আল্লাহর পবিত্র-পাক কালাম আল কোরআনের তাফসির ও দ্বীনি বহু উপহার তুরস্কের ভূমিকা এবং ডেনমার্কে মসজিদে হামলা ও পবিত্র কোরআন সম্পর্কে মসজিদের দেয়ালে আপত্তিকর লেখা সংক্রান্ত দুইটি খবর পত্রিকায় গত ২৬ জানুয়ারি একই দিন ছাপা হয়েছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রথম খবরটি দুনিয়াময় ইসলামের তথা কোরআনি শিক্ষার আলো বিস্তারে তুরস্কের সুদূরপ্রসারী ভূমিকা নির্দেশক। দ্বিতীয় খবরটি ডেনমার্কের কোরআনবিরোধী, ইসলামবিদ্বেষী চক্রের নগ্ন রূপ উন্মোচক।
১. ৮০ দেশে তুরস্কের কোরআন প্রচার: বিভিন্ন দেশে মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামের নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান মুসলিম উম্মার দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। ৮০ দেশে কোরআনের তাফসির ও দ্বীনি বই উপহারের ঘটনা এ যুগে তুরস্কের শ্রেষ্ঠ কীর্তি হিসেবে বিবেচিত হবে। ইসলামের দেড় হাজার বছর পরও জিবুতিসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মানুষ কোরআন পড়তে কাঠের তক্তা বা সিলেট ব্যবহার করে। তাদের এই কষ্ট অনুভব করেই তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বিশেষ উদ্যোগে পবিত্র কোরআনের কপি উপহার দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
২.
খবরটি যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক ও অনুপ্রেরণাদায়ক। এ মহান উদ্যোগ সমগ্র মুসলিম দুনিয়ার বিপুল প্রশংসা লাভ করে। তবে জিবুতিসহ আফ্রিকার যে সব দেশে কোরআন পড়তে কাঠের তক্তা বা সিলেট ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে তা কোনো সুখকর তথ্য নয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে কোরআন সংকলনের যে ইতিহাস রয়েছে এ খবর সে ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। দেড় হাজার বছর পর আজকের জাগ্রত আফ্রিকার যে স্থানে মুসলমানদের কাঠের তক্তা বা সিলেটের মাধ্যমে কোরআন পড়তে হয়, তারই প্রেক্ষিতে তুরস্কের এ ভ‚মিকা।
অপ্রিয় হলেও এ কথা সত্য যে, ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) নামে মুসলিম উম্মার বৃহত্তর ঐক্যের প্রতীকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি তার ইতিহাসের অর্ধ শতক ইতিমধ্যেই পূর্ণ করেছে। আফ্রিকারও বহু মুসলিম রাষ্ট্র এ সংস্থার সক্রিয় সদস্য, অথচ সেখানে বিভিন্ন দেশে কাঠের তক্তা বা সিলেট ব্যবহার কোরআন পাঠ করার ঘটনা রীতিমত বিস্ময়কর এবং এ ঘটনা ওআইসির দৈন্য দশার কথাই প্রমাণ করে। সংস্থাটি বৃহত্তম মুসলিম ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে, তা অনুধাবণ করতে হলে বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিই প্রকৃষ্ট প্রমাণ। সত্য এই যে, কোরআন প্রচারে যে ভ‚মিকা বর্তমানে তুরস্ক নিয়েছে, সে দায়িত্ব ছিল মূলত: ওআইসির এবং আলাদাভাবে প্রত্যেক মুসলিম রাষ্ট্রেরই।
তুরস্কের ধর্ম মন্ত্রণালয় ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত বিশে^র অন্তত ৮০টি দেশে এক কোটি মুসলমানের হাতে কোরআনের প্রতিলিপি পৌঁছে দিয়েছে। তাদের বিশ্বাস, হয়তো তাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে পৃথিবী নৈতিক উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে। বিশ্ব মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের সনদ আল কোরআনকে এরূপ ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম কেবল তুরস্ক নয়, প্রত্যেকটি অর্থশালী মুসলিম রাষ্ট্রের উচিত কোরআন শিক্ষাকে প্রত্যেক মুসলমানের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা এবং এ জন্য জাতীয়-রাষ্ট্রীয়ভাবে যার যার সুযোগ-সক্ষমতা অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তুরস্ক সরকার কৃর্তক বিতরণকৃত কোরআনের প্রতিলিপির সংখ্যা সর্বমোট ৯০ লাখ ৭৭ হাজার ১০১ কপি। আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এসব প্রতিলিপি বিতরণ করা হয় বলেও খবরে উল্লেখ করা হয়। কোরআনের প্রতিলিপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের বা রাষ্ট্রের জাতীয়-সরকারি ভাষায় অনুবাদ, ব্যাখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হলে অধিক ফলপ্রসু হবে বলে আশা করা যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন