কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ করছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ মিছিল করে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যারা ভেঙেছে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধীতাকারীদের বাংলার মাটিয়ে প্রতিহত করা হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়।
রাজধানী জুড়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, মৎসজীবি লীগ, শ্রমিকলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ, ফার্মগেটে ঢাকা উত্তর যুবলীগ, উত্তরায় ঢাকা-১৮ আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। রাজধানীর প্রত্যেকটি থানা ওয়ার্ডে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা-১৮ আসন আওয়ামী লীগ। বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসান বলেন, ভাস্কর্যের বিরোধীতার নামে মৌলবাদী শক্তি বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার বিরোধীতা করছে। ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যাওয়ার চক্রান্ত করছে। এই মৌলবাদীরা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। এদের প্রতিহত করা হবে।
বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, এসএম মাহবুব, ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফছার উদ্দিন খান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য রবিউল ইসলাম রবি প্রমুখ। এছাড়া রাজধানীর বনানী, মিরপুর, গাবতলীতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মৌলবাদীদের প্রতিহত করবে যুবলীগ : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বিক্ষোভ করেছে যুবলীগ। এ সময় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেন, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া, বাংলার মাটিতে মৌলবাদীদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহত করবে যুবলীগ। ভাস্কর্যের বিরোধীতার নামে এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভ্রমত্ব ও বঙ্গবন্ধুর উপর হাত দিয়েছে। মৌলবাদীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।
উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার তৌফিক, এনআই আহমেদ সৈকত, আলামিনুল হক আলামিন, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু প্রমুখ।
ফার্মগেটে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের বিক্ষোভে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে বিক্ষোভে আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, দফতর সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে ও হেফাজতের কথিত মাওলানা মামুনুল হক ও বাবুনগরী গং দের বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। তিনি বলেন স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু, ৭৫’র ও ২১ শে আগষ্টের খুনীচক্র একইসূত্রে গাঁথা। তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা উচ্ছেদের হুমকি দিয়ে যে সীমাহীন ধৃষ্টতা ও আস্ফালন দেখাচ্ছে এটা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, বাংলাদেশ কিভাবে চলবে সেটা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে নির্ধারিত হয়। এটা মিমাংসিত ইস্যু। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর স্বাধীনতার পরাজিত শত্রæরা পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুর ও সংবিধানের অন্যতম মূলমন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে ভ্রান্ত ফতোয়া দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তাদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে প্রতিরোধ করা হবে।
এসময় আরো উপস্থিত, সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ সভাপতি মজিবুর রহমান স্বপন, ফারুক আমজাদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বিটু, দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ, গ্রন্থণা ও প্রকাশনা সম্পাদক কেএম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল প্রমুখ।
ছাত্রলীগ প্রতিবাদ করবে না, প্রতিরোধ করবে
ভাস্কর্য ভাংচুর ও অবমাননার ঘটনায় এখন থেকে আর প্রতিবাদ নয় বরং প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে এ ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের নেতারা।
ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, যারা বাংলাদেশকে স্বীকার করেনি, রাতের অন্ধকারে ওই পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা যেমন করে বাংলাদেশে হানা দিয়েছিল, সেই পাকিস্তানি বাবাদের কথা শুনে যারা জাতির পিতার ভাস্কর্যকে অবমাননা করেছে, সেই কুলাঙ্গারদের যেখানে পাবেন তাদেরকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দেয়ার আগে এদের গণপিটুনি দিয়ে হাত-পা ভেঙে দেবেন। তারপর পাকিস্তান পাঠিয়ে দেবেন। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তোরা রাতের অন্ধকারে আসিস না, বাবুরা। তোরা দিনে আয়। সামনে এসে কথা বল। আমি একা তোদের মোকাবিলা করবো। আমি আল নাহিয়ান খান জয় একাই একশো।
সমাবেশে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আপনারা কথায় কথায় হুঁমকি দেন। আপনারা বলেন, এদেশে নব্বই ভাগ মুসলমানদের দেশ। কিন্তু নব্বই ভাগ মুসলমানের নিরানব্বই ভাগই আপনাদের বিরোধিতা করে। আপনাদের এই ধরনের কর্মকান্ডের অবজ্ঞা করে। তাহলে এই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, পিটুনি দেন সব ঠিক হয়ে যাবে। ২০১৩ সালের ৫-৬ মে হুজুরদের ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছিল, তখন মাথা ঠিক হয়েছিল। এখন মাথা আবার নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবারও ট্যাবলেট খাওয়ানোর সময় হয়ে গেছে।
প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। রোববার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শহরের শহীদ মিনারের সামনে থেকে এক প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের গুরত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পূণরায় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এরআগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম এমপি।
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, মানবন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে যুবলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাছুমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তার এলাকা প্রদক্ষিণ করেন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগ। সকালে উপজেলা আওয়ামীলীগের আয়োজনে তাড়াশ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ গেট শুরু হয়ে পৌর শহরের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হক, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক রজত ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুর রহমান লাবু, প্রমূখ।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের উলিপুরে অধ্যাপক এম.এ মতিন এমপি’র নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও কৃষকলীগ। দুপুরে শহীদ মিনার চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র গবা মোড়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম.এ মতিন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কবির উদ্দিন সরকার, প্রমুখ।
বড়াইগ্রাম (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা ও বনপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বনপাড়া পৌর গেটের সামনে আয়োজিত সমাবেশে মেয়র কেএম জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন