মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল কুরআনকে অনুসরণ করাই উত্তম পন্থা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

মহান রাব্বুল আলামীন, আইন প্রণেতা ও ন্যায়বিচারক। তাঁর সকল সিদ্ধান্ত ও কর্ম কোনো না কোনো কল্যাণ ও ন্যায়ানুগ রহস্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাঁর কোনো সিদ্ধান্তেই বিন্দুমাত্র জুলুম বা অবিচারের সংস্পর্শ নেই। এই বিশেষত্বটি আল কুরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে। (ক) ইরশাদ হয়েছে : তিনি সর্ব বিজ্ঞ ও সর্ব বিষয়ে অবহিত। (সূরা শাবা : আয়াত ০১)। (খ) ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহপাক বান্দাহগণের প্রতি আদৌ জুলুমের ইচ্ছা করেন না। (সূরা মুমিন : আয়াত-৩১)। (গ) ইরশাদ হয়েছে : তোমার প্রতিপালক বান্দাহর প্রতি কখনো অবিচারকারী নন। (সূরা হা-মীম সেজদাহ : আয়াত-৪৬)।

উল্লিখিত তিনটি আয়াতে কারীমার অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, আল্লাহপাকের জ্ঞান বিশ্বব্যাপী। আকাশ ও পৃথিবীতে অবস্থিত সবকিছু তিনি জানেন। কোন বস্তু কোন অবস্থায় আছে, তাও তিনি জানেন। এই সর্বব্যাপী জ্ঞানসম্পন্ন সত্তা সৃষ্টিজগতের বুকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যাবতীয় ব্যবস্থা প্রদান করেছেন।

এ জন্যই তিনি ঘোষণা করেছেন, তিনি বান্দাহগণের প্রতি জুলুম করার ইচ্ছা আদৌ পোষণ করেন না। যেহেতু করেন না, সেহেতু তিনি পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন : যে সৎকর্ম করে সে নিজের উপকারের জন্যই করে। আর যে অসৎ কর্ম করে এর প্রতিফল তার ওপরই বর্তাবে। তিনি বান্দাহদের প্রতি মোটেই জুলুম করেন না।

আল্লাহপাক পৃথিবীর বুকে ন্যায়বিচার ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একশত চারখানি ক্ষুদ্র ও বৃহৎ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। তন্মধ্যে একশতটি ক্ষুদ্র আকারের কিতাবকে সহীফা বলা হয়েছে এবং বৃহদাকারের চারখানা কিতাবকে আল কিতাব বলে অভিহিত করা হয়েছে। এসব কিতাবে আল্লাহপাক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বের সর্বত্র কল্যাণ কায়েম করার বিধানাবলি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।

বিশেষ করে সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : (ক) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো কাজ বা বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে কোনো ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে। (যদি এমনটি করে) তবে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। (সূরা আহযাব : আয়াত-৩৬)।

(খ) নিঃসন্দেহে তোমার পরওয়ারদিগার তাদের মাঝে মীমাংসা করে দেবেন কেয়ামতের দিন, যে ব্যাপারে তাদের মাঝে মতবিরোধ ছিল। (সূরা ইউনুস : আয়াত-৯৩)। (গ) আপনার পালনকর্তা নিজ শাসনক্ষমতা অনুযায়ী তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন, তিনি পরাক্রমশালী সুবিজ্ঞ। (সূরা নামল : আয়াত-৭৮)।

(ঘ) আল্লাহ সঠিকভাবে ফায়সালা করেন, আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদের আহ্বান করে, তারা কিছুই ফায়সালা করে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শোনেন সব কিছু দেখেন। (সূরা মু’মিন : আয়াত -২০)। সুতরাং এই আয়াতসমূহে বিবৃত নির্দেশের আলোকে স্পষ্টতঃই বোঝা যায় যে, আল কুরআনে সন্নিবেশিত নীতিমালাই হচ্ছে ন্যায়বিচার ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার একমাত্র উৎস। পিয়ারা নবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দীর্ঘ তেইশ বছরের নবুওয়াতী জিন্দেগী সেই উৎসের ব্যবহারিক প্রয়োগক্ষেত্র মাত্র, যা স্বমহীমায় রোজ কেয়ামত পর্যন্ত কল্যাণের দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।

আল্লাহপাকের নাজিলকৃত চিরন্তন আইনগ্রন্থ আল কুরআন এমন একটি গ্রন্থ, যার মাঝে প্রতিটি বস্তু ও বিষয়ের বিবরণ রয়েছে। এ সকল বিবরণ অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও সুবিদিত। এতে রয়েছে হেদায়েত ও সঠিক পথের দিকনির্দেশনা, সৃষ্টিকুলের কল্যাণ ও মঙ্গল সাধনের দিশা এবং সকল মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ ও পরিণাম পরিণতির কথা। ইরশাদ হয়েছে : আর আমি আপনার ওপর কিতাব নাজিল করেছি, (যাতে রয়েছে) প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ। (সূরা নাহল : আয়াত ৮৯)।

মোটকথা, কুরআনুল কারীমে মুসলমানদের ব্যক্তিগত জীবন সংক্রান্ত আইন এবং পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক আইন সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি জীবন ও জগতের যাবতীয় সমস্যার সমাধানও দেয়া হয়েছে। তাই মুসলিম মিল্লাতের উচিত আল কুরআনকে অনুসরণ করা। আল কুরআনের বিধানাবলি জীবন চলার পথের সকল অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা করা। অন্যথায় মুক্তি ও নিষ্কৃতির আশা-নিরাশার অন্তরালে হারিয়ে যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মনির হোসেন মনির ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
আল্লাহর বিধান ও রাসুলের নির্দেশনা অনুসরণের মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত।
Total Reply(0)
সাদ্দাম ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
যারা আল্লাহর বাণী গ্রহণ ও অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিন শাস্তি।
Total Reply(0)
রায়হান ইসলাম ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
‘(একইভাবে) আমি এই কল্যাণময় কুরআন নাজিল করেছি। সুতরাং কুরআন অনুসরণ করো এবং আল্লাহ-সচেতন থাকো। তাহলেই তোমাদের ওপর রহমত নাজিল হবে।’ (সূরা আনআম ১৫৫)
Total Reply(0)
নাবিল আব্দুল্লাহ ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
‘হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহর বিধানকে অনুসরণ করো এবং সত্যের সাক্ষ্যদানে অবিচল থেকো। কারো প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাকে সুবিচার থেকে দূরে সরে যাওয়ার মতো পাপে নিমজ্জিত না করে। সব সময় ন্যায়বিচারে দৃঢ় থাকবে- এটাই আল্লাহ-সচেতনতার ফলিত রূপ। তাই সব সময় আল্লাহ-সচেতন থেকো। তোমরা যা করো আল্লাহ তার সবকিছুরই খবর রাখেন।’ (সূরা মায়েদা ৮)
Total Reply(0)
তাজউদ্দীন আহমদ ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
আমাদের উচিত মানবরচিত গ্রন্থ ভিত্তিক দ্বীনের বুঝ পরিহার করে বিষয় ভিত্তিক কুরআনের মাধ্যমে দ্বীনের সঠিক বুঝ ব্যক্তিজীবনে ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা।
Total Reply(0)
Ahmed hossain khan ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:১১ এএম says : 0
Quraner ful fute utok amar ridoy bag a,quran k janite ami jeno jage uti ai sitol mag a,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন