কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে নির্মিত স্থায়ী বাঁধের পাড় ঘেষে অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে বালি। ফলে আবারও হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে শতকোটি টাকা ব্যয়ে ব্লক দ্বারা নির্মিত স্থায়ী বাঁধ। উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি ও ইসলামপুরে স্থায়ী বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় অবাধে কাটা হচ্ছে বালি। এলাকার প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে বালিকাটার এ উৎসবে মেতেছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, ফিলিপনগরের গোলাবাড়ি ও ইসলামপুরে স্থায়ী বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় বাঁধ থেকে মাত্র দেড়শ’ থেকে দুইশ’ গজ নিকটে পদ্মা নদীর পাড় ঘেষে অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে বালি। প্রতিদিন শত শত ট্রলি ভর্তি বালি সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বালি কাটার সাথে জড়িত থাকার কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, যেভাবে পদ্মা নদীর পাড় ঘেষে বালি কাটা হচ্ছে তাতে আগামী বর্ষা মৌসুমেই বাঁধে ধস নামবে। আবারও বাড়ি-ঘর পদ্মা গর্ভে বিলীন হবে, সেইসাথে সহায় সম্পদ হারা হতে হবে আমদের। এছাড়াও অবৈধভাবে বালি কাটার ফলে পদ্মা নদী তীরবর্তী ফসলি বা আবাদি জমিও ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হবে। কিন্তু যারা বালি কাটছে তারা এলাকার ভয়ংকর প্রভাবশালী, তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে সাহস করে না। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই থেকে তিনশ’ ট্রলি বালি কাটা হয়ে থাকে। আর এসব ট্রলি থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে থাকেন একটি প্রভাবশালী চক্র। আদায় হওয়া এ অর্থ উচ্চ পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত অনেকের মধ্যেই ভাগ বন্টন হয়ে থাকে বলে এলাকাবাসী জানান।
এলাকাবাসী আরও জানান, ফিলিপনগরের গোলাবাড়ি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্লকের স্থায়ী বাঁধ ঘেষে একই এলাকার ভাদু মন্ডলের ছেলে সাইদের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের উৎসবে মেতেছে। প্রতিদিন রাতে ও দিনে ওই চক্রটি শত শত ট্রলি বালি কেটে পুকুর ভরাটসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। ট্রলি প্রতি ৫শ’ টাকা করে আদায় করে থাকেন সাইদ। প্রতিদিন কমপক্ষে একশ’ ট্রলি বালি উত্তোলন করা হলে শুধুমাত্র গোলাবাড়ি এলাকা থেকে কমপক্ষে অর্ধলক্ষ টাকা আদায় হয়ে থাকে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
এছাড়াও ফিলিপনগরের ইসলামপুর এলাকাতেই পদ্মা নদীর পাড় ঘেষে অবৈধভাবে বালি কাটা হচ্ছে। ইসলামপুর এলাকার রনি, টেটন ও রাকিবুলের নেতৃত্বে চক্রটি প্রতিদিন বালি কাটায় লিপ্ত রয়েছে। পদ্মা নদীর পাড় ও বাঁধ ঘেঁষে বালি কাটার ফলে প্রতিবছরই পদ্মা নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকে। গত বর্ষা ও বন্যা মৌসুমেও পদ্মার ভাঙনে শত শত বিঘা ফসলী জমি বিলীন হয়েছে। ভুরকা এলাকায় পদ্মা নদী থেকে মাত্র কয়েক শত গজ দূরে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বিদ্যুতের খুটি। যা রয়েছে হুমকির মুখে।
পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালি কাটার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বালি কাটার বিষয়টি এসিল্যান্ডকে জানানোর কথা বলেন এবং বালি কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ১১২ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তবে এভাবে বালি কাটা অব্যাহত থাকলে পদ্মার ভাঙনে এ বাঁধেও ধস নামবে এমন শঙ্কায় রয়েছেন গোলাবাড়ি ও ইসলামপুরসহ ফিলিপনগরবাসী। তাদের দাবি প্রভাবশালী মহলের অবৈধভাবে বালিকাটা বন্ধে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন