মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শিরকও এক প্রকার কুফর-০৪

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

আল্লাহ জাল্লা শানুহু সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা। তিনি সব কিছু দেখেন এবং সব কিছু শোনেন। আল কোরআনে আল্লাহপাকের গুণবাচক নাম ‘বাছিরুন’ সর্বদ্রষ্টা ৪১ বার এসেছে। আর তাঁর গুণবাচক নাম ‘ছামিউন’ সর্বশ্রোতা এসেছে ৪২ বার। আর এ দুটি নাম এক সাথে ‘ছামিউম বাছীর’ রূপে এসেছে ১১ বার। এতে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহপাক এক বিশেষ পদ্ধতিতে দেখেন ও শোনেন। তাঁর দেখা ও শোনা সৃষ্টিকুলের দর্শন ও শ্রবণের মতো নয়। কারো সম্পর্কে এরূপ ধারণা করা যে তিনি দূর নিকটের সকল কিছু দেখেন ও সকল কথা শোনেন, আমাদের ভিতর ও বাইরের সকল কাজ ও কথা কর্ণ ও চক্ষুর মাধ্যমে অথবা কর্ণ ও চক্ষু ছাড়া দর্শন ও শ্রবণ করার ক্ষমতা রাখেন ইত্যাদি দর্শন ও শ্রবনের শিরক বলে বিবেচিত হবে। এতদ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামীন কোরআনুল কারীমে সুস্পষ্টভাবে বিবৃতি প্রদান করেছেন।

(ক) ইরশাদ হয়েছে : যদি তোমরা তাদেরকে (তোমাদের ঘোষিত উপাস্যকে) ডাক, প্রথমত : তারা তোমাদের আহ্বান শুনবেই না। (ধরে নাও) যদি তারা শোনেও তবু আহ্বানে সাড়া দিবে না। (সূরা ফাতির : আয়াত ১৪)। (খ) ইরশাদ হয়েছে : আমার বান্দাহগণ যদি আমার অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তবে বলে দাও : আমি অতি নিকটে। যখনই কোনো আহ্বানকারী আমায় আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৬)।

(গ) ইরশাদ হয়েছে : অবশ্যই আল্লাহতায়ালা ঐ মহিলার আক্ষেপ পূর্ণ কথা শুনেছেন যে তার স্বামীর ব্যাপারে আপনার সাথে বাদানুবাদ করেছে, আর আল্লাহর নিকট নিজের দুঃখের অভিযোগ করেছে। আল্লাহ তোমাদের উভয়ের বাদানুবাদ শুনেছেন। আল্লাহ মহান শ্রোতা, মহান দ্রষ্টা। (সূরা মুজাদালাহ : আয়াত ০১)। (ঘ) ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে তারা (মুশরিকগণ) আহ্বান করে, তারা তাদের কোনো কিছুই পুরন করতে পারবে না। তাদের দৃষ্টান্ত এমন, যেমন কেউ দু’হাত পানির দিকে প্রসারিত করে যাতে পানি তার মুখে পৌঁছে যায়, (অথচ পানি তার মুখে মোটেও পৌঁছবেনা)। (সূরা রা’দ : আয়াত ১৪)। (ঙ) ইরশাদ হয়েছে : তোমরা যে অবস্থায় থাক, কোরআন হতে যা তিলাওয়াত করো, আর যা আমল করো, সর্বদাই আমি তোমাদের প্রত্যক্ষ করছি, যখন তোমরা তাতে নিমগ্ন হও। (সূরা ইউনুস : আয়াত ৬১)।

উল্লেখিত পাঁচটি আয়াতের অর্থ ও মর্মের প্রতি দৃষ্টি রেখে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মোহাদ্দেসে দেহলভী (রহ:) বলেন : শিরকের মূল কথা হলো এই যে, কোনো বুযুর্গ বা মহৎ ব্যক্তি সম্পর্কে এরূপ বিশ্বাস রাখা যে, যখন তার থেকে অপূর্ব আশ্চর্যজনক কোনো ক্রিয়া কলাপ সংঘটিত হয়, যা মানুষ থেকে প্রকাশ পাওয়ার কথা নয় বরং তা একমাত্র আল্লাহপাকের জন্য নির্ধারিত তবে তখন বলে : উক্ত বুযুর্গ ব্যক্তি সিফাতে কামালের গুণে (আল্লাহর পরিপূর্ণ গুণে) গুণান্বিত হওয়ার কারণেই তার দ্বারা এরূপ কাজ সম্ভব হয়েছে।

কেননা, কাজটি এমন, যা কোনো মানব সন্তান করতে পারে না। বরং তা আল্লাহপাকের জন্য নির্ধারিত। তবে হ্যাঁ, যদি আল্লাহপাক কাউকে উলুহিয়্যাতের (প্রভুত্বের) ভূষণ দান করেন বা কেউ যদি আল্লাহপাকের সত্তা করেন বা কেউ যদি আল্লাহপাকের সত্তা ও শক্তি হতে মুখাপেক্ষীহীন হয়ে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে যায়, তখন ঐ জাতীয় কাজটি প্রকাশ পেতে পারে। কারোও এ ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস ও অলীক ধারণাই হলো শিরক। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪৪)।

তবে মোদ্দা কথা হচ্ছে এই যে, পরম মহিমাময় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত শিরকের গোনাহ কখনোও ক্ষমা করবেন না। অন্যান্য গোনাহ ও অপরাধ তিনি মার্জনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু শিরকের গোনাহ ক্ষমা না করার ঘোষণা তিনি কোরআনুল কারীমে দ্ব্যর্থহীনভাবে বিবৃত করেছেন। যথা : (ক) ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা শিরকের গোনাহ ক্ষমা করেন না। অন্য যে কোনো গোনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। (সূরা নিসা: আয়াত ৪৮, ১১৬)।

(খ) ইরশাদ হয়েছে : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করে অবশ্যই মহান আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করেছেন। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত ৭২)। (গ) ইরশাদ হয়েছে : আহলে কিতাব (ইয়াহুদী নাসারা) ও মুশরিকদের মধ্যহতে যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে, তারা চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। (সূরা বায়্যিনাহ: আয়াত ৬)। আল্লাহপাক আমাদেরকে শিরক মুক্ত জীবন যাপনের তাওফীক এনায়েত করুন, এটাই আজকের একমাত্র কামনা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মারিয়া ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৬ এএম says : 0
শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ
Total Reply(0)
তুষার ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৭ এএম says : 0
কোরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, একমাত্র শিরকই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। সুতরাং যে শিরক করে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট। (সূরা নিসা ১১৬)।
Total Reply(0)
নাজিম ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক জায়গায় বারবার শিরক করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। শিরককে বড় জুলুম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
Total Reply(0)
হেদায়েতুর রহমান ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৮ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ছোট-বড় সকল প্রকার শিরক হতে রক্ষা করুন, আল্লাহুম্মা আমীন।
Total Reply(0)
পায়েল ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১০ এএম says : 0
অন্যের নির্দেশকে আল্লাহর নির্দেশের সমকক্ষ ও সমপর্যায়ের একীন বিশ্বাস করা এবং তা পালন ও মান্য করা এসবই শিরক ফিল হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন