মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দুর্নীতি অনিয়ম বাসা বেঁধেছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে-০৩

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

খায়বারের ইহুদিদের সাথে জমির অর্ধেক আমদানির ওপর একটি সন্ধি স্থাপিত হয়েছিল। যখন উৎপাদিত দ্রব্য বণ্টনের সময় হতো, হজরত নবী করীম (সা.) তাঁর সাহাবী হজরত আবদুল্লাহকে প্রেরণ করতেন, তিনি সততা ও বিশ^স্ততার সাথে উৎপন্ন দ্রব্য দুইভাগে ভাগ করে দিতেন এবং বলতেন: ‘এই দুইভাগ হতে যা ইচ্ছা গ্রহণ করো।’ ইহুদিরা চাঁদা করে তাদের স্ত্রীদের জন্য কিছু পরিমাণ অলঙ্কারাদি সংগ্রহ করে এবং তা ‘রিশওয়াত’ হিসেবে পেশ করে বলে: ‘এ সব অলঙ্কার গ্রহণ করুন এবং এগুলোর পরিবর্তে বণ্টনে আমাদের অংশ বাড়িয়ে দিন।’ হজরত আবদুল্লাহ এ কথা শ্রবণ করে বললেন; ‘হে ইহুদিগণ! আল্লাহর শপথ করে বলছি, আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তোমরাই হচ্ছ আমার নিকট সবচেয়ে নিন্দিত, ঘৃণিত। কিন্তু মনে রেখ, তোমরাও তাকে তোমাদের প্রতি জুলুম-অন্যায় করতে সম্মত করাতে পারবে না।’ তিনি আরও বললেন: ‘তোমরা আমাকে ‘রিশওয়াত’ পেশ করেছ, তা নিঃসন্দেহে অবৈধ এবং জঘণ্য হারাম। আমরা মুসলমানরা এটা ভোগ করতে পারি না।’ ইহুদিরা তার এই উক্তি শুনে বলতে লাগল, ‘এটাই হচ্ছে ইনসাফ ও ন্যায়, যার ফলে আসমান-জমিন কায়েম রয়েছে।’ মহানবী (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি কোনো শাসনকর্তার নিকট কারো জন্য সুপারিশ করে এবং তাকে কোনো জিনিস হাদিয়া স্বরূপ দেয় এবং শাসনকর্তা তা গ্রহণ করে, তাহলে তার উদাহরণ হলো, সে যেন সুদের এক বিরাট দ্বারে উপনীত হলো।’ (আবু দাউদ)

হুজুর (সা.) বলেছেন: ‘যে শাসনকর্তা ঘুষ গ্রহণ করে এবং যে তাকে ঘুষ দেয়, তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। (মোনতাকা) হুজুর (সা.) ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন। হজরত সওবান হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘এই দুই ব্যক্তির যে মধ্যস্থতা করে সেও এই অভিসম্পাতের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজা, তিরমিজী)।

হজরত আবু ওসামা (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি নবী করীম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘ধার করা জিনিস পরিশোধ করে দেয়া কর্তব্য এবং যে জিনিস কেবল মুনাফা অর্জনের জন্য দেয়া হয় তা প্রত্যার্পণ করা একান্ত আবশ্যক এবং ঋণ শোধ করে দিবে এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী (জামানতদার) ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) দিবে।’ (মেশকাত)

হজরত সাদ বিন যায়েদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, হুজুর বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো এক আঙ্গুল পরিমিত স্থান অন্যায় ভাবে দখল করে, কেয়ামতের দিন সাত তবক জমি হতে ওই পরিমাণ অংশ তার ঘাড়ে শৃংখলাবদ্ধ করা হবে।’ (খায়রুল মাওয়ায়েজ) হজরত আবু জর (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী করীম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন: ‘যে ব্যক্তি এমন জিনিসের দাবি করে যা প্রকৃতপক্ষে তার নয়, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়। তার ঠিকানা দোজখে তালাশ করতে হবে।’ (খায়রুল মাওয়ায়েজ)। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমরা যদি কোনো লোককে কোনো কাজের জন্য নিযুক্ত করি এবং সেই কাজের বিনিময়ে তাকে বেতন দান করি, অতঃপর সে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে, তা ‘খেয়ানত’ বা আত্মসাৎ বলে গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ)

ইনসাফ ও ন্যায়ের এরূপ দৃষ্টান্ত কোথাও পাওয়া কঠিন। একমাত্র ইসলাম ধর্মেই উচ্চ নৈতিকতাবোধ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার এই মহান শিক্ষা পাওয়া যায়। বস্তুত কোনো জাতি বা ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত রাজত্ব বা শাসনকার্যের কোনো পদের অধিকারী এবং যোগ্য হতে পারে না, যতক্ষণ না সে ন্যায়-ইনসাফের গুণে গুণান্বিত হবে। ঘুষখোরের মধ্যে হতে এই গুণ আস্তে আস্তে লোপ পেতে থাকে। অতঃপর সে জুলুম-অত্যাচার আরম্ভ করে দেয় এবং তার অন্তর হতে আল্লাহর ভয়ভীতি দূর হয়ে যায়।

দেশ ও জাতির কল্যাণ স্বার্থের সে কোনোই পরওয়া করে না এবং লোভ-লালসায় মত্ত হয়ে সে প্রকারান্তরে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নস্যাৎ করার কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। সুতরাং সমগ্র জাতির একান্ত কর্তব্য হবে ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ করা এবং ধ্বংসাত্মক অপরাধের মূলোৎপাটনের ব্যাপারে একে অপরের সাহায্য-সহযোগিতা করা। মহানবী (সা.) বলেছেন; ‘নিজের ভ্রাতার সাহায্য করো, চাই সে অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত।’ সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন: ‘অত্যাচারিতের সাহায্য করার ব্যাপারটি বুঝতে পারা যাচ্ছে, তা সম্ভব। কিন্তু অত্যাচারীকে সাহায্য করার বিষয় বোধগম্য হচ্ছে না, তা কিরূপে সম্ভব?’ হুজুর (সা.) বললেন: ‘জালেম অত্যাচারীকে সাহায্য করার অর্থ হলো, তাকে অত্যাচার-অন্যায় করা হতে বিরত রাখা।’

বিশ^নবী (সা.)-এর এই মহান বাণী হতে শিক্ষা গ্রহণ করে মুসলমানদের উচিত, সকল অন্যায়, অবিচার, শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা এবং ঘুষখোর ও ঘুষদাতাদেরকে এই অপরাধ-অপকর্ম হতে বিরত রেখে জালেম ও মজলুমের সাহায্য করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
বুলবুল আহমেদ ৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:৪৯ এএম says : 0
একদম ঠিক কথা বলেছেন
Total Reply(0)
নাজিম ৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৩১ এএম says : 0
সমগ্র জাতির একান্ত কর্তব্য হবে ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ করা এবং ধ্বংসাত্মক অপরাধের মূলোৎপাটনের ব্যাপারে একে অপরের সাহায্য-সহযোগিতা করা।
Total Reply(0)
তাজউদ্দীন আহমদ ৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৪৩ এএম says : 0
প্রথমে আমাদের নিজেদেরকে দুর্নীতি অনিয়ম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তারপরে অপরকে বলতে হবে। এভাবেই সামাজ থেকে এগুলো দূর হবে।
Total Reply(0)
জাহিদ ৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৪৪ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে দুর্নীতি অনিয়ম থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুক
Total Reply(0)
হাবীব ৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৪৪ এএম says : 0
লেখাটির জন্য খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী সাহেবকে ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Nurul Korim ৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৪১ পিএম says : 0
Masallah
Total Reply(0)
Jack Ali ১২ ডিসেম্বর, ২০২০, ৬:৫১ পিএম says : 0
Our Government is .................. they are terrorizing us, torturing us, looting our hard earned money, every where you need to give bribe, Government supporter is raping, Chadabaz..........
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন