আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এক, একক এবং তাঁর কোনো শরীক বা অংশীদার নেই। আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : (ক) যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া আরো উপাস্য থাকত, তবে উভয়টিই ধ্বংস হয়ে যেত। (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ২২)। (খ) বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি, এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা ইখলাস : আয়াত ১-৪)। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সর্বদা ছিলেন এবং সর্বদা থাকবেন। অর্থাৎ বিশ্ব স্রষ্টার সূচনা ও শেষ নেই। তিনি চিরন্তন, অনাদি, তিনি অনন্ত। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধুমাত্র তোমার মহীয়ান-গরীয়ান পরওয়ারদিগার ঠিক থাকবেন। (সূরা আর-রাহমান : আয়াত ২৬-২৭)। (খ) ইমাম ত্বাহাবী বলেন : আল্লাহ পাক ‘ক্বাদীম’ অনাদি। তাঁর কোনো আরম্ভ নেই। তিনি চিরস্থায়ী। তাঁর কোনো শেষ নেই। আল্লাহ পাকের নাম ‘আল আউয়্যাল’ (প্রথম) আল আখীর (শেষ) দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে। তাঁর জন্য এ দুটিগুণ যুক্তিগ্রাহ্যও বটে। (আকীদায়ে ত্বাহাভিয়্যাহ মায়াশ শারহে-পৃষ্ঠা ১১১)।
(গ) আল্লাহতায়ালা ওয়াজিবুল ওজুদ। আর এর অর্থ হলো তাঁর ধ্বংস হওয়া বা তাঁর অস্তিত্ব লুপ্ত হওয়া অসম্ভব। অতঃপর তাঁর অনাদি অনন্ত হওয়া ভিন্নভাবে প্রমাণ করার কোনো আবশ্যকতা থাকে না। (শরহুল মাকাসিদ : ৩/১৬)।
বস্তুত : সর্ব প্রকার দাসত্ব, আনুগত্য ও ইবাদত বন্দেগী পাওয়ার যোগ্য সত্তা একমাত্র আল্লাহতায়ালা। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদত বন্দেগী পাওয়ার যোগ্য নেই। এতদ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি রহমান, তিনি রাহীম। (সূরা বাক্বারাহ : আয়াত ১৬৩)।
(খ) নিশ্চয়ই আমিই আল্লাহ। আমি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত করো। (সূরা ত্বাহা : আয়াত ১৪)। (গ) আমরা কেবল মাত্র তোমারই ইবাদত করি ও তোমারই সাহায্য কামনা করি। (সূরা আল ফাতিহা : আয়াত ৪)।
সকল আধিপত্যের অধিকারী ও পরম বিজ্ঞানময় আল্লাহ তায়ালাই হালাল-হারাম নির্ধারণকারী। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো হালাল হারাম নির্ধারণ করার অধিকার নেই। আল কোরআনে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : (ক) তিনি তোমাদের ওপর মৃত প্রাণী, প্রবাহিত রক্ত, শুকরের গোশত ও আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যের নামে যবেহকৃত ও উৎসর্গকৃত প্রাণী হারাম করেছেন। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৭৩)।
(খ) আল্লাহতায়ালা ক্রয় বিক্রয় হালাল করেছেন আর সুদ ও কুসীদ হারাম করেছেন। (সূরা বাক্বারাহ : আয়াত ২৮৫)। (গ) বলুন, আল্লাহপাক স্বীয় বান্দাহদের জন্য যে সৌন্দর্য-শোভা ও পবিত্র রিযিক নির্ধারণ করেছেন, তা’ কে হারাম করতে পারে? (সূরা বাক্বারাহ : আয়াত ৩৩)। (ঘ) বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মাদ মুস্তাফা (সা.) বলেছেন : আমি হালাল বস্তুকে হারাম ঘোষণা করা এবং হারাম বিষয়কে হালাল ঘোষণা করার অধিকার রাখি না। (সহীহ বুখারী) : ১/৪৩৮)।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সকল সিফাতে জাতিয়া অর্থাৎ মৌলিক গুণাবলীর অধিকারী। তাঁর মৌলিখ গুণাবলীর মধ্যে প্রথমটি হল হায়াতের গুণ। সিফাতে জাতিয়া বলতে ঐ সব গুণকে বলা হয়, যাতে তিনি গুণান্বিত তো বটেই, এর বিপরীতগুণ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। যেমন হায়াত (জীবন), কুদরাত (ক্ষমতা) ইলম (জ্ঞান), ইরাদা (ইচ্ছা), শ্রবণ, দর্শন, কথন, সৃষ্টি করণ ও অস্তিত্বদান ইত্যাদিগুণ আল্লাহতে বিদ্যমান। এগুলোর বিপরীতগুণ যথা-মরণ, অক্ষমতা, অজ্ঞতা, ইত্যাদি তাকে স্পর্শ করতে পারে না। সিফাতে হায়াতের অর্থ হলো আল্লাহতায়ালা চিরঞ্জীব। তিনি অনন্ত ও প্রকৃত জীবনের অধিকারী। তিনি সর্বদা বিরাজমান। সৃষ্টি জীবকে তিনিই জীবন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন