নেছারাবাদে সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিয়ে শতাধিক স্থানীয় এনজিও দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক কিস্তির নামে ক্রেডিট প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। এনজিও ব্যুরো অথবা মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির অনুমতি ছাড়াই অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে বেআইনি ডিপোজিট পেনশন স্কিম (ডিপিএস) করার নামে সমিতির পরিচালকরা কোটি কোটি টাকার ব্যক্তিগত সম্পদ গড়ে তুলছে।
পরিচালক নামদারী মালিকরা সমিতির সদস্যদের ডিপিএস সঞ্চয়ের টাকা কৌশলে সরিয়ে ব্যক্তিগত নামে কোটি কোটি টাকার জমিজমা ক্রয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ছেন। সমিতির নিবন্ধন নিয়ে বেআইনি ডিপিএস সংগ্রহ করলেও সমবায় দফতরসহ তদারকি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সমিতিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বরং সমবায় দফতরের কর্মচারীরা তদারকির নামে সমিতিগুলোর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে এনজিওর ব্যবসা করে আরামকাঠি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি, আস্থা সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি, মাতৃ সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতি, উপজেলা সড়কের সেবক হেলথ অ্যান্ড অ্যাডুকেশন সমিতি, অবিনাষ সঞ্চয় সমিতিসহ শতাধিক সংস্থার পরিচালকরা মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে কোটি কোটি টাকার ব্যক্তিগত সম্পদের মালিক হয়েছেন। সমিতির সদস্যরা ঋণ নিতে গিয়ে স্বাক্ষর দেয়া বøাঙ্ক চেক জমা রাখতে বাধ্য হন।
সমিতির এক শ্রেণির পরিচালকরা ডিপিএসের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগ মুহূর্তে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। পরে বøাঙ্ক চেকে বড় অংকের টাকা বসিয়ে এনআই অ্যাক্টের মামলা ঠুকে দিয়ে হয়রানি করে সঞ্চয়ের পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন। এ কারণে এ উপজেলায় শতাধিক এনআই অ্যাক্টের মামলা চলছে আদালতে। এদিকে গত ২-৩ বছরে ধলহার স্বনির্ভর সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি, ধলহার পল্লী সঞ্চয় সমিতি, সমাজ কল্যাণ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি এনজিও (সমিতি) গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছে।
সরেজমিনে এনজিওর হাট বলে পরিচিত মাদ্রা বাজারে গিয়ে জানা যায়, সেখানে কম করে হলেও ৩০টি সমিতি সুসজ্জিত অফিস সাজিয়ে ব্যাংকের মত কাউন্টার খুলে সদস্যদের সাথে টাকা পয়সা লেনদেন করছে। কুড়িয়ানা বাজারেও ২০টির বেশি সমিতির অফিস আঙ্গিনায় সকাল সন্ধ্যা শত শত মানুষ সঞ্চয় জমা ও ঋণের টাকা লেনদেন করছে। এসব সমিতি ৫-৬ বছরে সঞ্চয়ের দ্বিগুণ টাকা এবং ১০ বছরে চারগুণ টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ডিপিএস করাচ্ছে। এমনকি এককালিন ডিপোজিট করলে মেয়াদ শেষে তিন, চারগুণ টাকা পরিশোধের লোভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার আমানত সংগ্রহ করছেন।
সমবায় আইন অনুযায়ী সমিতির জন্য একটি অফিস ব্যবহার করার কথা। অথচ আরামকাঠি সঞ্চয় সমিতি ও আস্থা সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতিসহ বেশ কিছু সমিতি বিভিন্ন স্থানে ৫-৭টি ব্রাঞ্চ অফিস খুলে ব্যাংকিং স্টাইলে এনজিওর কার্যক্রম চালাচ্ছে।
সমবায় সমিতির ডিপিএস করার বৈধতা আছে কিনা জানতে চাইলে আরামকাঠি সঞ্চয় সমিতির পরিচালক মো. রহমতুলাহ বলেন, এগুলো দেখার জন্য সরকারি অফিসার আছে। যদি জানতে হয় তাহলে সমবায় অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। সমিতির নিবন্ধন নিয়ে এনজিও স্টাইলে ক্রেডিট প্রোগ্রাম পরিচালনা ও ডিপিএস করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, সমিতির পরিচালকদের কাছে সম্ভবত সদস্যদের দুই প্রকার তালিকা থাকে। আমরা যখন খোঁজ খবর নিতে যাই তখন কাগজপত্র লুকিয়ে রাখে এবং ডিপিএস করার বই সরিয়ে রাখে। তিনি বলেন, দেশব্যাপী এটা ছড়িয়ে পড়েছে। তবে শিগগিরই এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সমবায় দফতর থেকে নিবন্ধিত আরামকাঠি সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি তিন সহস্রাধিক সদস্যদের মধ্যে ঋণদান কর্মসূচির পাশাপাশি ডিপিএস চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই সমিতির পরিচালক মো. রহমতুলাহ সমিতি শুরু করার ৭-৮ বছর আগে একটি চা দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তিনি ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিজ নামে জমি ক্রয়সহ অন্তত দশ কোটি টাকার বেশি ব্যক্তিগত সম্পদের মালিক হয়েছেন। উপজেলা সড়কের সেবক হেলথ অ্যান্ড অ্যাডুকেশন সমিতির পরিচালক কৃষ্ণ দাস গত এক মাসের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকার জমি ক্রয় করেন। এছাড়াও দুইটি মোটরসাইকেল কোম্পানির ডিলারশীপসহ অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মাত্র ৭-৮ বছরের ব্যবধানে। অবিনাষ সমিতির মালিক মিঠুন হালদার গত এক বছরে কোটি টাকার ব্যক্তিগত সম্পত্তি ক্রয়সহ কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আস্থা সমিতির মালিক বিশ্বজিত খোকনসহ অন্তত এক ডজন পরিচালক ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন