ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে পাপাচারের কথাটি বেশি পরিবেশিত হচ্ছে। টেলিভিশন, দৈনিক পত্র-পত্রিকা, সাপ্তাহিক ও মাসিক প্রচারপত্রগুলোতেও ফলাও করে পাপাচারের খবর ছাপা হচ্ছে। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এতসব পাপাচারের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে যে, যেদিকেই তাকানো যায় শুধু পাপাচারই পাপাচার।
পাপাচার, কামাচার, ব্যাভিচার, ধর্ষণ এত বেড়ে গেছে যে, এগুলোর সার্বিক তথ্যসংগ্রহ, সংরক্ষণ ও শ্রেণিবিন্যাস করার জন্য নতুন করে আলাদা একটা দফতর খোলা ছাড়া উপায় নেই। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম দেশ ও জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে গিয়েছিলেন, ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর, ঐ নতুনের কেতন উড়ে কালবৈশাখী ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’
তার এ আহ্বানের মাঝে তিনটি অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এর প্রথমটি হলো জয় ধ্বনি করা। আল হামদুলিল্লাহ আমরা জয়ধ্বনি করে চলেছি। আর দ্বিতীয়টি হলো- নতুনের কেতন উড়া বা নতুন পতাকার আবির্ভাব ঘটা। মাশা-আল্লাহ্। আমরা এই দুটি নেয়ামত পুরাপুরিই পেয়ে গেছি।
আমাদের জয়ধ্বনির তুঙ্গ-তরঙ্গের আঘাতে এদেশের অতীতের রাষ্ট্রীয় পতাকা হয়তো যাদুঘরে স্থান নিয়েছে এবং আমরা নতুন জাতীয় পতাকার নিচে সমবেত হয়েছি। এটা বড়ই ভাগ্যের কথা। পরম কৌশুলী মহান আল্লাহ্পাক আমাদেরকে এহেন অমূল্য নেয়ামত দান করেছেন। এর জন্য তার লক্ষ কোটি শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
কিন্তু আমরা জাতীয় কবির তৃতীয় আহ্বানটির কথা বেমালুম ভুলে গেছি। সেটা হলো কালবৈশাখী ঝড়। অর্থাৎ পাপাচার, কামচারের তান্ডবলীলা। এ ঝড়ের তান্ডব আস্ফালন কতটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে, সে চিন্তা-চেতনা আমাদের মনে-মগজে আদৌ আছে বলে মনে হয় না।
কারণ আমাদের মন ও মনন কঠিন পাথরের চেয়েও বেশি শক্ত হয়ে গেছে। আল্লাহপাকের আজাবের ভয় যেখান থেকে উঠে গেছে, আমরা নির্ভয়ে হাটে, মাঠে, ঘাটে, পথে-প্রান্তরে, দিনে-দুপুরে, পাপাচার-কামাচার ও ধর্ষণে লিপ্ত হয়ে পড়ছি। এই কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডব কোথায় গিয়ে থামবে তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না।
এরই দিকনির্দেশনা আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুআল কোরআনে এভাবে বিবৃত করেছেন। এরশাদ হয়েছে- অতঃপর এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মতো অথবা তদপেক্ষাও কঠিন। পাথরের মধ্যে এমনও আছে যা থেকে ঝরনা প্রবাহিত হয়, এমনও আছে যা বিদীর্ণ হয়। অতঃপর তা থেকে পানি নির্গত হয় এবং এমনও আছে যা আল্লাহ্র ভয়ে খসে পড়তে থাকে। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে বেখবর নন। (সুরা বাকারাহ: আয়াত ৭৪)।
এই আয়াতে কারিমায় পাথরের তিনটি ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। (১) একশ্রেণির পাথর হতে বেশি পানি নির্গত হয়। (২) কিছু পাথর এমনও আছে যা থেকে কম পানি নিঃসরিত হয়। (৩) কিছু পাথর আল্লাহর ভয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে। এগুলোর মধ্যে প্রথম দুটি প্রকার সম্পর্কে মোটামোটিভাবে অধিকাংশ মানুষই অবগত। পাথর থেকে বেশি পানি ও কম পানি নিঃসরিত হওয়ার চিত্র অনেকেই প্রত্যক্ষ করে চলেছেন। কিন্তু পাথরের তৃতীয় ক্রিয়াটি অর্থাৎ আল্লাহর ভয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ার বিষয়টি হয়তো কারো অজানা থাকতে পারে।
কেননা, আমরা সাধারণত মনে করি যে, পাথরের কোনো রূপ জ্ঞান-বুদ্ধি ও অনুভ‚তি নেই। কিন্তু মনে রাখা উচিত যে, আল্লাহকে ভয় করার জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। জন্তু-জানোয়ারের জ্ঞান নেই। কিন্তু তাদের মধ্যে আমরা ভয়ভীতি প্রত্যক্ষ করি। তবে চেতনার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। জড় পদার্থের মধ্যে আদৌ চেতনা নেই-এর কোনো প্রমাণ আছে বলে মনে হয় না। কারণ চেতনা প্রাণের উপর নির্ভরশীল।
সম্ভবত: জড় পদার্থের মধ্যেও এমন সু² প্রাণ আছে, যা আমরা অনুভব করতে পারি না। হাদিস শরীফে এসেছে: মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো বৃক্ষ কিংবা পাথরের নিকট দিয়ে গমন করতেন, তখন এ দুটি বস্তু তাঁকে সালাম জানাত। প্রাণ ও চেতনা না থাকলে পাথর ও বৃক্ষ বিশ্ব নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সালাম জানাত কিভাবে?
তাই বলছি, বর্তমানে কালবৈশাখী ঝড় বইছে। আল্লাহকে ভয় করুন! সাবধান হোন। আল্লাহপাক আমাদের অবস্থান সম্পর্কে বেখবর নন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন