শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূল (সা.)-এর প্রতি ঈমান

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনা। কেউ যদি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান না আনে, সে মুমিন নয়। তাই আল্লাহর প্রতি যেমন ঈমান আনতে হবে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিও ঈমান আনতে হবে। সেই সঙ্গে আল্লাহ তাঁর রাসূলের প্রতি যে কোরআন অবতীর্ণ করেছেন তার প্রতিও ঈমান আনতে হবে। কোরআন মাজিদে তিনি বলেন : রাসূল (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সা.) তাতে ঈমান এনেছেন, যা তার প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে এবং (তাঁর সাথে) মুমিনগণও। তারা সকলে ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। (তারা বলে,) আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না (যে, কারো প্রতি ঈমান আনব আর কারো প্রতি ঈমান আনব না।) (সূরা বাকারা : ২৮৫)।

এ আয়াতে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর নাযিলকৃত কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর প্রতি ঈমান, কিতাবের প্রতি ঈমান, ফিরিশতা ও নবী-রাসূলের প্রতি ঈমান- এগুলোর কী অর্থ সেটা আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, কোরআনে কারীমের প্রতি ঈমান আনার কী অর্থ এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনার কী অর্থ?

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনার অর্থ হলো : এক. বিশ্বাস করা, তিনি আল্লাহর নবী ও রাসূল। এই সাক্ষ্য দেয়া : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।

দুই. এই বিশ্বাস রাখা, তিনি সর্বশেষ নবী। খাতামুন নাবিয়্যীন। তাঁর পরে আর কেউ নবী হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন : মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন; তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং নবীগণের মধ্যে সর্বশেষ। আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞাত। (সূরা আহযাব : ৪০)।

স্বয়ং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কোনো নবী নেই। (অর্থাৎ আমার পরে নতুন করে কেউ নবী হবে না। -সহীহ বুখারী : ৩৫৩৫)।

সুতরাং রাসূলুল্লাহর পর কেউ যদি নিজেকে নবী দাবি করে, সে মিথ্যাবাদী এবং কাফের। তেমনিভাবে যারা এই মিথ্যানবীকে নবী বা মুজাদ্দিদ, মাহদী বা মাসীহ কিংবা তার অনুরূপ, অথবা ঈমানদার নেককার মনে করবে তারা সবাই কাফের। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে নবী দাবি করেছিল। তাকে অনেকে গ্রহণও করে নিয়েছে। এরা সবাই কাফের।

কোরআনের স্পষ্ট ঘোষণা, নবী করিম (সা.) হলেন আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর পরে আর কেউ নবী বা রাসূল হবে না। কাজেই তাঁর পরে কেউ যদি নিজেকে নবী দাবি করে, প্রথমত সে মিথ্যাবাদী। কারণ কেউ নিজের ইচ্ছেমতো নবী হতে পারে না। নবী তো মনোনীত করেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তিনিই ঘোষণা করেছেন, সর্বশেষ নবী হলেন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। অতএব এখন যদি কেউ নবুওত দাবি করে, সে মিথ্যাবাদী।
দ্বিতীয়ত সে কোরআন অস্বীকারকারী।

মিশরে ডক্টর রাশাদ খলীফা নামে এক ব্যক্তি আছে। সে নিজেকে নবী দাবি করেছে! ‘আহলে কোরআন’ নামে এক ফেরকা আছে। এদের আবার অনেক ফেরকা। তাদের এক ফেরকা বলে, নামায নাকি দুই ওয়াক্ত। আরেক ফেরকা বলে, তিন ওয়াক্ত। তাদের আরো অনেক ফেরকা রয়েছে। আহলে কোরআনের অনেকে রাশাদ খলীফাকে নবী মানে -নাউযুবিল্লাহ।

তিন. এটাও বিশ্বাস করা যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা যেসকল দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন সেগুলোর প্রত্যেকটি তিনি যথাযথ আদায় করেছেন। তাঁর সে দায়িত্বগুলোর বিবরণ কোরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি যা করেছেন এবং যা বলেছেন সবকিছু বিশ্বাস করা এবং মনেপ্রাণে মেনে নেয়া তাঁর প্রতি ঈমানের অংশ। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত এসব দায়িত্ব পালনার্থে যা বলেছেন বা করেছেন সেটাই হাদীস ও সুন্নাহ। কোরআনের ভাষায় ‘হিকমাহ’ ও ‘উসওয়ায়ে হাসানাহ’। সেটা গ্রহণ ও অনুসরণ করাকে কোরআন ফরয করেছে এবং মান্য করাকে ঈমানের শর্ত সাব্যস্ত করেছে।

চার. তাঁর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও ভালোবাসা রাখা। পাঁচ. তাঁর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা। অবমাননা নয়; শুধু তাঁর সামান্য অসম্মান বা কষ্টের কারণ হয়, এমন সব কথা ও আচরণ থেকে বিরত থাকা।

উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয় আছে, যেগুলো মানার নাম হলো নবী (সা.)-এর প্রতি ঈমান। বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের ঠিক ঠিক বোঝার তাওফীক দান করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Liakat Ali ৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:০৭ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসূল (সঃ) এর সুন্নাহ অনুযায়ী চলার তওফিক দান করুন আমীন।
Total Reply(0)
Gias uddin ৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:০৮ এএম says : 0
কথাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল জাজাকল্লাহু খাইরান
Total Reply(0)
Habib ৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:০৯ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো শুনলাম আল্লাহ আমাদের পালন করার তাওফিক দিন আমিন
Total Reply(0)
Monir ahmed ৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:১০ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ। অত্যন্ত সুন্দর সময়োপযোগী আলোচনা যাহা সকল মুসলমানদের জানা এবং মানা প্রয়োজন। আল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত দান করুন আমীন।
Total Reply(0)
Yusuf samin ৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:১১ এএম says : 0
শায়েখ রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ ও নিষেধ নিয়ে একটি বিশেষ পর্ব করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
Total Reply(0)
Jaker ali ৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:১১ এএম says : 0
হে আল্লাহ আপনি আমাদের বুঝবার তৌফিক দান করুন আমিন ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন