মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ

মাওলানা জুবায়ের আহমাদ আশরাফ | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর ইবাদত ও আনুগত্য করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইবাদত-বন্দেগি ও দৈনন্দিন জীবন সঠিকভাবে নির্বাহ করার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূলের মাধ্যমে আমাদেরকে পথ-নির্দেশ দান করেছেন। যারা আল্লাহ প্রদত্ত এ নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে নিজেদের জীবন পরিচালিত করবে তাদের জন্য মহা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

তারাই প্রকৃত সফলকাম। তাদের জন্য রয়েছে শান্তিময় অনন্ত জীবন। সে জীবনে আরাম-আয়েশ ও বিলাশিতার সব উপকরণ অপরিমিতভাবে আপন অধিকারে থাকবে। সর্বোপরি তাদের প্রতি ঝরে পড়বে মহান রবের স্থায়ী সন্তুষ্টি। অপরদিকে যারা আল্লাহপ্রদত্ত নির্দেশনা ঔদ্ধত্য প্রদর্শনপূর্বক স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে লঙ্ঘন করবে, তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ক্রোধের পাত্রে পরিণত হবে। তারা আল্লাহ পাকের বিচারে অপরাধী সাব্যস্ত হবে। যেকোনো অপরাধী তার বিপথগামিতার কথা অনুধাবন করতে পেরে যদি সঠিক পথে ফিরে আসে, তবে আল্লাহপাক তাকেও সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। মনে রাখতে হবে, মৃত্যুর পর দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করে অপরাধীদের অনুতপ্ত বা তওবা করার দ্বারা কোনো ফলোদয় হবে না। সে কঠিন মুহূর্তের আফসোস ও হাহুতাশ নিষ্ফল আর্তনাদে পরিণত হবে।

অপরাধীরা মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ে পুনরায় জীবিত হয়ে হাশরের ময়দানে উঠবে অতিশয় ঘৃণিত ও অপমানজনক অবস্থায়। তারা পা দ্বারা চলার পরিবর্তে মুখ দিয়ে ভর দিয়ে অস্বাভাবিক অবস্থায় আসবে। (মিশকাত শরীফ ২/৪৮৪)। প্রথমত তাদের দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও বাকশক্তি কিছুই থাকবে না। বাকশক্তি পাওয়ার পর তারা বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলে? আমি তো পৃথিবীতে ছিলাম চক্ষুষ্মান।’ (সূরা ত্বহা ১২৫)।

আল্লাহ পাক তখন বলবেন, আমার নির্দেশাবলি দুনিয়ায় তোমার নিকট এসেছিল। তুমি সেগুলো বর্জন করেছিলে এবং ভুলে গিয়েছিলে, সেভাবে আজ তোমার সাথে বিস্মৃতির আচরণ করা হলো, তোমাকে দৃষ্টিশক্তি রহিত করে উত্থিত করা হলো।

হাশরের ময়দানে অপরাধীরা থাকবে ভীত-সন্ত্রস্ত। ভয়-বিহবলতায় তাদের চক্ষুদ্বয় হবে নীলবর্ণ, দৃষ্টি হবে নিষ্পলক, চেহারা বিবর্ণ, ফ্যাকাশে ও গ্লাণিময় আচ্ছন্ন এবং হৃদয় আশাশূন্য। এহেন দুর্বিষহ অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা পুনর্বার পৃথিবীতে চলে আসার প্রার্থনা করবে। যা আদৌ সম্ভব নয়। তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ও শ্রবণ করলাম, এখন তুমি আমাদেরকে পুনরায় পৃথিবীতে প্রেরণ কর, আমরা সৎকর্ম করব, নিশ্চয় আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী।’ (সূরা সাজদা ১২)।

আল্লাহ পাকের নিষিদ্ধ কাজ করা এবং যে কাজ গুরুত্বের সাথে আদেশ করা হয়েছে তা না করাই অপরাধ। এসব অপরাধের বহু শ্রেণি ও প্রকার রয়েছে। স্থান, কাল ও পাত্রভেদেও অপরাধের তারতম্য হয়। এর মধ্যে সর্ববিচারে সর্বাধিক নিকৃষ্ট ও ভয়াবহ অপরাধ হলো আল্লাহ পাকের সঙ্গে কাউকে শরীক সাব্যস্ত করা। একেই বলা হয় শিরক। আর এ নিকৃষ্টতম অপরাধ যারা করে তাদেরকে বলা হয় মুশরিক। আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘শিরক চরম পর্যায়ের জুলুম।’ (সূরা লুকমান ১৩)। কোরআন মাজীদের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, একমাত্র শিরকই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। সুতরাং যে শিরক করে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট। (সূরা নিসা ১১৬)।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, ‘একবার জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর নিকট জানতে চাইলেন, সবচেয়ে বড় অপরাধ কোনটি? রাসূল সা. তখন বললেন, আল্লাহ পাক যিনি তোমার সৃষ্টিকর্তা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক সাব্যস্ত করা।’ (মিশকাত শরীফ ১/১৬)।

যারা শিরকের ন্যায় ভয়াবহ অপরাধে অপরাধী, তাদেরকে আল্লাহ তাআলা হাশরের ময়দানে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমাদের সেই প্রভুগুলো কোথায়, যেগুলোকে তোমরা আমার শরীক বা অংশীদার দাবি করেছিলে? তারা তখন কাতরকণ্ঠে বলবে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর শপথ! আমরা তো মুশরিক ছিলাম না।’ (সূরা আনআম ২৩)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
বুলবুল আহমেদ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:২২ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে শিরক থেকে হেফাজত করুক
Total Reply(0)
বুলবুল আহমেদ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৬ এএম says : 0
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম হলো গফুর বা ক্ষমাশীল। মহান আল্লাহ তায়ালা চাইলে তার বান্দার সকল গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু কিছু গুনাহ আছে যেগুলো মহান আল্লাহ তায়ালা কখনই মাফ করবেন না, এমন একটি গুনাহ হলো শিরক।
Total Reply(0)
নওরিন ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৮ এএম says : 0
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো বস্তুর কসম করল সে ব্যক্তি অবশ্যই শিরক করল। তাই যাদুমন্ত্র করাও শিরক। যে যে এবাদত মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য নিদিষ্ট ঐগুলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য করলে শিরক হয়।
Total Reply(0)
জুয়েল ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৮ এএম says : 0
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত শিরক সম্বন্ধে অবগত হওয়া এবং তা হতে বেঁচে থাকতে প্রাণপণ চেষ্টা করা।
Total Reply(0)
তকী ইব্রাহীম ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৯ এএম says : 0
পাপ কাজের মধ্যে সবচেয়ে বড় অবাধ্যতা হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শিরক। যা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন