আমরা মুসলিম। আল্লাহ তাআলার অপার করুণা, আমাদের তিনি মুসলিম হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছেন। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আমরা তাঁর শোকর আদায় করি- আলহামদুলিল্লাহ।
কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে- ওই ব্যক্তির চেয়ে ভালো কথা আর কার, যে আল্লাহর দিকে ডাকে এবং ভালো কাজ করে, আর বলে, নিশ্চয়ই আমি মুসলিমদের একজন। (সূরা ফুসসিলাত : ৩৩)। মুসলিম অর্থ, আনুগত্য স্বীকারকারী। যে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য স্বীকার করে, তাঁর দ্বীন ও শরীয়তকে সমর্পিতচিত্তে গ্রহণ করে সে মুসলিম। তাই মুসলিম নামটি হচ্ছে আদর্শভিত্তিক নাম।
এ আদর্শ এসেছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে, সকল মানুষের জন্য। সব যুগের, সব দেশের সব শ্রেণির মানুষের জন্য। ইসলাম কবুলের ক্ষেত্রে যেমন জবরদস্তি নেই তেমনি কোনো বাধাও নেই। যে-ই ইচ্ছে করবে ইসলাম কবুল করতে পারবে। আর যে-ই ইসলাম কবুল করবে তার জন্যেই আছে ইসলামের জ্ঞান-অর্জনের এবং নিজ কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ। আল্লাহর কালাম আল-কোরআন সবার জন্য। সবার আছে আল কোরআন পড়ার ও বোঝার সুযোগ। আছে হাদিস-সুন্নাহ, ফিকহ পড়ার ও জানার সুযোগ। আমলে সালিহের সুযোগ। এককথায়, জ্ঞান ও কর্ম সকল ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার, আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করার ও চিরস্থায়ী শান্তির জান্নাত লাভের সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত।
এই সুযোগ ও সৌভাগ্য ইসলাম মুসলমানের বিশেষ কোনো বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেনি। আসলে ইসলামে তো বর্ণবাদ ও বর্ণভেদ বলতে কিছুই নেই; বরং ইসলামের বিধানেই আছে এর সবচেয়ে জোরাল ও কার্যকর প্রতিরোধ। জ্ঞান অর্জনের ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ উন্মুক্ত করে ইসলাম একে যুক্ত করেছে ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মের সাথে। যে-ই ইসলাম কবুল করবে এবং চেষ্টা-প্রচেষ্টা করবে সৌভাগ্য তার জন্য। কোরআন মাজিদের ইরশাদ : মোমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে নিশ্চয়ই তাকে আমি দান করব পবিত্র জীবন এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল : ৯৭)।
কাজেই ইসলাম সা¤প্রদায়িকতার নাম নয়, এক উন্মুক্ত আদর্শের নাম। ‘মুসলিম’ও কোনো সা¤প্রদায়িক পরিচয় নয়, আদর্শিক পরিচয়। যে আদর্শ আল্লাহপ্রদত্ত এবং যা মানবীয় দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাজাত সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত। তাই মুসলিম পরিচয় এর পরিচয়বাহীকে ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার চেতনা দান করে না, উদারতা ও ন্যায়নিষ্ঠার চেতনা দান করে।
‘মুসলিম’ পরিচয় মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়, সে মুক্ত-স্বাধীন নয়; আল্লাহর বিধানের অধীন। তাই তার স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ নেই। সে প্রবৃত্তির দাস নয়, আল্লাহর বান্দা। তাই তার অনাচার-পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ও লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। আল্লাহর আনুগত্যের শৃঙ্খলে তার হাত বাঁধা। তাই কোনো মানুষের প্রতি- সে যে ধর্মেরই হোক, যে শ্রেণি-পেশারই হোক, জুলুম-অত্যাচারের হাত বাড়ানোর তার সুযোগ নেই। কথা ও কাজ সকল ক্ষেত্রে মুসলিম এমন এক নীতি-আদর্শের অধীন, যা সর্বকালীন, সার্বজনীন, যথার্থ ও ন্যায়সঙ্গত। যা গোটা সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার বিধান, গোটা সৃষ্টি জগৎ যাঁর বিধানের অধীন। চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র, আকাশ-পৃথিবী, নদী-সাগর যাঁর আজ্ঞাবহ। পার্থক্য এই যে, প্রকৃতির সবকিছুর জন্য তাঁর প্রাকৃতিক বিধান আর মানুষের জন্য প্রাকৃতিক বিধানও, করণীয়-বর্জনীয়ের বিধানও। তাই মুসলিম পরিচয় মানুষকে সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণে ব্রতী হতে বলে, উদ্ধত-অত্যাচারী হওয়া থেকে নিবৃত্ত করে। বলাবাহুল্য যে, সুস্থ সমাজ ও সুন্দর জীবনের জন্য এর বিকল্প নেই। আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের শান্তি ও কল্যাণের জন্যই প্রয়োজন আমাদের মুসলিম-পরিচয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
যাই হোক, আমরা মুসলিম এবং বাঙালী মুসলিম। এ-ই আমাদের পরিচয়। আমাদের এ পরিচয়টুকুও যে কত মূল্যবান তার প্রোজ্জ্বল প্রমাণ বর্তমান সময়ের ধর্মবিদ্বেষী ও জাতিবিদ্বেষী নানামুখী প্রচার-প্রচারণা। আমাদের কর্তব্য এ পরিচয় হৃদয় ও বিশ্বাসে সযতেœ লালন করা। জীবন ও কর্মে তার যথার্থ প্রতিফলনে প্রয়াসী হওয়া। এতেই কল্যাণ আমাদের, কল্যাণ দেশ, জাতি ও সমাজেরও। আমাদের ফিরে আসতে হবে আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার দুয়ারেই। তিনিই আমাদের মাওলা, আমাদের অভিভাবক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন