আমাদের দৈনন্দিন জীবন চলার পথে যে সকল কাজকে সৎকর্ম বা ভালো কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, তন্মধ্যে উপহার প্রদান কর্মটি একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। উপহারের মাধ্যমে পরস্পর হৃদ্যতা, আন্তরিকতা, ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার যোগসূত্র দৃঢ় হতে দৃঢ়তর হয়ে উঠে এবং ব্যক্তি জীবন হতে শুরু করে, পারিবারিক, সামাজিক, দেশ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র এর শুভফলের ফলগুধারা অবিরাম বইতে থাকে। এতে করে একজন মানুষ অন্যজনের অত্যন্ত কাছে চলে যাওয়ার সুযোগ লাভে ধন্য হয়, কৃতার্থ হয়।
উপহার প্রদান কর্মটি এমন একটি সেতুবন্ধন রচনা করে যা কোনোক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় না। জীবন পথের প্রতিটি বাঁকেবাঁকে এর রেশ কোনো না কোনোভাবে অটুট থাকে। বস্তুত : উপহার বলতে এমন কিছু সৌজন্য সুলভ দানকে বুঝায় যার মাঝে বিনিময় লাভের প্রত্যাশা থাকে না। যে দান নিলোর্ভ, নির্মোহ ও সদিচ্ছার প্রতীক, তাকেই উপহার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। আল কোরআনে উপহার বুঝাতে ‘হাদিয়া’ শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। ইরশাদ হয়েছে: (ক) ‘বিলকিস বললেন, আমি উপহার ও উপঢৌকনসহ সুলায়মানের দরবারে দূত প্রেরণ করব, এবং লক্ষ্য করব, তারা কি উত্তর নিয়ে ফিরে আসে’। (সূরা আন্ নামল : আয়াত ৩৫)। এই আয়াতে কারীমায় উপহার অর্থে ‘হাদিয়াতুল শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
(খ) (দূতগণ যখন উপঢৌকনসহ নবী ও বাদশাহ সুলায়মানের দরবারে উপস্থিত হন) ‘তখন সুলায়মান বললেন, তোমরা কি ধন-সম্পদ দ্বারা আমাকে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহপাক আমাকে যা দিয়েছেন তা’ তোমাদের প্রদত্ত উপহার হতে শ্রেষ্ঠ, বরং তোমরা তোমাদের উপহারে সন্তুষ্ট থাক’। (সূরা আন্ নামল : আয়াত ৩৬)। এই আয়াতে কারীমায়ও উপহার বুঝাতে ‘হাদিয়াতুল’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
উপহার বুঝাতে ‘হাদিয়াতুন’ শব্দটির ব্যবহার হাদীস শরীফেও লক্ষ্য করা যায়। হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিয়া বা উপহার গ্রহণ করতেন এবং প্রত্যুত্তরে তার প্রতিদানও দিতেন। (সহীহ বুখারী শরীফ-৩/২৫৮৫)।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যেদুল মুরসালীন মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলতেন : ‘হে মুসলিম মহিলাগণ! কোনো প্রতিবেশী মহিলা যেন তার অপর প্রতিবেশী মহিলাকে (হাদিয়া ফেরত দিয়ে) হেয় প্রতিপন্ন না করে। চাই তা’ ছাগলের পায়ের ক্ষুরই হোক না কেন। (সহীহ বুখারী শরীফ-৮/৬০১৭)।
হাদিয়া বা উপহার আদান-প্রদান কর্মটি উত্তম কর্ম বলে আল কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত উম্মে সালমা (রা.) পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আবেদন করেছিলেন যে, আল কোরআনে মোহাজের মহিলাদের ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়নি। প্রত্যুত্তরে আল্লাহপাক এই আয়াত নাযিল করেন।
ইরশাদ হয়েছে : ‘তখন তাদের প্রতিপালক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন, তোমাদের মধ্যে পুরুষ হোক কিংবা নারীই হোক, কোনো কর্মীরই কর্মফল আমি বিনষ্ট করি না, তোমরা একে অপরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। সুতরাং যারা হিজরত করবে এবং গৃহ হতে বিতাড়িত হবে ও আমার পথে নির্যাতিত হবে। যুদ্ধ করবে ও নিহত হবে, নিশ্চয়ই আমি তাদের গোনাহসমূহ দূর করে দেব এবং তাদেরকে এমন জান্নাতে দাখিল করব, যার নিচ দিয়ে নদ-নদী প্রবাহিত, আল্লাহর নিকট হতে পুরস্কার হিসেবে; আর আল্লাহর নিকটেই আছে উত্তম বিনিময়’। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৯৫)।
এই আয়াতে কারীমায় স্পষ্টতঃই ঘোষণা করা হয়েছে যে, কোনো কর্মীর কর্মফল আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বিনষ্ট করেন না। উপহার প্রদান একটি উত্তম কর্ম। এর শুভফলও সুদূর প্রসারী, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন