এ প্রকল্পের আর্থিক ও ভৌত অগ্রগতি যথাক্রমে ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৭৫ শতাংশ। সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবনার সঙ্গে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট যুক্ত করে যানজট নিরসনের প্রস্তাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে লেকগুলো কার্যকর প্রবহমান করতে ৮২.৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৯৩৩,৪০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের জমির মালিকরা এ পর্যন্ত কোনো টাকা পায়নি বলে জানা গেছে।
ঢাকা শহরকে পূর্বদিক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ১৯৯৫ সালে রাজধানী ঢাকার সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প’ গৃহীত হয়েছিল। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। যা পরে সংশোধন করে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। পরে আবারও সময় বৃদ্ধি করে ২০১৯ সালের মধ্যে সমাপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এ সময়েও কাজ শেষ করতে পারেনি রাজউক। ফলে ফের সময় বৃদ্ধি করা হয়। ১৯৯৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে ৬৮ শতাংশ। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ এর কাজ সমাপ্ত হয় ৭৫ শতাংশ। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর থেকে বিভিন্ন কারণে বহুবার নকশা সংশোধন করা হয়েছে। বারবার সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ৭ হাজার ৭৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকায়। ঢাকা থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে ‘পূর্বাচল নতুন শহর’ স্থাপনের জন্য সরকার ৬ হাজার ২২৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অংশে রয়েছেÑ ৪ হাজার ৫৭৭ দশমিক ৩৬ একর ভূমি এবং গাজীপুর অংশে রয়েছে ১৫শ’ একর জমি। মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ভূমির মধ্যে আবাসিক প্লটে ব্যয় হবে ৩৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ভূমি। এ ছাড়া সড়ক তৈরিতে ব্যয় হবে ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, সামাজিক অবকাঠামো তৈরিতে ব্যয় হবে ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, লেক তৈরিতে ব্যয় হবে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিকে প্লট তৈরিতে ব্যয় হবে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ৬ শতাংশ ব্যয় হবে ভূমি। জনসমাগম ও খেলার মাঠের জন্য ২ দশমিক ৫০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। অবশিষ্ট ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ ভূমি সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল। তবে রাজউক বলছে, পুরো প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে। প্রথমদিকে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ লাখ মানুষের বসবাস উপযোগী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মূল পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে নতুন নকশা অনুসারে এ প্রকল্পে ২৭ লাখ মানুষের বসবাসের লক্ষ্যমাত্রা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্বাচল প্রকল্পে সামগ্রিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ শতাংশ। প্রকল্পে ৩২০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৩০০ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকি ২০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাকি ২০ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হবে। যদিও এই সময়েও তা শেষ হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন