আরবি শিরক শব্দটির অর্থ অংশীদার স্থাপন করা। আরবি পরিভাষা ও ব্যবহারিক অর্থে আল্লাহ তায়ালার যাত (সত্তা) বা তাঁর অনাদী-অনন্ত সিফাতে (গুণাবলীতে) অন্য কাউকে আল্লাহ পাকের শরীক বা অংশীদার স্থাপন করা বা বিশ্বাস করাকে শিরক বলে। শিরকও এক প্রকার কুফর। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) আপনি বলুন : আমি শুধুমাত্র আমার পরওয়ারদিগারকে আহ্বান করি (একমাত্র তারই এবাদত করি) তাঁর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার বা শরীক করি না। (সূরা জ্বিন : আয়াত ২০)। (খ) ইরশাদ হয়েছে : যদি কেউ দুই বা ততোধিক ইলাহতে (উপাস্যে) বিশ্বাসী হয়, তবে তাকে মুশরিক বলা হবে। কেননা, সে আল্লাহর সাথে শরীক বা অংশীদার স্থাপন করেছে। (শারহুল মাকাসিদ : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৬০)।
আল্লাহ তায়ালার সাথে শিরক বা অংশী স্থাপন করা বিভিন্ন প্রকারে হতে পারে। তন্মধ্যে নিম্নলিখিত প্রকারগুলোই প্রধান। যথা : (১) শিরক ফিযযাত। বস্তুত : শিরক ফিযযাত হলো আল্লাহ পাকের যাত ও সত্তায়, আল্লাহ তায়ালার প্রভুত্ব ও খোদায়ীত্বে অন্য কাউকে শরীক করা। যেমন : খৃস্টান জাতি, তারা তিন খোদায় বিশ্বাসী। অগ্নীপুজারী শ্রেণী, তারা দুই খোদায় বিশ্বাসী। মূর্তি ও প্রতীমা পূজারী শ্রেণী, যারা বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসী ইত্যাদি। এসবই শিরক ফিযযাতের অন্তর্ভূক্ত। আল কোরআনে এই দিকনির্দেশনা এভাবে প্রদান করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে : যে বলল, নিশ্চয় মাসীহ ইবনু মারয়ামই আল্লাহ, সে নিশ্চিত শিরক করল। মাসীহ বলেছেন : হে বণী ইসরাঈল! তোমরা আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ পাকের ইবাদত করো। নিশ্চয়ই যে আল্লাহ পাকের সাথে অন্যকে শরীক করবে, অবশ্যই আল্লাহপাক তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন, তার ঠিকানা হবে অগ্নিকুন্ড জাহান্নাম। যারা বলে, আল্লাহ হলেন তিনজনের তৃতীয়জন, তারা অবশ্যই কুফুরী করল। প্রকৃতপক্ষে ইলাহ বা উপাস্য এক ও অদ্বিতীয়, (আল্লাহ ছাড়া) অন্য কোনো উপাস্য নেই। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত ৭২-৭৩)।
(২) শিরক ফিসসিফাত : শিরক ফিস্সিফাতের অর্থ হলো, মহান আল্লাহর অনাদী-অনন্ত গুণাবলীতে অন্য কাউকে শরীক বা অংশীদার বানানো এবং আল্লাহ পাকের খোদায়ীত্ব ও প্রভুত্বে অন্যকে তাঁর অংশীদার মনে করা এবং একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই নির্ধারিত গুণাবলীতে অন্যকে তাঁর শরীক স্থাপন করা।
(৩) শিরক ফিল ইবাদাত : এর অর্থ হলো-আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে অন্য কাউকে তাঁর অংশীদার স্থাপন করা। বস্তুতঃ আল্লাহপাক স্বীয় বড়ত্ব, মহত্ব প্রকাশের জন্য বান্দাহদের প্রতি যে সকল হুকুম আহকাম বা ফরমান জারি করেছেন, তা’ সবই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। যেমন সালাত আদায় করা, রুকু করা, সিজদাহ করা, বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা, সিয়াম পালন করা, যাকাত আদায় করা, পরিপূর্ণভাবে ঈমান আনয়ন করা ইত্যাদি।
যে ব্যক্তি এ জাতীয় ইবাদত ও কাজে গাইরুল্লাহকে আল্লাহর সাথে শরীক করল, সে ইবাদাতের মধ্যে শিরক করল। সুতরাং গাইরুল্লাহ্র উদ্দেশ্যে সিজদাহ করা, রুকু করা, নামাজের মতো দাঁড়ানো, কোনো কবরে সিজদাহ অবনত হওয়া, কোনো নবী, ওলী বা পীরের নামে রোজা রাখা, এদের নামে পশু যবেহ করা, মান্নত করা, কোনো গৃহ বা কবরকে বাইতুল্লাহ্র মতো তাজীম করতঃ তাওয়াফ করা, গাইরুল্লাহ্র কাছে নিজের প্রয়োজন ও মনোবাসনা পুরণের নিমিত্তে দোয়া করা, মিনতী করা সবাই শিরক।
গাইরুল্লাহকে আল্লাহ তায়ালার মতো আহ্বান করা, এ সবই হল ইবাদতের মধ্যে শিরক করার অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) তোমার পরওয়ারদিগার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে, তোমরা একমাত্র উপাস্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোও ইবাদত করো না। (সূরা বাণী ইসরাঈল : আয়াত ২৩)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে : তারা আল্লাহর সৃষ্টি কৃষিজাত দ্রব্য ও চতুষ্পদ প্রাণী হতে এক অংশ আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করল, আর তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী বলল, এ অংশটি আল্লাহর জন্য আর এ অংশটি আমাদের সাব্যস্তকৃত শরীক উপাস্যদের জন্য। যে অংশ শরীক উপাস্যদের জন্য নির্ধারিত করেছে, তা’ আল্লাহর ভাগে যায় না। আর আল্লাহর জন্য যে অংশ নির্ধারণ করেছে, তা তাদের শরীক উপাস্যদের নিকট পৌঁছে। তাদের এ ফায়সালা ও সিদ্ধান্ত কতই না নিকৃষ্ট। (সূরা আনয়াম : আয়াত ১৩৭)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন