মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

গান ও বাদ্যযন্ত্র : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

মাওলানা মুহাম্মাদ দিলাওয়ার বিন গাজী | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

গান-বাদ্য আজ আমাদের সমাজের অপরিহার্য বিষয়ে রূপ নিয়েছে। গান-বাজনা ছাড়া আমাদের কোনো প্রোগ্রাম কল্পনাই করা যায় না। অথচ গান-বাদ্য ইসলামে হারাম একটি বিষয়। গান-বাজনার পক্ষে কেউ এই যুক্তি দেন যে, দফ ছিল তৎকালীন আরবের বাদ্যযন্ত্র। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন তা আরো উন্নত হয়েছে। এমনকি কেউ কেউ এমন কথাও বলেন যে, বিয়ে-শাদিতে গান-বাজনা করা সুন্নত। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে, কোরআন তিলাওয়াত শোনার চেয়ে প্রিয় শিল্পীর গান শোনাই এখন মানুষের কাছে প্রিয়। আর ইবলিস শয়তান তো এটাই চায় যে, আল্লাহর বান্দা কোরআন থেকে দূরে থাকুক। এজন্যই তো আবু বকর (রা.) গানবাদ্যকে শয়তানের বাঁশি বলে আখ্যায়িত করেছেন। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার চেয়েও এটা ভয়ঙ্কর।

কোরআনের ভাষ্য : আল্লাহ তাআলা সূরা লুকমানে আখেরাত-প্রত্যাশী মুমিনদের প্রশংসা করার পর দুনিয়া-প্রত্যাশীদের ব্যাপারে বলছেন, আর একশ্রেণীর লোক আছে, যারা অজ্ঞতাবশত খেল-তামাশার বস্তু ক্রয় করে বান্দাকে আল্লাহর পথ থেকে গাফেল করার জন্য। (সূরা লুকমান : ৬)।
উক্ত আয়াতের শানে নুযূলে বলা হয়েছে যে, নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাঁদী খরিদ করে এনে তাকে গান-বাজনায় নিয়োজিত করল। কেউ কোরআন শ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবং বলত মুহাম্মদ তোমাদেরকে কোরআন শুনিয়ে নামাজ, রোজা এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়ার কথা বলে। এতে শুধু কষ্টই কষ্ট। তার চেয়ে বরং গান শোন এবং জীবনকে উপভোগ কর। (মাআরিফুল কোরআন : ৭/৪)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াত নাযিল করেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে উক্ত আয়াতের ‘লাহওয়াল হাদীস’-এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তা হলো গান।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) একই কথা বলেন। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে যুবাইর থেকেও অনুরূপ মত বর্ণিত হয়েছে। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রাহ. বলেন, উক্ত আয়াত গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যা বান্দাকে কোরআন থেকে গাফেল করে দেয়। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৪১)।
কোরআন মজীদের অন্য আয়াতে আছে, ইবলিস-শয়তান আদম সন্তানকে ধোঁকা দেয়ার আরজী পেশ করলে আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে বললেন, তোর আওয়াজ দ্বারা তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস পদস্থলিত করো। (সূরা ইসরা : ৬৪)।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তাই ইবলিসের আওয়াজ। বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন, ইবলিসের আওয়াজ বলতে এখানে গান ও বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা। এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (ইগাছাতুল লাহফান : ১/১৯৯)।

সাহাবী ও তাবেয়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহর সমষ্টি হলো গান ও বাদ্যযন্ত্র। যথা : নিফাক এর উৎস, ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী, মস্তিষ্কের ওপর আবরণ, কোরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী, আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী ইত্যাদি। (ইগাছাতুল লাহফান : ১/১৮৭)।
বস্তুত গান বাজনার ক্ষতিকর প্রভাব এত বেশি যে, তা নাজায়েয হওয়ার জন্য আলাদা কোনো দলীল খোঁজার প্রয়োজন পড়ে না। এতদসত্তে¡ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বহু হাদীসের মাধ্যমে তা প্রমাণিত। গান-গায়িকা এবং এর ব্যবসা ও চর্চাকে হারাম আখ্যায়িত করে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় করো না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম। (জামে তিরমিযী হাদীস : ১২৮২)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩)।

উপরোক্ত বাণীর সত্যতা এখন দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। গান-বাজনার ব্যাপক বিস্তারের ফলে মানুষের অন্তরে এই পরিমাণ নিফাক সৃষ্টি হয়েছে যে, সাহাবীদের ইসলামকে এ যুগে অচল মনে করা হচ্ছে এবং গান-বাদ্য, নারী-পুরুষের মেলামেশা ইত্যাদিকে হালাল মনে করা হচ্ছে। মুসনাদে আহমদের হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন এবং বাদ্যযন্ত্র, ক্রুশ ও জাহেলি প্রথা বিলোপসাধনের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Nadia Zahan ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৪:৪৭ এএম says : 0
thanks for this article
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০২ এএম says : 0
ইসলাম কোনো জিনিসের মধ্যে ক্ষতিকারক কোনো কিছু না থাকলে তাকে হারাম করেনি। গান ও বাজনার মধ্যে নানা ধরনের ক্ষতিকর জিনিস রয়েছে।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০২ এএম says : 0
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (র.) এ সম্বন্ধে বলেন: বাজনা হচ্ছে নফসের মদ স্বরুপ। মদ যেমন মানুষের ক্ষতি করে, বাদ্যও মানুষের সেই রকম ক্ষতি করে। যখন গান বাজনা তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে, তখনই তারা শিরকে পতিত হই। আর তখন তারা ফাহেশা কাজ ও জুলুম করতে উদ্যত হয়। তারা শিরক করতে থাকে এবং যাদের কতল করা নিষেধ তাদেরকেও কতল করতে থাকে। যেনা করতে থাকে। যারা গান বাজনা করে তাদের বেশির ভাগের মধ্যেই এই তিনটি দোষ দেখা যায়। তাদের বেশির ভাগই মুখ দিয়ে শিস দেয় ও হাততালি দেয়। (মাজমু’ আল-ফাতওয়া ১০/৪১৭)
Total Reply(0)
নাসিম ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০৩ এএম says : 0
গান হরো যেনার রাস্তায় গমনের স্বরূপ। এর কারণেই বেশির ভাগ ফাহেশা কাজ অনুষ্ঠিত হয় গানের মজলিসে। যেখানে পুরুষ, বালক, বালিকা ও মহিলা চরম স্বধীন ও লজ্জাহীন হয়ে পড়ে
Total Reply(0)
রাজি হোসেন ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০৩ এএম says : 0
অনেক সময় গান শ্রবণ করতে করতে উত্তেজিত হয়ে একে অপরকে কতল করে ফেলে
Total Reply(0)
নাঈম বি এস এল ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০৪ এএম says : 0
সাহাবী ও তাবেয়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহর সমষ্টি হল গান ও বাদ্যযন্ত্র। যথা : ১.নিফাক এর উৎস ২.ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী ৩.মস্তিষ্কের উপর আবরণ ৪.কোরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী ৫.আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী ৬.গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী ও ৭.জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন