মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লার রহমতের আশা : পরকালে মুমিনের সম্বল

শিববীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৪ এএম

দু’দিনের এ পার্থিব জীবনে আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক আনুগত্য ও ইবাদত করে গেছেন যিনি, তিনি যে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এ নিয়ে কি আর কোনো দ্বিমত আছে! তাঁর আমল-ইবাদত যে সকল মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ-তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! তিনিও যদি বলেন, আমার আমল আমাকে নাজাত দিতে পারবে না; তাহলে আমরা নিজেদের ব্যাপারে কেমন এক নিরাশায় যেন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি! সৃষ্টিকুলের সেরা মানবকাফেলা আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামেরও যিনি সর্দার, তিনিই যদি নিজ আমল দিয়ে জান্নাতে যেতে না পারেন, তাহলে আমাদের কী দশা হবে! ভাবতেই কেমন শরীর কেঁপে ওঠে! অথচ এটাই বাস্তবতা।

প্রিয় নবীজী (সা.)-এর কণ্ঠেই শুনুন : নিজ আমল কাউকেই জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবে না! সাহাবায়ে কেরামের সচকিত প্রশ্ন : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকেও নয়?! রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : না, আমাকেও নয়, যদি না আল্লাহ দয়া ও অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে জড়িয়ে নেন। নবীজী (সা.)-র এ কথাটুকু থেকেই আমরা আশায় বুক বাঁধতে পারি। যে রাহমানুর রাহীমের দয়ায় তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন, দয়াময় সেই সত্তার নিকট তো রহমতের আশা আমরাও করতে পারি। হাদীসের শেষাংশটুকু লক্ষ করুন : তাই তোমরা ইবাদতে সঠিক পন্থা অবলম্বন করো এবং ইবাদত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে বেঁচে থেক। আর তোমাদের কেউ যেন মৃত্যুর কামনা না করে। সে যদি সৎকর্মপরায়ণ হয় তাহলে সে হয়তো কল্যাণের পথে আরও এগিয়ে যাবে, আর যদি পাপীও হয় তাহলে হতে পারে, সে পাপ থেকে তওবা করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হবে। (সহীহ বুখারী : ৫৬৭৩)।

আমাদের আশাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে এই একটি মাত্র হাদীসই যথেষ্ট, যেখানে বলা হচ্ছে- ১. নিজের যোগ্যতা ও আমল নয়, বরং আল্লাহ পাকের দয়া ও অনুগ্রহই হলো সকল সফলতা ও মুক্তির মূল; ২. ইবাদত করতে গিয়েও নিজের সাধ্য ও সক্ষমতার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, এড়িয়ে চলতে হবে সাধ্যাতিরিক্ত সকল পদক্ষেপ; ৩. মৃত্যু কামনা করতে পারবে না কেউ। ভালো হলেও নয়, খারাপ হলেও নয়। আর ভালো-মন্দ মিলিয়েই তো মানুষ। নবীজী (সা.) আমাদের আশা দিয়েছেন- হায়াত দীর্ঘ হলে ভালো কাজ আরও বাড়তে পারে, আর মন্দ কাজ থেকে ফিরে আসার সৌভাগ্যও মিলে যেতে পারে।

এ জীবনে টিকে থাকতে হলেও আশা অপরিহার্য। আশার পিঠে চড়েই মানুষ বিপদের পর বিপদ মাড়িয়ে যায়। সারা জীবনের সঞ্চয়ও যখন আকস্মিকভাবে হারিয়ে যায়, বাহ্যত সামনে এগিয়ে যাওয়ার সব অবলম্বনও যখন ‘নাই’ হয়ে যায়, তখনো মানুষ বুকভরা আশা নিয়ে দাঁড়ায়। কষ্ট করে হলেও সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে এবং সেই স্বপ্নের পথে চলার সাহস সঞ্চার করে। একজন সুস্থ মানুষ, যত বিপদেই সে পড়ুক, তা পাশ কাটিয়ে সামনে চলার স্বপ্ন সে দেখবে, আশায় ভর করে সে বিপদ থেকে উঠে দাঁড়াবে-এটাই স্বাভাবিকতা।

দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী এ জীবন নিয়ে সুন্দর স্বপ্ন দেখা- এক্ষেত্রে ধনী-গরিব সবাই সমান। একজন কোটিপতি যেমন নিজের ও পরিবার-পরিজনের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে, মৃত্যু অনিবার্য জেনেও দুনিয়ার এ জীবনে কামনা করে আরও সুখের, আরও সম্পদের, আরও সম্মানের, তেমনি ‘দিন এনে দিন খায়’ এমন একজন বিত্তহীন মানুষও তার মতো করে স্বপ্ন দেখে আরেকটু সুখের, সম্পদের ও সম্মানের, আরেকটু আরামদায়ক জীবনের।

এই স্বপ্ন এই আশাই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই যে কথায় বলে- জীবন থেমে থাকে না! জীবন চলবেই। আর আশাই হলো সেই চলার চালিকাশক্তি। বারবার আশাহত হতে হতে কারো আশা কখনো দুর্বল হতে পারে, একসময়ের রঙিন জীবনের পরিবর্তে এখন সে সাদামাটা ভবিষ্যতের আশা করতে পারে। কিন্তু আশা থাকবেই। এটাই বাস্তব। সামনে চলার জন্য এর বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
বাশীরুদ্দীন আদনান ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:২৫ এএম says : 0
আল্লাহর রহমত ছাড়া আমাদের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়
Total Reply(0)
জাফর ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:১২ এএম says : 0
নেক আমল না করে এবং গোনাহ ছেড়ে তওবা না করে পরকালীন মুক্তির জন্যে আল্লাহ পাকের রহমতের আশায় বসে থাকা বোকামি।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:১৩ এএম says : 0
আমরা আমাদের সুখময় ও সমৃদ্ধ পরকাল নির্মাণের জন্যে আল্লাহর রহমতের আশাবাদী।
Total Reply(0)
সোলায়মান ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:১৫ এএম says : 0
পরকালীন জীবনে আল্লাহর রহমতের আশাই সম্বল। পরকালীন জীবন যেন সমৃদ্ধ হয়, সুখকর ও আনন্দময় হয়, সেজন্যও আমলের সাথে সাথে আল্লাহর রহমতের আশাই আমাদের পাথেয়।
Total Reply(0)
রোমান ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:১৫ এএম says : 0
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন