মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করতে পারা আলোকিত মানুষের গুণ

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

শান্তি ও সফলতার জীবনলাভে যেসকল গুণ ও বৈশিষ্ট্য গভীর প্রভাবক হয়ে থাকে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্ষমা ও সহনশীলতা।

অন্যের অপরাধ ক্ষমা করতে পারা এবং অপ্রীতিকর বিষয়সমূহ উপেক্ষা করতে পারা। আরবিতে একটি কথা আছে ‘আল আ’ফবু ওয়াসসাফহু’। ‘আল আ’ফবু’ অর্থ অন্যায়ের প্রতিশোধ না নেয়া আর ‘আসসাফহু’ অর্থ অন্যায়কে উপেক্ষা করা। যেন দেখেও না দেখা, শুনেও না শোনা, বুঝেও না বোঝা। আরবি ভাষায় ‘আসসাফহু’-এর সাথে যখন ‘আল জামীল’ বিশেষণটি যুক্ত হয় তখন এর মর্ম দাঁড়ায় ‘সুন্দর উপেক্ষা’। তত্ত¡বিদগণ এর ব্যাখ্যা করেছেন, কারো অন্যায়-অপ্রীতিকর আচরণ এমনভাবে উপেক্ষা করা যে, কষ্ট বা বিরক্তিরও প্রকাশ না ঘটে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এর জন্য অনেক শক্তির প্রয়োজন।

এখানে এই প্রশ্ন আসতে পারে যে, ‘জীবনের সকল ক্ষেত্রে তো অন্যায়-অপরাধ উপেক্ষা করতে থাকা উচিত নয়।’ ঠিক কথা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে যে উচিত তাতে তো সন্দেহ নেই। এখানে সেই ‘অনেক ক্ষেত্রে’র কথাই বলা হচ্ছে। ‘সব ক্ষেত্রের’ কথা বলা হচ্ছে না। কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্যের কাম্যতা নিয়ে যখন আলোচনা করা হয় তখন ‘প্রযোজ্য ক্ষেত্রে’র শর্তটি সাধারণভাবেই মালহূয থাকে। আলাদা করে তা উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না। যাইহোক, আমাদের জীবনের বহু ক্ষেত্র এমন আছে, যেখানে এই গুণ ও বৈশিষ্ট্যের চর্চা আমাদের করতে হয়।

কোরআন মাজীদে এই গুণ অর্জনে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : আর যে সবর করে ও ক্ষমা করে নিশ্চয়ই তা অতি আবশ্যকীয় বিষয়। (সূরা শূরা : ৪৩)। অর্থাৎ ‘সবর’ ও ‘ক্ষমা’ এমন বিষয়, যা অতি কাম্য, যার পুরস্কার অনেক বড়, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে উচ্চাভিলাষী মুমিনের জন্য তা অতি আবশ্যক।

মুমিনের বৈশিষ্ট্য এই হবে যে, মুমিন আখিরাতের বিষয়ে উচ্চাভিলাষী হবে। ব্যক্তিগত দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা এই উচ্চাভিলাষের পথে বাধা হবে না। কারণ, মুমিনের বিশ্বাস, কল্যাণের তাওফীক আল্লাহর পক্ষ হতে আসে। ব্যক্তি শুধু চেষ্টা করতে পারে। চেষ্টার পর ফলাফল আসে আল্লাহর হুকুমে। কাজেই সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করার সামর্থ্য তো মানুষের আছে। সেই চেষ্টার ওপর অচিন্তনীয় ফলাফল দান করা তো আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ। তাই উচ্চতম লক্ষ্য, জান্নাতের উচ্চতম স্থানের প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষায় মুমিন ব্যর্থ হয় না। এককথায়, মুমিনের উচ্চাভিলাষের উপাদান তার নিজস্ব সক্ষমতা নয়, আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহের ভরসা। ইসলামের আকীদাই তাকে আখিরাতের বিষয়ে উচ্চাভিলাষী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে।

তো উচ্চাভিলাষী মুমিনের কর্মও তো উচ্চমানসম্পন্ন হতে হবে। সাধারণ ক্ষেত্রে যা ঐচ্ছিক, উচ্চাভিলাষীর জন্যে তাও আবশ্যকীয়। কারণ তাকে তো এক উন্নত লক্ষ্যে উপনীত হতেই হবে। আমরা যে বৈশিষ্ট্যটি নিয়ে আলোচনা করছি, অর্থাৎ অন্যায়কে উপেক্ষা করা; সাধারণ অবস্থায় ও জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এর অবস্থান এরকম। কাজেই এই বৈশিষ্ট্য অর্জনে চেষ্টা-চরিত্র করে যাওয়া আমাদের কর্তব্য।

অন্যায়কে উপেক্ষা করা ও ক্ষমা করার যে ফযীলত কোরআন মাজীদ থেকে পাওয়া যায় তন্মধ্যে একটি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও মাগফিরাতের ঘোষণা। যে অন্যকে ক্ষমা করে, অন্যের দোষ-ত্রæটি উপেক্ষা করে আল্লাহ তাআলাও তাকে ক্ষমা করেন ও তার দোষ-ত্রæটি উপেক্ষা করেন। আরবি ভাষায় একটি কথা আছে, যার অর্থ ‘যে প্রকারের কর্ম ঐ প্রকারের পুরস্কার’। বাংলা ভাষার প্রবাদ- ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’-এর চেয়েও বিষয়টি বিশেষ। নীতিটি এরকম যে, তুমি যদি ক্ষমা পেতে চাও তাহলে তুমিও অন্যকে ক্ষমা করো, দয়া পেতে চাইলে অন্যের ওপর দয়া করো। কোরআন-সুন্নাহর অনেক বাণীতে এই নীতির অনুরণন পাওয়া যায়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
জোহেব শাহরিয়ার ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৫ এএম says : 0
দয়া, মায়া ও করুণার মূর্তপ্রতীক রাসূল সা:। ক্ষমা ও সহনশীলতার যে অনুপম দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করে গেছেন তা আবহমানকাল ধরে ইসলামী দুনিয়াকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। আল্লাহর ক্ষমা পেতে হলে তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করতে হবে।
Total Reply(0)
Md Masud Hawlader ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৫ এএম says : 0
ইসলামে সহনশীলতা নিছক একটি রূপকথা নয়। একজন মুসলিম বাস্তবে এ কথা বিশ্বাস করে যে, ইসলাম মানুষকে সহনশীল হতে এবং অন্যকে ক্ষমা করতে উপদেশ দেয়। কুরআন এবং সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থাও তাই।
Total Reply(0)
Imran Khan ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৬ এএম says : 0
প্রকৃতপক্ষে ইসলাম রহমত তথা দয়ার ধর্ম। এ রহমত শুধুমাত্র মুসলমানের চলার পথকে সহজ করে দেয় না বরং অন্যদেরকেও পথ দেখায়।
Total Reply(0)
Khorshed Gazi ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৬ এএম says : 0
ইসলামের সুমহান শিক্ষা হচ্ছে, প্রতিশোধ গ্রহণ না করে ক্ষমা করা। এবং মানুষের প্রতি সহনশীল হওয়া, যখন সে ভুল করে।
Total Reply(0)
Ujjal Khan ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৬ এএম says : 0
সহনশীলতা ও ক্ষমা মুসলমানের ঈমানের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
Total Reply(0)
Kazi Mahamudul Riad ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৭ এএম says : 0
ইসলাম সব সময় সহনশীল কিন্তু অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন, অন্যের অধিকার কেড়ে নেয়াসহ আল্লাহ তাআলার অধিকার লঙ্ঘনে ছাড় দেয় না।
Total Reply(0)
Omar Faruque ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৭ এএম says : 0
দুনিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহনশীলতা ও ধৈর্যের বিকল্প নেই। আর ইসলাম ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়সহ সকল ক্ষেত্রে সহনশীলতা শিক্ষা দেয়।
Total Reply(0)
Jakir Hossain ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ন্যায়ের পথে সহনশীল ভূমিকা পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন