মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অহঙ্কার-আত্মগরিমার পরিণাম জাহান্নাম

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

কোরআন মানুষকে বিনয়-নম্রতার শিক্ষা দান করে। দম্ভ-অহঙ্কারের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে। কোরআন মাজীদের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা এই যে, যেসব দাম্ভিক-অহঙ্কারির কাছে এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে আত্মগরিমা প্রদর্শন খুবই উপভোগ্য, চিরস্থায়ী আখেরাতে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ধ্বংস ও লাঞ্ছনা। আখিরাতের শুভ পরিণাম তো শুধু আল্লাহভীরু বিনয়ী বান্দাদের জন্য। ইরশাদ হচ্ছে : ওই পরকালের ঘর আমি তাদের জন্য নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতে ও অনাচার ছড়াতে চায় না। পরিণাম তো আল্লাহভীরুদের শেষ। (সূরা কাসাস : ৮৩)।

জান্নাতী ও জাহান্নামীদের স্বভাব-চরিত্রের পরিচয় দিয়ে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন : আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতবাসীদের ব্যাপারে বলব না? তারা হচ্ছে দুর্বল, নরম লোক, তাদের কেউ যদি আল্লাহ তাআলাকে কসম দিয়ে কিছু বলে, আল্লাহ অবশ্যই তার কসম রক্ষা করবেন। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে বলব না? ওরা হচ্ছে রূঢ় ও কর্কশ স্বভাবের, উদ্ধত, আত্মম্ভরী লোক। (সহীহ বুখারী : ৪৯১৮; সহীহ মুসলিম : ২৮৫৩)।

যেসব আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে দম্ভ-অহঙ্কারের প্রকাশ ঘটে তার অন্যতম হচ্ছে, তাচ্ছিল্য, বিদ্রূপ, অবজ্ঞা ও অবমাননা। হাদীস শরীফে এইসব আচরণগত উপসর্গের দ্বারা অহঙ্কারকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বিখ্যাত ফকীহ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন : যার মধ্যে এক কণা পরিমাণ কিবির আছে সে জান্নাতে যাবে না। একজন জিজ্ঞাসা করলেন, মানুষ পছন্দ করে- তার কাপড়টা সুন্দর হোক, জুতাটা সুন্দর হোক? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা সুন্দর, সৌন্দর্য তিনি পছন্দ করেন। কিবির হচ্ছে সত্যকে অস্বীকার করা আর মানুষকে তাচ্ছিল্য করা। (সহীহ মুসলিম : ৯১)।

একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে, চেতনা-বিশ্বাস, কর্ম ও আচরণ সব ক্ষেত্রের জন্যই কত বিস্তৃত ও গভীর শিক্ষা এই হাদীসে আছে। শুধু এই একটি হাদীসের ওপরও দীর্ঘ আলোচনা হতে পারে। এখানে শুধু এইটুকু নিবেদন করা উদ্দেশ্য যে, অবজ্ঞা-অবমাননা এবং বিদ্রূপ ও তাচ্ছিল্য প্রদর্শনের ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে না পারলে কোনো ব্যক্তি ও সমাজ কিছুতেই সভ্য-ভদ্র হতে পারে না।

মানবতার মহান শিক্ষক হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাই বিশেষভাবে বিনয় ও নম্রতার শিক্ষা দান করেছেন। তাঁর নির্দেশ : আল্লাহ আমার কাছে ওহী পাঠিয়েছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও। একে-অন্যের ওপর জুলুম করবে না এবং একে অন্যের ওপর বড়ত্ব জাহির করবে না। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৮৯৫)।

কোরআন মজীদের পরিষ্কার নির্দেশ : হে ঈমানদাররা, তোমাদের এক সম্প্রদায় যেন অন্য সম্প্রদায়কে তাচ্ছিল্য না করে। হতে পারে এরা ওদের চেয়ে ভালো। (তোমাদের) নারীদেরও এক শ্রেণি যেন অপর শ্রেণিকে তাচ্ছিল্য না করে। হতে পারে এরা ওদের চেয়ে ভালো। তোমরা পরস্পরকে দোষারোপ করো না। একে অপরকে মন্দ উপাধীতে আখ্যায়িত করো না। ঈমানের পর ফাসিক-নাম কতই না মন্দ! যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম। (সূরা হুজুরাত : ১১)।

সমাজ-জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সৌহার্দ্য-স¤প্রীতি রক্ষায় উপরোক্ত আচরণবিধি মেনে চলা যে কত জরুরি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সভ্য-ভদ্র ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়ার জন্য কথা-কাজে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের প্রবণতা থেকে মুক্ত থাকা অতি প্রয়োজন। আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর ইরশাদ : নিজ মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার স্বভাব যদি কারো মধ্যে থাকে, তাহলে আর কিছু লাগবে না- খারাপি হিসেবে এটাই যথেষ্ট। (সহীহ মুসলিম : ২৫৬৪)।

ব্যক্তি ও সমাজ বড় হয় নির্মল বিশ্বাস ও যথার্থ কর্মের দ্বারা, অন্যকে তাচ্ছিল্য ও বিদ্রূপ করার দ্বারা নয়। কেউ যদি উন্নত কর্ম ও মার্জিত আচরণের পরিবর্তে অন্যের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মাধ্যমে বড় হতে চায় তাহলে সে আরো ছোট হয়ে যায়। তার রিক্ততা ও ক্ষুদ্রতাই আরো বেশি করে প্রকাশিত হয়ে পড়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
সাইফুল ইসলাম ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৫ এএম says : 0
আল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানকে জাহান্নামের আগুন ও কষ্টদায়ক শীতলতা ইত্যাদি শাস্তি থেকে মুক্তি দিন। আমিন।
Total Reply(0)
তাজউদ্দীন আহমদ ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৬ এএম says : 0
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার দিলের মধ্যে সরিষার দানা পরিমাণও অহংকার থাকবে।
Total Reply(0)
কামাল ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৬ এএম says : 0
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা আমাদেরকে অহংকার থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন।আমীন ইয়া রাব্বাল আলামিন।
Total Reply(0)
জসিম ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৬ এএম says : 0
হযরত ওমর (রা:) বলেন, মানুষ যখন বিনয়ী হয় আল্লাহ্ পাক তখন তাঁর সম্মান বাড়িয়ে দেন এবং বলেন, তুমি সুউচ্চ মর্যাদায় আরোহন কর। পক্ষান্তরে মানুষ যখন অহংকারী হয় তখন আল্লাহ্ পাক তাকে অপদস্ত করেন এবং বলেন, তুমি অপদস্ত হও। তখন সে নিজের কাছে বড় মনে হলেও মানুষের কাছে শুকরের চেয়েও বেশী ঘৃণিত, অপদস্ত ও ছোট হয়ে যায়।
Total Reply(0)
পারভেজ ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৭ এএম says : 0
অহঙ্কার করার অধিকার কেবল আল্লাহর রয়েছে। কোনো মানুষ অহঙ্কার করতে পারে না। অহঙ্কারের পরিণাম অশুভ। হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম : ১৩১)
Total Reply(0)
Mamun ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:২৫ এএম says : 0
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা আমাদেরকে অহংকার থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন....
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন