অপরাধের মাত্রাও দিন দিন বেড়ে চলছে। বৈষম্য, অসম প্রতিযোগিতা, বস্তুবাদী মনোভাব, নীতিহীনতা ইত্যাদি দিন দিন উসকে দিচ্ছে অপরাধের পারদ। কালে কালে আমাদের সমাজে একেকটি অপরাধ মহামারি আকার ধারণ করেছে। স্বাধীনতার একদম পরপরই এদেশে ছিনতাই খুব বেড়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যা হলেই সাধারণ মানুষের পক্ষে ছিনতাইয়ের ভয়ে বাইরে চলাচল প্রায় অসম্ভব ব্যাপার ছিল। এখন সেই দুঃসময় আর নেই। রাস্তাঘাটে এখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ জোরালো। এরশাদ আমলে এসিড নিক্ষেপ করে মেয়েদের মুখমন্ডল কিংবা শরীরের কোনো অংশ ঝলসে দেওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পুলিশের পক্ষে এই অপরাধ দমন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে নারীর ওপর এসিড নিক্ষেপের জন্য মৃত্যুদন্ড বিধান করা হয়। দ্রুত বিচার করে কিছু অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার ফলে দেখা গেল অপরাধীরা আর এই অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে না। সা¤প্রতিককালে একটি ঘৃণ্য অপরাধ দেশজুড়ে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সবজায়গায় এই ঘৃণ্য অপরাধের খবর শোনা যাচ্ছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো নারীরা এ অপরাধের ভিকটিম। প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা, টেলিভিশনের পর্দা কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুললেই নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যার মতো নারীর প্রতি সহিংসতার খবর চোখের সামনে ভেসে উঠে। আমাদের সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা এখনো ব্যাপকভাবে বিরাজমান। এছাড়া আইনের যথাযথ ও সুষ্ঠু প্রয়োগ না হওয়াও এই সামাজিক ব্যাধিকে আরো লাগামহীন করে তুলছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সামাজিক অনাস্থা ও অসন্তোষ থেকে জনমনে বিশৃঙ্খলা ও বিক্ষোভের জন্ম নিচ্ছে। ধর্ষণের মতো মারাত্মক একটি অপরাধ ঘটার পর ভুক্তভোগীকে অপবাদ দেওয়া বা ভিকটিম ব্লেইমিং এর মতো অসুস্থ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে বরং ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়াতে হবে, সামাজিকভাবে তাকে যেন যথাযথ সম্মান দেওয়া হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চার দিকে আরো মনোযোগ দিতে হবে। তবেই আমাদের সমাজ থেকে ধর্ষণ তথা সামাজিক ব্যাধির নির্মূল সম্ভব হবে।
মুশফিকুর রহমান ইমন
গোপালপুর, টাঙ্গাইল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন