মানবজীবনে সঙ্গী-সাথি ও দোসর, সহচরদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। জীবন চলার সব অঙ্গনেই বন্ধু-বান্ধব ও মিত্রজনদের প্রভাব একটি বিশেষ স্থান দখল করে রাখে। এজন্য সঙ্গী-সাথি ও বন্ধু-সহচর নির্বাচনে যত্মবান হওয়া এবং সৎসঙ্গী ও পুণ্যবান জীবনের অধিকারী লোকদের মিত্র হিসেবে গ্রহণ করা প্রত্যেক বিবেকবান মানুষেরই উচিৎ। মহান আল্লাহপাক ঈমানদার বান্দাহদের খেতাব করে এরশাদ করেছেন : ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীগণের সহচর হও।’ (সুরা তওবাহ : আয়াত ১১৯)। এ আয়াতে কারিমার নির্দেশসূচক বাক্য হতে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, সত্যবাদীগণের বন্ধুত্ব ও সাহচর্য লাভে সত্য ও ন্যায়ের পথ খুঁজে পাওয়া যায় এবং সত্যাশ্রয়ী জীবন গঠন করা সহজতর হয়।
মহান আল্লাহপাক উত্তম বন্ধু ও সহচরদের পরিচিতি সুস্পষ্টভাবে আল কোরআনে তুলে ধরেছেন। এরশাদ হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ প্রতিপালন করে, এই শ্রেণীর লোকেরা পরকালে নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের সঙ্গী হবে। যাদের উপর আল্লাহপাক অনুগ্রহ করেছেন, তারাই উত্তম সহচর’। (সূরা নিসা : আয়াত ৬৯)।
এই আয়াতে কারিমার আলোকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ প্রতিপালন করা ঈমানদারদের অপরিহার্য কর্তব্য। এই কর্তব্য ও দায়িত্বের প্রতি উদাসীন ও অমনোযোগী লোকদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা মোটেই উচিৎ হবে না। কারণ তারা আল্লাহদ্রোহী ও রাসূলবিদ্বেষী। তারা কখনো সুপথ লাভের সহায়ক ভ‚মিকা পালন করতে পারে না। বরং তারা আল্লাহপাক ও ঈমানদারদের শত্রু। এই শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে আল্লাহপাক চরম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : ‘হে মোমিনগণ! তোমরা আমার শত্রুকে ও তোমাদের শত্রæকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।’ (সূরা মুমতাহানা : আয়াত-১) শুধু তাই নয়, মহান রাব্বুল আলামীন মুমীনগণ কাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে দিকনির্দেশনাও প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : ‘মুমিনগণ যেন মুমিন ব্যতীত কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যে ব্যক্তি এরূপ করে সে আল্লাহপাকের প্রীতি ও প্রণয়ের অধিকারী নয়।’ (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ২৮)।
হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলেন : যারা আমারই উদ্দেশ্যে পরস্পর (ভাললোকের সঙ্গে) প্রীতি স্থাপন করে এবং আমারই উদ্দেশ্যে এক মাহফিলে উপবেশন করে, আমারই উদ্দেশ্যে পরস্পর সাক্ষাৎ করে এবং একই উদ্দেশ্যে একে অপরকে দান করে, তাদেরকে ভালোবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। (মোয়াত্তা ইমাম মালেক)। আর এ কথা চূড়ান্ত সত্য যে, যাকে আল্লাহপাক ভালোবাসেন, তার পার্থিব জীবন, বরযখের জীবন ও আখেরাতের জীবন হয় সুখময়, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সফলতা লাভে ধন্য। এর মাঝে কোনো ব্যত্যয় সাধিত হয় না।
এজন্য মুমিন মুত্তাকিগণের উচিত যাকে সে বন্ধু বানাতে চায়, তাকে যেন দেখে শুনে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে। এতদপ্রসঙ্গে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : ‘মানুষ নিজের বন্ধুর স্বভাব চরিত্রের দিকে আকৃষ্ট হয়। এখন তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কারোও সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চায়, তবে তাকে যেন ভালরূপে দেখে শুনে বন্ধুত্ব স্থাপন করে।’ (জামে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ)।
বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মাদ (সা:) আরও বলেছেন : ‘সৎসঙ্গ এবং অসৎসঙ্গের তুলনা কস্তুরী বিক্রেতা ও কর্মকারের তুল্য। কস্তুরী বিক্রেতার কস্তুরী যে ক্রয় করবে সে তো তার সুঘ্রাণ পাবেই। আর সে তা ক্রয় না করবে, সেও তার ঘ্রাণ লাভে ধন্য হবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার জিনিসপত্র বা বস্ত্র ও পরিচ্ছদ পুড়িয়ে ফেলবে, নতুবা তুমি তার ধুয়া ও দুর্গন্ধের শিকার হবে’। (সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিম)।
উপরোক্ত আলোচনার নিরিখে মরমী কবির কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, সোহবতে সালেহ তোরা সালেহ কুনাদ, সোহবতে তালেহ তোরা তালেহ কুনাদ- অর্থাৎ সৎ লোকের সংসর্গ তোমাকে সত্যাশ্রয়ী জীবন গঠনের সহায়ক হবে। পক্ষান্তরে অসৎ লোকের সংস্পর্শ তোমাকে অসৎকর্মের অন্ধকুপে নিক্ষেপ করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন