জেনে রাখা উচিত যে, আহলে কিবলা বলতে কিবলার দিকে মুখ করে নামাজ আদায়কারীকেই বুঝায় না, বরং আহলে কিবলা বলতে এমন জনগোষ্ঠিকে বুঝায়, যারা জরুরিয়াতে দ্বীনকে মনে প্রাণে স্বীকার করে ও মান্য করে।
কোনো বিষয়ের প্রতি অস্বীকৃতি জানায় না। দ্বীনি বিষয়ের সংঘর্ষমুক্ত অর্থ করে। এই শ্রেণির লোকদের প্রতি কুফর আরোপ করা যাবে না। যদি এমনটি কেউ করে, তবে তা আরোপকারীর ওপরই বর্তাবে। আর দ্বীনি বিষয়ের সংঘর্ষমুক্ত অর্থ-বলতে বুঝায়, দ্বীনি কোনো বিষয়ের এমন ব্যাখ্যা করা, যার দ্বারা জরুরিয়াতে দ্বীন বা দ্বীনের অকাট্য প্রমাণিত ও সর্বজন স্বীকৃত বিষয়ের ওপর আক্রমণ আসে না। এ জাতীয় অর্থকরী ও অর্থ গ্রহণকারীর প্রতি কুফর আরোপ করা যাবে না। কিন্তু যদি অপব্যাখ্যাকারী তার অপব্যাখ্যার মাধ্যমে দ্বীনি অকাট্য প্রমাণিত বিষয়কে অস্বীকার করে ও জোরগলায় তা’ ফলাও করে বলতে ও প্রচার করতে থাকে, তবে তার আহলে কিবলার গন্ডি হতে বের হয়ে কুফরের আওতায় চলে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে যাবে।
এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস করো আর কিছু অংশ অবিশ্বাস করো, তোমাদের মধ্যে যে এ ধরনের আচরণ করবে, সে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা-গঞ্জনায় পতিত হবে, আর কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত হবে। আল্লাহপাক তোমাদের কার্যাবলী হতে উদাসীন নন।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ৮৫)।
নাজরানবাসীদের মুবাহালার ঘটনায় প্রমাণিত বিষয়াবলি মধ্যে একটি বিষয় হলো এই যে, কোনো কাফের যদি মৌখিকভাবে হযরত মোহাম্মাদ (সা:)-এর নাবুওয়াতকে স্বীকার করে তবে এতেই সে ইসলামে প্রবেশ করেছে বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ না সে ইসলামের সার্বিক আহকামকে জরুরিভাবে গ্রহণ করে। (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী : খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ১১৯)।
সুতরাং আহলে কিবলার অন্তর্ভুক্ত কোনো ব্যক্তি যদি জগতের অবিনশ্বরতার ওপর বিশ্বাস রাখে, হাশর নশরের অসম্ভাব্যতার ধারণা পোষণ করে এবং বাহ্যিকভাবে আনুগত্যের ওপর জীবন অতিবাহিত করে, তবে তার কুফরের গন্ডিতে চলে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো মতবিরোধ নেই। অনুরূপভাবে কুফরীর প্রমাণ বহনকারী কোনো বিষয় বা বস্তু তার দ্বারা প্রকাশ পেলে তাকেও ইসলামের সীমানা হতে বহির্ভূত বলে গণ্য করতে হবে। (শারহুল মাকাসিদ : খন্ড-৩, পৃষ্ঠা ৪৬১)।
স্মরণ রাখা দরকার যে, আহলে কিবলা বলতে স্পষ্টত : তাদেরকেই বুঝায়, যারা জরুরিয়াতে দ্বীন অর্থাৎ দ্বীনের অত্যাবশ্যকীয় স্বতঃসিদ্ধ পালনীয় বিষয় যেমন জগতের নশ্বরতা, দৈহিকভাবে পুনরুত্থান, সকল সামগ্রিক বা আংশিক কিংবা বৃহৎ ও ক্ষুদ্র বিষয়সমূহ আল্লাহপাক অবগত আছেন এবং অনুরূপ বিষয়াবলীর সত্যতার ব্যাপারে একমত। সুতরাং যে ব্যক্তি সারা জীবন আনুগত্য ও ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করল, কিন্তু বিশ্বাস করলাম, ইহজগত অবিনশ্বর, বা হাশর অনুষ্ঠিত হবে না, বা আল্লাহপাক সামগ্রিক ও আংশিকভাবে সকল বিষয় অবগত নন, তবে সে আহলুল কিবলা হিসেবে গণ্য হবে না।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে, আহলুল কিবলা কোনো ব্যক্তির ওপর কুফরীর হুকুম আরোপ করা যাবে না এ বাক্যটির অর্থ হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত তার থেকে কোনো কুফরী নির্দশন প্রকাশিত না হবে অথবা কোনো কুফরী বিষয় সংঘটিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার প্রতি কুফরের হুকুম আরোপ করা যাবে না। সুতরাং যদি তার থেকে কুফরীর নিদর্শন প্রকাশ পায়, কিংবা তার দ্বারা কুফরী কর্ম সংঘটিত হয়, তাহলে তার প্রতি কুফরের হুকুম আরোপের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। (শারহু ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ১৫৪)।
যে ব্যক্তি কোরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত শরয়ী বিধিমালা থেকে অনৈসলামিক বিধি মালাকে উত্তম জ্ঞান করে সে ইসলামী গন্ডির বহির্ভূত বলে বিবেচিত হবে। যেমন সে বলে চোরের শাস্তি একমাস বন্দি জীবনযাপন অথবা ব্যভিচারের শাস্তি দশটি বেত্রাঘাত ইসলামের আইন অপেক্ষা অধিকতর যুক্তি সঙ্গত, তবে সে ইসলামী সীমারেখা হতে বের হয়ে যাবে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : যে বা যারা আল্লাহপাকের অবতীর্ণ বিধান মোতাবেক হুকুম করে না তারাই কাফির।’ (সূরা মায়েদাহ : আয়াত ৪৪)। আর ও ইরশাদ হয়েছে : যে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো কিছুকে দ্বীন হিসেবে অন্বেষণ করে, তা’ আদৌ গ্রহণযোগ্য হবে না। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৮৫)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন