সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই খুন হন ব্যবসায়ী মঙ্গল

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

 ৩০ লাখ টাকা ও অন্যের স্ত্রী ভাগিয়ে নেয়ার বিরোধে খুন হন নিরপরাধ ব্যবসায়ী মঙ্গল সরদার (৬০)। খুনের শিকার মঙ্গল সরদার গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বনগ্রামের মৃত অমৃত লাল সরদারের ছেলে। পিবিআই গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, চাঞ্চল্যকর মঙ্গল হত্যাকান্ডের ঘটনায় পিবিআই গোপালগঞ্জের একটি টিম গত ১ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থানার রশিদনগরের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূল আসামি কালাম শিকদারকে গ্রেফতার করে।

কালাম গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় গ্রামের জয়নুদ্দিন শিকদারের ছেলে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ওই দিন রাতে পিবিআই অভিযান চালিয়ে মুকসুদপুর উপজেলার ভাটরা গ্রামের মৃত হোসেন শেখের ছেলে মো. লিটন শেখ ওরফে লিটু, দক্ষিণ জলিরপাড় গ্রামের নলু শেখের ছেলে আকবর শেখ ও জলিরপাড় বাজারের মৃত ছায়েন মুন্সীর ছেলে মো. মুশিয়ারকে গ্রেফতার করে।
এদের মধ্যে কালাম সিকদার ও মো. লিটন শেখ ওরফে লিটু গত ২ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হাসানের আদালতে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
তারা আদালতকে জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় বাজারে সবজির ব্যবসা করতেন মঙ্গল সরদার। ওই বাজারে তার শ্যালক ক্রিটি রায় হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি মিষ্টির ব্যবসা করতেন। ক্রিটি রায় আরও বেশি টাকা উপার্জনের লক্ষ্যে একটি ট্রাক কিনতে ননীক্ষীর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানের ভাই ও জলিরপাড় বাজারের জামান অটোরাইস মিলের মালিক আল-আমিনকে ৩০ লাখ টাকা দেন। আল-আমিন ওই টাকা রাইস মিলের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। ক্রিটিকে আল-আমিন ট্রাক কিনে না দিয়ে, টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করতে থাকেন। টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। ওই টাকা আল-আমিন আত্মসাৎ করতে পাওনাদার ক্রিটিকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দিতে থাকে।
এরই মধ্যে ক্রিটি পার্শ্ববর্তী সিন্ধিয়া গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী সুশান্তের স্ত্রীকে ভাগিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। ক্রিটি ভারত পালিয়ে যাওয়ার আগে আল-আমিন ও দুলাভাই মঙ্গলকে মুখোমুখি করেন। পাওনা টাকা মঙ্গলকে দেয়ার জন্য বলে যান। আল-আমিন ওই টাকা মঙ্গলকে দিতে রাজি হন। শ্যালকের টাকা আদায়ের জন্য আল-আমিনের কাছে ঘন ঘন তাগিদ দিতে থাকেন মঙ্গল।
এতে আল-আমিন মঙ্গলের ওপর ক্ষিপ্ত হন। সুশান্তের স্ত্রীকে ভাগিয়ে ভারত যাওয়ার সময় ক্রিটিকে সহযোগিতা করেন দুলাভাই মঙ্গল। এ কারণে মঙ্গলের ওপর নাখোশ হন সুশান্ত। ক্রিটির পাওনা টাকা আত্মসাৎ করতে আল-আমিন হাত মেলান সুশান্তের সঙ্গে। তারা জামান রাইস মিলের অফিসে বসে মঙ্গল সরদারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আল-আমিনের সহযোগী কালাম, সবুজ, মনোজ, আকবর, মুশিয়ার, নাজমুল, লিটন ওরফে লিটু শেখসহ অন্যরা জলিরপাড় বাসস্ট্যান্ডে বৈঠক করেন। সেখানে আল-আমিন মঙ্গল সরদারকে হত্যা করার জন্য উপস্থিত প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে প্রদান করেন। সে পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলকে পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে আল-আমিন ডেকে নিয়ে সিন্ধিয়া বাজারে সুশান্তের কাঠের দোকানে যান। সেখানে সবাই এক সঙ্গে চা পান শেষে হেঁটে জলিরপাড়ের উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তাদের সঙ্গে সুশান্ত ছিল।
সিন্ধিয়া বাজার থেকে ১ কিলোমিটার পশ্চিমে উল্লাবাড়ির ফাঁকা জায়গায় পৌঁছালে সবুজ প্রথমে মঙ্গল সরদারের মুখ চেপে ধরেন। অন্যরা লোহার পেরেক, লাঠি, ইট দিয়ে আঘাত করে মঙ্গল সরদারকে হত্যা করে। আল-আমিন সর্বশেষ ইট দিয়ে মঙ্গল সরদারের মুখে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সুশান্তসহ অন্যান্যরা মঙ্গলের লাশ চটের বস্তায় ভরে দক্ষিণ জলিরপাড় গ্রামের হলুদ ও ধান ক্ষেতের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোপালগঞ্জ পিবিআই’র এসআই মো. আল-আমিন শেখ বলেন, এ ঘটনায় মঙ্গলের ভাতিজা দুলাল সরদার বাদী হয়ে মুকসুদপুর থানায় ১৩ সেপ্টেম্বর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মুকসুদপুর থানা-পুলিশ ৩ মাস তদন্ত করে হত্যাকান্ডের কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। পরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতারকৃত আকবর শেখ ও মো. মুশিয়ার শেখ বিপিআই’র হেফাজতে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আরও মামলা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন