শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ভাষার মাস : চেতনার দীপ জ্বলুক, ঈমানের ফুল ঝরুক

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

ভাষা আল্লাহর মহা নিয়ামত। মুখের ভাষা, কলমের ভাষা দু’টোই আল্লাহর দান। সূরাতুর রহমানে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : দয়াময় আল্লাহ, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে। (সূরা রহমান : ১-৪)। ‘সৃজন’ আল্লাহর এক মহিমান্বিত কর্ম। বান্দার প্রতি তাঁর অসংখ্য নিয়ামতের শিরোনাম। আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন মানুষের সত্তা ও তার গুণাবলি। আল্লাহ-প্রদত্ত সেইসব মানবীয় গুণের একটি- ‘বায়ান’-ভাব প্রকাশের যোগ্যতা। যে যোগ্যতাবলে মানুষ তার মনের ভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে, অন্যের ভাব ও বক্তব্য সঠিকভাবে উপলব্ধি করে। এরই মাধ্যমে মানুষ বোঝে ও বোঝায় দ্বীন-দুনিয়ার সকল ভালো-মন্দ। ফলে এর ওপর নির্ভর করেই পরিচালিত হয় ইহলৌকিক-পারলৌকিক কর্ম-তৎপরতার এক বিরাট অংশ।

কিন্তু দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার অন্য অনেক বড় বড় নিয়ামতের মতো এই মহানিয়ামতের উপলব্ধি ও শোকরগোযারিও আমাদের অনেকের মাঝে অনুপস্থিত। এক্ষেত্রেও অজ্ঞতা ও অজ্ঞানতার এক সর্বগ্রাসী সয়লাব প্লাবিত করে রেখেছে জীবনের বিস্তৃত অঙ্গনকে। মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য, এই মহাপ্লাবন থেকে মুক্তির উপায় অন্বেষণ করা।

আমাদের প্রথমেই সচেতন হতে হবে এই মানবীয় গুণটির স্বরূপ ও সূত্র সম্পর্কে। এর স্বরূপ হচ্ছে, এটি আল্লাহর নিয়ামত আর এর সূত্র তিনিই, যিনি আমাদের তা দান করেছেন। তিনি আল্লাহ, রাহমানুর রাহীম। মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন সর্বোত্তম দৈহিক ও মানসিক গঠনে; তাকে দান করেছেন বোধ-বুদ্ধি, চেতনা-উপলব্ধি, ভাষা ও বাকশক্তি। কাজেই তাঁর শোকরগোযারি আমাদের অতি বড় কর্তব্য। শোকর ও কৃতজ্ঞতার প্রথম শর্ত কী? নিয়ামতের যিনি স্রষ্টা তাঁকে চেনাই হচ্ছে কৃতজ্ঞতার প্রথম শর্ত। এরপর মুখে ও অন্তরে তাঁর দান স্বীকার করা, সেই দানের সুফল ও উপকারিতা স্বীকার করা, তা যে এক আল্লাহর দান অন্য কারো এতে কোনো অংশীদারত্ব নেই এই সত্য উপলব্ধি করা, স্বীকার করা ও শিরোধার্য করা।

তেমনি শোকরগোযারির এক বড় দিক, আল্লাহর নিয়ামত আল্লাহর মর্জি ও রেযামন্দির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা, তাঁর নারাজি ও নাফরমানির ক্ষেত্রে ব্যবহার না করা। আল্লাহর রাসূল (সা.) কত সহজ ভাষায় বাকশক্তির যথার্থ ব্যবহারের উপায় নির্দেশ করেছেন। তিনি বলেছেন : যে আল্লাহ ও আখিরাতের দিবসে ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরব থাকে। (সহীহ বুখারী : ৬০১৮)।

শোকরগোযারির আরেক দিক হচ্ছে, নিয়ামতের সংরক্ষণ ও পরিচর্যা। ভাব প্রকাশের যে যোগ্যতা আল্লাহ তাআলা দান করেছেন মুমিনের করণীয়, এই নিআমতের গুরুত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করা এবং এর পূর্ণ বিকাশ ও নিখুঁত ব্যবহারে প্রয়াসী ও পারদর্শী হওয়া। সাধারণভাবে যে কোনো ভালো কাজেই চৌকস হওয়া কাম্য। আর মুমিনের তো শুধু চৌকস হওয়া নয়, তাকে হতে হবে আপন ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ।

এক প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ করে বলেছেন, ‘লোক সমাজে তোমাদের হতে হবে তিলক-সদৃশ।’ জ্বী, সৌন্দর্যে ও পারিপাট্যে তিলক-সদৃশ। এই নবী-নির্দেশনার অনুসরণে মুমিনকে হতে হবে অন্তরে-বাহিরে সুরভিত, সৌন্দর্যমন্ডিত। বেশ-ভুষায়, আচরণে-উচ্চারণে সব কিছুতেই থাকতে হবে তার উজ্জ্বল আদর্শের প্রতিফলন। তার চেতনার আলো, বিশ্বাসের সুরভি ভাষার সৌকর্য যেন চারপাশকে করে তোলে মুগ্ধ ও মোহিত, আলোকিত ও আলোড়িত। আল্লাহ-প্রদত্ত ভাষাকে যদি অবিশ্বাস-অশ্লীলতার বিস্তারেই ব্যবহার করা হয় তাহলে এর চেয়ে কি ভালো নয় মুক ও বধির হওয়া?

সত্য বটে, একমাত্র ঈমানই পারে মানুষকে প্রকৃত মানুষ করে তুলতে। মানবের সকল গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সঠিক বিকাশ ও যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে। আর তাই ঈমান ও আমলে ছালেহ থেকে বঞ্চিত মানুষ নেমে যায় অবলা পশুর স্তরে; বরং তারও নীচে। তার যোগ্যতাগুলোই তখন তার অবক্ষয়-অধঃপতন ত্বরান্বিত করে। কত সত্য মহান ¯স্রষ্টার বাণী : আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে। অতপর আমি তাকে পরিণত করি হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে। কিন্তু তাদেরকে নয়, যারা মুমিন ও সৎকর্মপরায়ণ; তাদের জন্য তো রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। (সূরা ত্বীন : ৪-৬)।

তাই আসুন, ঈমানের দীপ জ্বালি, ঈমানের পথে চলি। ঈমানই পথ, ঈমানই পাথেয়। ঈমানই আমাদের কর্ম ও রচনার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
সাদ্দাম ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১০ এএম says : 0
ভাব প্রকাশের যে যোগ্যতা আল্লাহ তাআলা দান করেছেন মুমিনের করণীয়, এই নিআমতের গুরুত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করা এবং এর পূর্ণ বিকাশ ও নিখুঁত ব্যবহারে প্রয়াসী ও পারদর্শী হওয়া।
Total Reply(0)
রুহান ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১১ এএম says : 0
লেখাটির জন্য মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক সাহেবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
গিয়াস উদ্দীন ফোরকান ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১২ এএম says : 0
প্রবন্ধটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে
Total Reply(0)
টুটুল ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১২ এএম says : 0
এই ধরনের লেখার জন্যই নিয়মিত ইনকিলাব পড়ি
Total Reply(0)
জাফর ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:১৩ এএম says : 0
আল্লাহ লেখক ও ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন