আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাত ‘আল্লামুল গুয়ূব’ অর্থাৎ সকল গুপ্ত ও অদৃশ্য বিষয়াবলি সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। আল-কোরআনে এই বিশেষত্বটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : (ক) আল্লাহ জাল্লা শানুহু সবকিছু সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৮২)। (খ) নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে বিন্দুমাত্র বস্তু ও তাঁর এলেম হতে লুপ্ত নয়। (সূরা সাবা : আয়াত ৩)। (গ) তিনি জানেন, মানুষ যা গোপন করে ও যা প্রকাশ করে। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৮৭ : সূরা আন-নাহল : আয়াত ২৭)।
(ঘ) তাঁরই কাছে সকল গায়েবের ফুঞ্জী, তিনি ছাড়া তা আর কেউ জানে না। (সূরা আনয়াম : আয়াত ৫৯)। (ঙ) তিনি জলভাগ ও স্থল ভাগের সবকিছু জানেন। বৃক্ষ হতে যে পল্লব ঝরে, তিনি তা জানেন। যে শষ্যকণা মৃত্তিকার গভীর অন্ধকারে পতিত হয় এবং আর্দ্র ও শুল্ক দ্রব্য যা পতিত হয় এসব কিছু প্রকাশ্য গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। (সূরা আনয়াম : আয়াত ৫৯)।
(চ) তিনি তোমাদেরকে জানেন যখন মৃত্তিকা থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে লুক্কায়িত ছিলে। (সূরা নাজম : আয়াত ৩২)। (ছ) আল্লাহ তায়ালাই জানেন কিয়ামতের সুনির্ধারিত সময়ক্ষণ, আর জানেন কখন বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তিনি জানেন জরায়ূতে যা আছে, কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে, আর কেউ এটাও জানে না যে, সে কোন্ ভূখন্ডে মৃত্যুবরণ করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা ও বাখবর। (সূরা লুকমান : আয়াত ৩৪)।
এই আয়াতে কারীমার মর্মার্থ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন : এই আয়াতে উল্লেখিত পাঁচটি বিষয় আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ জানে না। এমন কি আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত কোনো ফেরেশতা ও বাছাইকৃত কোনো বিখ্যাত নবীও জানেন না। সুতরাং উক্ত বিষয়ের কোনো কিছু কেউ দাবি করলে নিশ্চিত সে কোরআনকে অস্বীকার করল। (তাফসীরে খাজেন : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৪৫)।
(জ) স্মরণ রাখা দরকার যে, জরুরি তথা স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞান (এলমে গায়েব) নীতিগত ও বুদ্ধিগত জ্ঞানের আওতা বহির্ভূত। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোও এ ধরনের জ্ঞান (গায়েবের জ্ঞান) নেই বলে আল-কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি ঐ জ্ঞান আছে বলে দাবি করল এবং এই দাবিদারকে যে বিশ্বাস করে মেনে নিলো, তারা উভয়েই কুফুরী করল। (নিবরাস : পৃৃষ্ঠা ৩৪৩)।
(৬) শিরক ফিল কুদরাত : আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাত সামগ্রিক কুদরাতের গুণে গুণান্বিত। তিনি এমন মহান সত্তা যিনি অবাধ ক্ষমতার অধিকারী, তিনি সর্ববিষয়ে মহাক্ষমতাশালী, কোনো কিছুই তাঁর ক্ষমতার ঊর্ধ্বে নয়। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালার ন্যায় এমন কুদরাত ও ক্ষমতা অন্য কারোও আছে বলে বিশ্বাস করাকে শিরক ফিল কুদরাত বলে।
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোনো নবী ও ওলী সন্তান দান করতে পারেন কিংবা বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারেন, অথবা বৃষ্টি বন্ধ করার শক্তি রাখেন, মনোবাসনা পূর্ণ করতে পারেন, ইচ্ছা করলেই ন্যায়-অন্যায় মুকাদ্দমায় নিজ ক্ষমতা বলে জিতিয়ে দিতে পারেন, ধন-সম্পদ ও রুজীতে প্রশস্ততা আনয়ন করতে পারেন, জীবন মরণ তার করতলগত, কারোও কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধন তার ইচ্ছাধীন, ইত্যাদি বিশ্বাস পোষণ করা শিরক ফিল কুদরাতের অন্তর্ভুক্ত। এই বিষয়টি আল-কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে।
(ক) ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই তোমরা আল্লাহকে ছাড়া অন্য যাদেরকে অর্চনা কর, তারা সকলে একত্রিত হয়ে চেষ্টা করলেও একটা মশা-মাছি পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারবে না। (সূরা হাজ্জ : আয়াত ৭৩)। (খ) হে নবী! আপনি বলুন : আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদেরকে রব মনে করে তোমরা অর্চনা কর, আসমান ও যমিনে তারা বিন্দুমাত্র ক্ষমতা ও অধিপত্য রাখে না, আসমান ও যমিনে তার কোনো শরীক নেই, আর আল্লাহর বিপক্ষে তার কোনো সাহায্যকারী নেই। (সূরা সাবা : আয়াত ৭২)।
(গ) আসমান যমিনের প্রভুত্ব একমাত্র আল্লাহর তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাদান করেন আর যাকে ইচ্ছা পুত্রদান করেন। অথবা যাকে ইচ্ছা পুত্র-কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। অবশ্যই তিনি সর্বজ্ঞ সর্ব বিষয়োপরী ক্ষমতাবান। (সূরা শূরা : আয়াত ৪৯-৫০)। (ঘ) যদি আল্লাহ তোমার কোনো অনিষ্ট করতে চান তবে তিনি ব্যতীত কেউ তাহতে উদ্ধারকারী নেই, যদি তোমার ব্যাপারে তিনি কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তবে আল্লাহর দয়াকে কেউ ফিরিয়ে দিতেও পারবে না। (সূরা ইউনুস : আয়াত ১০৭)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন