মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

উগ্র আচরণ : মুসলমান ও খ্রিষ্টান

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

কিছুদিন আগে মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী দেশ আজারবাইজান তার হারানো বিশাল একটি অঞ্চল আবার যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করে। প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে জ্বালানীতে ভরপুর আজারবাইজান অতীতযুগে বহু মুসলিম মনীষির জন্মস্থান। মুসলিম মধ্য এশিয়ার এ দেশটি ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সময় কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে চলে যায়। এরপর প্রায় ৭৫ বছর পর আফগান মুজাহিদদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন দেউলিয়া ও খন্ড বিখন্ড হয়ে গেলে অন্য সাতটি মুসলিম দেশের মতো আজারবাইজানও স্বাধীন হয়।

ইউরোপের উগ্র খ্রিষ্টানরা আবার গত ২৮ বছর আগে আজারবাইজানের বিশাল এক অঞ্চল নতুন দখল করে নেয়। আর্মেনিয়া এ কাজটি করে। ওরা যখন আজারবাইজান প্রবেশ করে তখন সীমান্ত এলাকার আজারি মুসলমানরা নিজেদের ঘর-বাড়ি, সহায়-সম্পদ ফেলে রেখে শুধু প্রাণটি নিয়ে দেশের গভীর অংশে প্রবেশ করতে পারে। হতাহতের পরিমাণও ছিল উদ্বেগজনক। যে দৃশ্যটি মিয়ানমারের বর্বর সেনাদের হাতে অত্যাচারিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের বেলায় বিশ্ব মিডিয়া তুলে ধরেছে। গোটা মানবজাতি এর স্বাক্ষী।

শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মুসলমানরা নিজ দেশের অপর প্রান্তে আশ্রয় নেয়। পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় তাদের ওই দীর্ঘ পথ। আবাল বৃদ্ধা বনিতা, আহত ও রোগি সবারই একই দশা। কোনো দুর্বল অসহায় মানুষ গরুর পিঠে করেও আসতে বাধ্য হয়।

চলতি বছরের শেষ দিকে তুরস্কের সহায়তায় সামরিক ও কুটনৈতিক যুদ্ধে জয়ী হয় আজারবাইজান। মিডিয়া আগের ছবি ছাপে। অসহায় মুসলমানদের পালিয়ে আসার ছবি। পাশাপাশি ২৮ বছর পর দখল আর্মেনীয়দের অন্যের দেশ ছেড়ে নিজ দেশ আর্মেনীয়ায় ফিরে যাওয়ার ছবি। এবারকার ছবিতে দেখা যায় মিনি ট্রাক, পিকাপ-ভ্যান বোঝাই করে নিজেদের আসবাবপত্র, রুম, কিচেন ও টয়লেটের ফিটিংস পর্যন্ত খুলে নিয়ে যেতে। যাত্রীরা সবাই যানবাহন ব্যবহার করে দখলকৃত এলাকা ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে যায়। যাওয়ার সময় তারা নিজেদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে যায়, যেন পরে আজারি মুসলমানরা এসব ব্যবহার করতে না পারে।

মজলুম মুসলমান ও দখলদার খৃষ্টানদের আচরণের পার্থক্যটি মিডিয়ার কল্যাণে বিশ্ববাসী এবার দেখেছে। এ দৃশ্য ইতিহাসে নতুন নয়। হযরত ওমর রা. যখন জেরুজালেম জয় করেন তখন খ্রিষ্টান অধিবাসীদের সেখানে নিরাপত্তা দেয়া হয়। যারা অন্য কোথাও চলে যেতে আগ্রহী তাদের বলা হয় নিজের প্রয়োজনীয় সম্পদ ও আসবাবপত্র সাথে নিয়ে যেতে।

এরপর আবার যখন সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী বায়তুল মোকাদ্দাস জয় করেন, তখনও খ্রিষ্টান অধিবাসীদের এমন অনুমতি দেয়া হয়। কোনো রক্তপাত হয়নি। কিন্তু ক্রুসেডার খ্রিষ্টানরা আবার যখন জেরুজালেম দখল করে তখন মুসলমানদের এমনভাবে হত্যা করে যে, বায়তুল মোকাদ্দাস এরিয়ায় তাদের ঘোড়া বুক পর্যন্ত রক্তে ডুবে যায়।

গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী তার প্রতিপক্ষের সেনাপতি রিচার্ড মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে মানবিক বিবেচনায় নিজের চিকিৎসকদল তার শিবিরে পাঠান। একদিন রিচার্ডকে দেখতে ও তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকদের দিকনির্দেশনা দিতে নিজেই ডাক্তার ছদ্মবেশে রিচার্ডের শিবিরে যান। পরে একথা ফাস হয়ে গেলে খ্রিষ্টজগতে সুলতান আইয়ুবীর ইমেজ আকাশচুম্বী হয়ে উঠে।

ঠিক এর ক’বছর পর খ্রিষ্টানরা আবার সাময়িকভাবে জেরুজালেম দখল করে। তখনকার খ্রিষ্টান সেনাপতি সিরিয়ায় এসে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর কবরে পদাঘাত করে বলে, সালাদিন উঠো। আমরা আবার ফিরে এসেছি। এই হলো মুসলিম ও উগ্র খ্রিষ্টানদের আচরণ এবং মানবিকতার বিপরীতচিত্র। আল্লাহ যার অন্তরে ঈমান দিয়েছেন তার অন্তরে দয়া ও মানবিক অনুভূতিও দিয়েছেন। অমুসলিমের অন্তর মানবিক গুণাবলি, দয়া ও উদারতা থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এটিও আল্লাহর একটি গজব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Moniruzzaman Sikder ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫১ এএম says : 0
তথ্যভিত্তিক ও যৌক্তিক একটি লেখা
Total Reply(0)
নয়ন ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫২ এএম says : 0
অত্যান্ত সময় উপযোগী এই লেখাটির জন্য অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
জুয়েল ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫৪ এএম says : 0
আল্লাহ যার অন্তরে ঈমান দিয়েছেন তার অন্তরে দয়া ও মানবিক অনুভূতিও দিয়েছেন।
Total Reply(0)
হুমায়ূন কবির ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫৪ এএম says : 0
যারা ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করে তাদের এই লেখাটা পড়া উচিত
Total Reply(0)
Mominul Hoque ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯:৩৫ এএম says : 0
বিশ্ব মিডিয়ায় এমনকি আমাদের দেশেও কিছু মিডিয়া আছে যারা এগুলো চোখে দেখে না। লিখককে অনেক ধন্যবাদ এমন একটি বস্তবতা তুলে ধরার জন্য।
Total Reply(0)
Monjur Rashed ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:২৩ পিএম says : 0
In every age, Crusaders showed cruel behavior like the followers of Yazid in Karbala
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন