রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কৃষকেরা ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। সেচ, সার কম লাগায় উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ ফিরে পেয়েছেন কৃষকেরা।
গোদাগাড়ীর কৃষকেরা হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখতে চান। তাই তারা বেশী পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন। দেশের ভুট্টা চাষের ইতিহাসটাই যেন পাল্টে যাচ্ছে দিন দিন। গোদাগাড়ীর মাঠে চাষ করা ভুট্টা গাছ আর এর দানাসমৃদ্ধ হলদে মোচার সমৃদ্ধ দেখলে যে করো মন জুড়িয়ে যাবে। আর এ ভুট্টাগুলির জাত সুদূর মেক্সিকো থেকে সংগ্রহকৃত বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম জানান, করোনার সময়ে কৃষকরা বসে নেই। বিদ্যুৎ গতিতে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্চেন। গোদাগাড়ী ভুট্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। গত এক দশকে হাইব্রিড ভুট্টা গোদাগাড়ি এলাকায় চাষ হয়ে আসছে। উৎপাদন ও হেক্টর প্রতি ফলন উল্লেখযোগ্য রকমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঠে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভুট্টার গাছ বেশ ভাল হয়েছে, কোন কোন জমির গাছে একাধিক মোচাও ধরেছে। ভুট্টা আমাদের দেশের একমাত্র ফসল যার প্রতিটি জাতই এখন হাইব্রিড। অর্থাৎ এ দেশের মাঠে ভুট্টার এখন শতকরা একশত ভাগই হাইব্রিড ভুট্টা জাতের আবাদ করা হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ জানান, ভুট্টা একটি শতভাগ পর-পরাগী ফসল। আর শতভাগ পর-পরাগী না হয়ে এর উপায় নেই। ভুট্টার প্রতিটি গাছের মাথার শীর্ষে হলো পুরুষ ফুল আর গাছের কান্ডের মাঝামাঝি এলাকায় হলো এর স্ত্রী ফুলের অবস্থান। ফলে বীজ ধারণ করতে হলে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডকে পেতে হবে অবশ্যই পুরুষ ফুলের পরাগরেণুর পরশ। সে ব্যবস্থাও ভুট্টাতে বেশ উত্তম। প্রতিটি স্ত্রী ফুলের মাথায় অতি মোলায়েম রেশম সুতার মত ছড়িয়ে থাকে অজস্র গর্ভমুন্ড। সে কারণে বুঝি একে বলা হয় ‘সিল্ক’। এদের এভাবে ছড়িয়ে থাকার কারণই হলো উড়ে আসা পরাগরেণুকে বেঁধে ফেলা এবং বীজ তৈরির জন্য এদের অঙ্কুরিত হওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া। ভুট্টার পর-পরাগয়াণের এই স্বভাবই কাজে লাগিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পর-পরাগী স্বভাব বলে ভুট্টার দু’টি উত্তম ইনব্রিড লাইনকে পাশাপাশি নির্দিষ্ট অনুপাতে সারিবদ্ধভাবে লাগিয়ে দিয়ে একটি ইনব্রিড লাইনের পুরুষাঙ্গ কর্তন করে দেয়া হয়। অর্থাৎ এই লাইনটি অতঃপর কেবল বহন করে স্ত্রী ফুল। অন্য ইনব্রিড লাইন থেকে অতঃপর পরাগরেণু বাতাসের আন্দোলনে উড়ে এসে পড়ে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডের। ফলে কেবলমাত্র হাইব্রিড বীজ। সে হাইব্রিড বীজ এরপর ব্যবহার করা হয় ভুট্টা চাষের জন্য। গোদাগাড়ীর কৃষকগণ ভুট্টার বাম্পার ফলন আশা করছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, ভরা মৌসুমে ভারত থেকে ভুট্টা আমদানি করা হলে আমরা ন্যায্যমূল্য পাব না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন