এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর উপস্থিতিতে মসজিদে নববীতে এসে নামাজ পড়ল। এটি ছিল তার বিপদমুক্তি বা সাহায্য প্রার্থনার নামাজ। লোকটি সালাম ফিরিয়েই দু’হাত তুলে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা শুরু করল। নবী করিম (সা.) তখন তাকে দেখে বললেন, হে লোক তুমি কিন্তু খুব তাড়াহুড়া করে ফেললে। এদিকে এসো, তোমাকে দোয়া করা শিখিয়ে দেই। লোকটি কাছে এলে নবী করিম (সা.) বললেন, নামাজ শেষে তোমার উচিত ছিল মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা। এরপর তার রাসুল (সা.)-এর ওপর দুরুদ ও সালাম পেশ করা। এরপর নিজের আবেদন তুলে ধরা। লোকটি তখন এভাবেই দোয়া করতে লাগল।
আমরা অনেকেই দোয়ায় তাড়াহুড়া করি, এর আদব বজায় রাখি না। অথচ, বারবার দোয়া করলে কবুল হবেই। একজন লোক যখন প্রতিদিন তিনবার জাহান্নাম থেকে পানাহ চায়, তখন জাহান্নামই আল্লাহর কাছে বলে, হে আল্লাহ লোকটিকে তুমি মুক্তি দিয়ে দিন। যখন কেউ তিনবার প্রতিদিন আল্লাহর নিকট জান্নাত চায়, তখন জান্নাত নিজেই আল্লাহকে বলে, হে আল্লাহ, লোকটিকে আপনি জান্নাত দিয়ে দিন। তাই দোয়া সারাজীবন করতে থাকা উচিত। অধিক হারে দুরুদ শরীফ পড়তে থাকা উচিত। কারণ, আমাদের মহানবী আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয়।
যে দোয়া আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু রাসুলিহিল কারীম বলে শুরু হয় সেটি সহজে কবুল হয়। দোয়ার শুরুতে সূরায়ে ফাতেহা ও দুরুদ শরীফ পাঠ করা বিশেষ আদব। একবার হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) বললেন, হুজুর আমি কি আমার বিশেষ দোয়া মুনাজাতের সময় মোট দোয়ার এক চতুর্থাংশ দুরুদ শরীফ পড়ব? হুজুর জবাবে বললেন, পারলে আরও বাড়িয়ে দাও। হযরত উবাই বিন কা’ব বললেন, তাহলে কি এক তৃতীয়াংশ? হযরত (সা.) বললেন, যদি আরও বাড়াও তাহলে বেশি উত্তম। হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) বললেন, তবে কি অর্ধেক দোয়াই দুরুদ শরীফ পড়ব? হুজুর (সা.) বললেন, পড়তে পারো। তবে, আরও বেশি পড়লে উত্তম।
অন্য এক হাদীসে আছে, এক সাহাবী জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) আ আজআলু নিসফা দোয়ায়ি আস সালাত আলাইক? অর্থাৎ আমি কি আমার দোয়ার ৫০% আপনার ওপর দুরুদ পড়বো? হুজুর (সা.) বললেন, আরও বাড়াও। তখন সাহাবী বললেন, আজআলু কুল্লা দোয়ায়ি আস সালাত আলাইক? হুজুর, আমি আমার ১০০% দোয়ায় কেবল আপনার ওপর দুরুদ ও সালামের মাধ্যমে শেষ করে দেব। হুজুর (সা.) এতে সম্মতি দেন।
মানুষের গোনাহমুক্তি, বিপদ দূর ও সব সমস্যা সমাধানে আল্লাহর নবীর ওপর সালাত, সালাম ও শ্রদ্ধা নিবেদনের চেয়ে উত্তম আর কোনো পন্থা হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা নিজে মুমিনদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তার নবীর ওপর সদা সর্বদা প্রীতি ও দয়া বর্ষণ করতে থাকেন। আল্লাহর ফেরেশতারাও নবী (সা.)-এর জন্য দোয়া শুভাশিস ও স্বাগতবাণী পেশ করতে থাকে। তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তারাও নবীর ওপর খুব আন্তরিকভাবে অধিকহারে উত্তমরূপে দুরুদ ও সালাম পেশ করতে থাক।
সৌদি আরবের প্রখ্যাত আলেম ও ইসলামিক স্কলার ড. সালেহ আল মাগামেসী তার অভিজ্ঞতা বলেন, আমার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। আমি বেঁচে যাই এবং অপারেশন সাকসেসফুল হয়। তখনও আমার দেহে সব যন্ত্রপাতি লাগানো, কয়েকদিন পর যখন আমাকে ছাড়ার সময় হলো, তখন ডাক্তারদের ঘন ঘন আনাগোনা ও উদ্বিগ্ন চেহারা দেখে আমি কিছুটা চিন্তিত হই। একসময় আমি জানার জন্য সার্জন প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করি, আমার অবস্থা আসলে কেমন? সত্যিই কি আমার অপাশেন ঠিকঠাক মতো হয়েছে? তখন ডাক্তার আমাকে বলেন, আপনার হার্টের সেনসেটিভ জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে। আমরা কয়েকদিন অপেক্ষা করেছি, আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি আবার ওপেন হার্ট করবা এছাড়া উপায় দেখছি না।
আমি বললাম, এটি না করার কি কোনো উপায় নাই। ডাক্তার বললেন, এ কয়েকদিন আমরা অনেক চেষ্টা, চিন্তা করে আজ সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হয়েছি। তখন আমি বললাম, আমাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিন। ডাক্তাররা প্রস্তুতি নিতে গেলেন। এরমধ্যে আমার অবস্থা দেখে একজন লেবানিজ নার্স আমার কাছে এসে বললো, শায়খ আপনি এখন কি ভাবছেন? আমি বললাম, কিছুই ভাবছি না। মনে হচ্ছে আর বাঁচা হবে না। এত দুর্বল অবস্থায় একটির ওপর আরেকটি ওপেন হার্ট আমি সহ্য করতে পারব না। তাই, তাশাহুদ পাঠ করছি। মানে আল্লাহর নিকট তওবা ও বিদায়ী কালেমা পাঠ ছাড়া এখন আর আমার করণীয় কিছুই নেই।
নার্স মেয়েটি বললো, আল্লাহ আপনাকে অপারেশন ছাড়াই রহম করতে পারেন। আপনি খাস দিলে দুরুদ শরীফ পড়তে থাকুন। ইনশাআল্লাহ বিপদ কেটে যাবে। আমি তাই করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক দল এসে আমার পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে শরু করলেন। তারা দেখতে পেলেন, আমার হৃদপিন্ডে জমাট বাঁধা রক্ত উধাও হয়ে গেছে। তারা বহু স্ক্যান ও নানারকম টেস্ট করেও সেই সমস্যাটি আর খুঁজে পেলেন না। অতঃপর আমাকে ছেড়ে দিলেন। আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে যে, আমাদের মহানবী (সা.) তিনি আল্লাহর কত প্রিয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন