মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কাউকে তাচ্ছিল্য নয়, নয় তোষামোদও

মাওলানা যাকারিয়া মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

আল্লাহর রাসূল (সা.) যেমন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ নিষিদ্ধ করেছেন তেমনি নিষিদ্ধ করেছেন মিথ্যাচার, কপটচারিতা ও চাটুকারিতার মতো হীন স্বভাব ও আচরণও। সমাজের কিছু লোকের মধ্যে দর্প-অহঙ্কার দৃঢ় ও বদ্ধমূল হওয়ার পেছনে একশ্রেণির মেরুদন্ডহীন লোকের অতিরঞ্জন, অতিভক্তি ও তোষামুদে আচরণেরও বিরাট প্রভাব থাকে। আল্লাহর রাসূল (সা.) তাঁর নিজের সম্পর্কে উম্মতকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন : তোমরা আমার সম্পর্কে অতিরঞ্জন করো না যেমন খ্রিস্টানেরা ইবনে মারইয়ামের ব্যাপারে করেছে। আমি তো আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা (আমার সম্পর্কে) বলবে- ‘আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৪৪৫, ৬৮৩০)।

হাদীস শরীফে তোষামোদকারীর মুখে মাটি নিক্ষেপ করতে বলা হয়েছে, যাতে চাটুকার শ্রেণি নিরুৎসাহিত হয় এবং মুসলিম-সমাজে এই ব্যাধির বিস্তার ঘটতে না পারে। জ্ঞান-প্রজ্ঞাহীন কাঁচা মগজে তোষামোদের ক্রিয়া বিষতুল্য হয়ে থাকে। আর ধোঁকাবাজ, ভন্ড, চাটুকারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকলে তো কথাই নেই।

ঘরভর্তি প্রশংসা আর ন্যায়-অন্যায় সবকিছুতে অকুণ্ঠ সমর্থন-ধ্বনিতে নরক গুলজার হয়ে ওঠে। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অন্য সবাইকে ছোট মনে করার, তাদের দিকে তাকিয়ে নাক কুচকানোর, কপাল ভাঁজ করার স্বভাব গড়ে ওঠে। সমাজের যেখানেই এই প্রবণতার বিস্তার ঘটবে সেখানেই অন্যায়-অনাচার বাড়তে থাকবে। সদুপদেশ, সৎপরামর্শ ও গঠনমূলক সমালোচনার পরিবেশ বিলুপ্ত হবে। নীতি-নৈতিকতা ভুলুণ্ঠিত হবে। দেশ-জাতি রসাতলে যাবে।

সচেতন ব্যক্তিদের অজানা নয় যে, বর্তমান সভ্য দুনিয়ায় রাজনীতি-প্রশাসনসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই অবক্ষয় কী ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, যে কোনো ধরনের বিচ্যুতি-বিভ্রান্তি, অন্যায়-অনাচারের সমর্থনের জন্যও সমর্থকের কোনো অভাব হয় না। সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবীকে এই ধ্বংসের পথ থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনাদর্শের দিকে ফিরে আসা।

তাঁর শিক্ষা ও সাহচর্যে এমন এক জাতি তৈরি হয়েছিল, যারা ছিলেন চারিত্রিক দৃঢ়তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। স্তব-স্তুতির কোনো প্রয়োজন তাঁদের ছিল না। এইসব বেহুদা-আড়ম্বরে তারা অস্বস্তি ও আতঙ্ক বোধ করতেন। এর কুপ্রভাব সম্পর্কে তাঁরা গভীরভাবে সচেতন ছিলেন।

ইমাম বায়হাকী (রাহ.) বর্ণনা করেছেন যে, এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন : ‘হে সর্বোত্তম ব্যক্তি, হে সর্বোত্তম ব্যক্তির সন্তান!’
ইবনে ওমর (রা.) তার জবাবে বলেছিলেন : ‘আমি সর্বোত্তম ব্যক্তি নই, আমার বাবাও সর্বোত্তম ব্যক্তি নন। আমি তো আল্লাহর বান্দাদের একজন। আমি তাঁর দয়ার প্রত্যাশা করি। তাঁর শাস্তির ভয় করি। আল্লাহর কসম তোমরা তো এভাবে মানুষের পিছনে লেগে তাকে শেষ করে ছাড়বে।’ (আলমাদখাল ইলাস সুনানিল কুবরা, বায়হাকী ১/৩৩৪, বর্ণনা ৫৪১)।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সাহচর্যে সাহাবায়ে কেরাম কত উন্নত মানসিকতার অধিকারী হয়েছিলেন! তাঁদের সুস্থ-স্বাভাবিক রুচি ও নির্মল-পরিচ্ছন্ন চেতনার মূলে ছিল ঈমান ও তাওহীদের বিশ্বাস। এটা নিছক মৌখিক সৌজন্যের ব্যাপার ছিল না। চেতনা-বিশ্বাসের অনেক গভীর থেকে উৎসারিত ছিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
হেদায়েতুর রহমান ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৩ এএম says : 0
ইসলামের প্রত্যেকটি নির্দেশনাই মানুষের জন্য কল্যাণকর
Total Reply(0)
আবদুল মান্নান ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৪ এএম says : 0
এত সুন্দরভাবে দলীলসহ এই লেখাটির জন্য মাওলানা যাকারিয়া মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহকে ধন্যবাদ
Total Reply(0)
রোদেলা ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৫ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের নির্দেশ মোতাবেক চলার তৌফিক দান করুক
Total Reply(0)
রোমান ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৬ এএম says : 0
সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবীকে এই ধ্বংসের পথ থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনাদর্শের দিকে ফিরে আসা।
Total Reply(0)
কামাল ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৬ এএম says : 0
তাচ্ছিল্য ও তোষামোদ দুটোই খারাপ
Total Reply(0)
Mohamma+Monir+Uddin ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১১:২৫ এএম says : 0
যারা ইসলাম বলে মানুষকে ওহাবাীবাদ, জঙ্গীবাদের ক্যাপসুল খাওয়াই দিয়ে ইহকাল, পরকাল ধংস করে দিচ্ছে তাদের সাথে আচরণটা কেমন হবে একটু জানাবেন, দয়াকরে?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন