মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বড়কে সম্মান ছোটকে স্নেহ

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র সীরাত থেকে যে ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষা আমরা পাই তা হচ্ছে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য নয়, তোষামোদ-চাটুকারিতাও নয়। আল্লাহ তাআলা যাকে যে পর্যায়ে রেখেছেন তার সাথে ঐরকম আচরণ করতে হবে। বড়কে সম্মান করতে হবে, ছোটকে স্নেহ করতে হবে।
সামাজিক জীবনে ছোট-বড়র পর্যায়গত অবস্থান এবং এ হিসেবে পারস্পরিক সৌজন্য ও শিষ্টাচার মেনে চলা কত যে গুরুত্বপূর্ণ তা বলে শেষ করা যাবে না। এর দ্বারা ভারসাম্য অটুট থাকে, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে, সমাজ সুসংহত হয় এবং ব্যক্তি ও সমাজের আভিজাত্য রক্ষা পায়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সীরাতে দেখতে পাই- কীভাবে তিনি দৈনন্দিন জীবনের ছোট-ছোট বিষয়েও ছোট-বড়র সৌজন্য ও শিষ্টাচার রক্ষার তাকীদ করেছেন। বুখারী-মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যে, একটি প্রতিনিধিদল একটি অভিযোগ নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে আব্দুর রহমান ইবনে সাহল (রা.) ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তিনি কথা বলতে গেলে নবী (সা.) বলেছেন : ‘বড়কে বলতে দাও, বড়কে বলতে দাও।’ তখন তিনি নীরব হয়ে যান এবং বড় দু’জন কথা বলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩১৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৬৯)।

জীবনের বিভিন্ন ঘটনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই তরবিয়াতের দরুন সাহাবীদের মধ্যে বড়র প্রতি শ্রদ্ধা ও ভদ্রতা রক্ষার মেযাজ তৈরি হয়েছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় আমি ছিলাম কিশোর। আমি তাঁর কাছ থেকে (ইলম ও সুন্নাহ শিখতাম এবং) স্মরণ রাখতাম। কিন্তু এরপরও শুধু এইজন্য কথা বলা থেকে বিরত থাকতাম যে, তাঁর মজলিসে আমার চেয়ে বয়সে বড়রা উপস্থিত থাকতেন...। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৬৪)।

বয়সের দিক থেকে ছোট-বড়র ক্ষেত্রে যেমন সৌজন্য-শিষ্টাচার রক্ষা করা কর্তব্য তেমনি ইলম, তাকওয়া, দানশীলতা, বদান্যতা ইত্যাদি সদগুণের ক্ষেত্রে যারা বড় তাদের সাথেও আদব রক্ষা করা, আচার-ব্যবহারে বিনয়ী ও মার্জিত হওয়া কর্তব্য। হাদীস ও সীরাতে এ প্রসঙ্গে অনেক শিক্ষণীয় বাণী ও ঘটনা আছে। সেসকল শিক্ষা ও নির্দেশনার সারকথা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বর্ণিত এই হাদীস : আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাদের আদেশ করেছেন আমরা যেন মানুষকে তার উপযুক্ত মর্যাদা ও অবস্থান দেই। (মুকাদ্দিমা সহীহ মুসলিম)।

সমাজ-জীবনে এই নীতি অনুসৃত হলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা তৈরি হবে, আচার-আচরণে সংযম-সৌজন্যের বিস্তার ঘটবে, মেধা-মনন ও মানবীয় সদগুণসমূহ বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে এবং পরস্পর সৌহার্দ্য-স¤প্রীতি তৈরি হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মানীর মান রক্ষা করা এবং কথা-কাজ সবক্ষেত্রে সীমারেখা মেনে চলা একটি সভ্য-সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। সভ্য-ভদ্র, সুশীল-সজ্জন ব্যক্তিত্ব গঠনে এবং প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে মানবীয় সদগুণাবলীর চর্চা ও বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। দম্ভ-অহংকার, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, অশ্লীলতা-অশালীনতা, সংকীণতা-সা¤প্রদায়িকতা, হিংসা-ফাসাদ, হিংস্রতা পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি হীন ও বিধ্বংসী প্রবণতা থেকে মুক্ত হয়ে বিনয়-নম্রতা, সৌজন্য-শিষ্টাচার, ভদ্রতা-শালীনতা, উদারতা-সত্যবাদিতার মতো গুণাবলীর বিস্তার ছাড়া ব্যক্তি ও সমাজ কিছুতেই সভ্য-ভদ্র হতে পারে না।

বর্তমান রুগ্ন পৃথিবী বারবার এ বার্তাই দিয়ে যাচ্ছে যে, পৃথিবী নামক এই গৃহের অধিবাসীদের সত্যিকারের মানুষ হতে হলে, মনুষ্যত্বের মর্যাদায় উপনীত হতে হলে, উন্নত মানবিকতার রৌদ্রালোকিত অঙ্গনে বিচরণ করতে হলে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে ইসলামের দিকে; ইসলামের নবী, মানবতার মহান শিক্ষক হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র শিক্ষা ও জীবনাদর্শের দিকে। আজকের মুমূর্ষু-পৃথিবীর সুস্থতা ও রোগমুক্তির এছাড়া আর কোনো পথ নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
হিমেল ২৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
প্রবীণদের শ্রদ্ধা এবং নবীনদের স্নেহ করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। হাদিসে রাসুল (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘যারা ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না তারা আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৪২)
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ২৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া উচিত। এটা মহানবীর শিক্ষা।
Total Reply(0)
নীল প্রজাপতি ২৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২৩ এএম says : 0
মানবিক গুণাবলির মধ্যে মানুষকে সম্মান প্রদর্শন করা একটি অন্যতম গুণ। সমাজে নিয়মশৃঙ্খলা, প্রেম-প্রীতি ও শ্রদ্ধা-সম্মানের এ মহৎ গুণের উসিলায় শান্তি নেমে আসে সমাজে
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ২৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
ইসলামে তাই অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সৎ স্বভাব ও সৎ আচরণের মাধ্যমে আমরা এ গুণটি জীবনের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে ফুটিয়ে তুলতে পারি।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ২৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
পরিবারের সদস্য হিসেবে আদব রক্ষা করা যেমন সবার উচিত, তেমনি মর্যাদা-সম্মান প্রদর্শন করাও সবার কর্তব্য।
Total Reply(0)
চাদের আলো ২৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
মানুষের উত্তম স্বভাব ও শিষ্টাচার পার্থিব এবং পারলৌকিক জীবনে উপকারে আসে, পারস্পরিক সম্পর্ক ও শিষ্টতা নির্ভর করে মর্যাদা-সম্মান প্রদর্শনের ওপর।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ২৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
পরিবারের ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে আমরা বসবাস করি। পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্যবোধ ও মমতার বাঁধনে সংসার হয় সুখের
Total Reply(0)
Fahimul huda ২৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:০৮ পিএম says : 0
Alhamdulillah...sonbadti pore khob Valo laglo.jajakallah.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন