দক্ষিনাঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষানুরাগী ও অভিভাবক মহলের উদ্বেগ উৎকন্ঠা কাটছে না। কোচিং নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রÑছাত্রীরা ক্রমশ মুখস্থ্য বিদ্যার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরার পাশাপাশি মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা লেখাপড়ায় অমনযোগী ও অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে বলে উদ্বিগ্ন অভিভবাকমহলও। এবারের করোনা সংকটে পরিক্ষা বিহীন বিশেষ ব্যবস্থায় ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে শতভাগ ছাত্র ছাত্রী উত্তীর্ণ হলেও দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৩৩১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬৮ হাজার ৯২০ পরিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র ৮.০৮% ছাত্রÑছাত্রী । সংখ্যার হিসেবে যাত্র মাত্র ৫ হাজার ৫৬৮ । জেএসসি ও এসএসসি’র নম্বরের সাথে আরো ২৫% যুক্ত করে এ ফলাফল তৈরী করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এরপরেও ভাল ফলাফলের এ খরায় হতাশ শিক্ষাবীদ, উদ্বিগ্ন অভিভবাবক মহল। এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে যেখানে ৯.৫১% ছাত্রী জিপিএ-৫ প্রপ্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে, সেখানে ছেলেদর হার মাত্র ৬.৬৩%।
এমনকি মেধানুযায়ী এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলেও জিপিএÑ৫ সহ উত্তীর্ণের হারে বিজ্ঞান বিভাগের পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে মেয়েদের সাফল্যের হার ছেলেদের তুলনায় ঈর্শনীয় বেশী। গোটা শিক্ষা বোর্ডে যেখানে মাত্র ২,২৭৪ ছাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্তির যোগতা অর্জন করেছে, সেখানে মেয়েদের সংখ্যাটা ৩,২৯৪। অপরদিকে এ শিক্ষা বোর্ডে সর্বমোট ৫,৫৬৮ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তির যোগ্যতা অর্জনের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগেই রয়েছে ৪,২৫৮ জন । যার শতকরা হার ৩০.০১%। এ বিভাগেও মেয়েদের সাফল্য ২,৩১০। আর ছেলেদের ১,৯৪৮। মানবিক বিভাগে ৯৮২ ছাত্রÑছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও সেখানে মেয়েদের সংখ্যাই ৭৪৯। আর মাত্র ২৩৩ ছাত্র এ বিভাগে জিপিএ-৫ লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছে। ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে মাত্র ৩২৮ ছাত্র-ছাত্রী জিপিএ-৫ প্রাপ্তির যোগ্যতা অর্জন করেলেও সেখানে ছাত্রী ৩২৮, আর ছাত্র ৯৩। এমনকি এবার মাানবিকের তুলনায় ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ-৫ লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছে কম সংখ্যক ছাত্রÑছাত্রী। মানবিক বিভাগে যেখানে জিপিএ-৫ প্রপ্তির যোগ্যতা অর্জনকারীর সংখ্যা ৯৮২ বা ২.৪৫%, সেখানে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে মাত্র ২.২৪% বা ৩২৮ ছাত্রÑছাত্রী এফলাফরে যোগ্যতা অর্জন করেছে।
সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে যে ৫,৫৬৮ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তির যোগ্যতা অর্জনের করেছে, তার মধ্যে বরগুনার ৭ হাজার পরিক্ষার্থীর মধ্যে ২৬৪ ছাত্রী সহ ৪৫৭ জন, পিরোজপুরের ৮ হাজার ৪শ পরিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৮৮ ছাত্রী সহ ৪০৩জন, ঝালকাঠীর ৪ হাজার ৯শ পরিক্ষার্থীর মধ্যে ১২৭ ছাত্রী সহ ১৭০ জন জিপিএ-৫’এর যোগ্যতা অর্জন করেছে। পটুয়াখালীতে ১৩,৪৫৭ পরিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৬৯৪ জন পরিক্ষার্থী জিপিএ-৫ লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছে। যার মধ্যে ছাত্রীই ৪৬৩। ভোলাতে ১১,০৪৩ পরিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৩৩ ছাত্রী সহ ৭৭৭ জন এবং বরিশালে ২৪,১০৯ পরিক্ষার্থীর মধ্যে ২,৮৯৭ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তির যোগ্যতা অর্জন করলেও তার মধ্যে ১,৬১৯ জনই ছাত্রী।
সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ছেলেদের মধ্যে পড়াশোনা বাদ দিয়ে রাস্তায়, রেষ্ট্রুরেন্ট আর পার্কে আড্ডাবাজির নতুন সংস্কৃতি তাদের পড়ার টেবিল থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে বলে উদ্বিগ্ন শিক্ষাবীদগনও। অভিভাবক মহলে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ঠ উদ্বেগ থাকলেও অনেকের সন্তানই ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে বলে উৎকন্ঠা আরো বাড়ছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাশ না হবার পাশাপাশি কোচিং নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রীকেই নৈতিকতা থেকেও দুরে সরিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ফলাফল খারাপ হবার কারন প্রসঙ্গে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল সহ একাধীক শিক্ষাবীদ তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তাদের সবার মতেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছেলেদের মধ্যে লেখাপড়া অনেকটাই গৌন হয়ে আড্ডাবাজি সহ মোবাইল কালচার মূখ্য হয়ে উঠেছে। এমনকি কোচিং-এর নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়ে তারা রাস্তাঘাট,পার্ক আর রেষ্ট্রুরেন্টে আডা দিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে পরিক্ষার ফলাফল যা হবার তাই হচ্ছে। এমনকি সারা দেশের তুলনায় পাবলিক পরিক্ষায় জিপিএÑ৫ সহ পাশের হার দক্ষিণাঞ্চলে কম হবারও এটা অন্যতম কারন বলে মনে করেন শিক্ষাবীদ সহ অভিভাবক মহল। অভিভাবক মহল থেকে সন্ধার পরে রাস্তা ও পার্কে আডাবাজি বন্ধে আইনÑশৃংখলা বাহিনীকে নৈতিক দায়িত্ব পালনেরও অনুরোধ জানান হয়েছে।
এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে ৪ থেকে <৫ গ্রেড নিয়ে পাশের সংখ্যা ২১,৩৫৬। যা মোট পরিক্ষার্থীর ৩০.৯৯%। জিপিএ ৩.৫ থেকে <৪ নিয়ে উত্তীর্ণের যোগ্যতা অর্জনকারীর সংখ্যা ১৭,১৪১ বা ২৪.৮৭%। ৩ থেকে <৩.৩৫ গ্রেডে উত্তীর্ণের সংখ্যা ১৩,৭২৬ বা ১৯.৯২%। ২ থেকে <২.৩ গ্রেডে পাশের সংখ্যা ১০,৭২১ বা ১৫.৫৬ %। আর ১ থেকে <২ গ্রেডে পাশের সংখ্যা ৪০৮ জন বা ০.৫৯%।
এদিকে গত শণিবার প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের ব্যপারে যেকোন আপত্তি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানালে বোর্ড কতৃপক্ষ তা বিবেচনায় নেবেন বলেও পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন। ১
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন