ধান-লিচুর জেলা দিনাজপুরে এবার আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত বছর আলুর সঙ্কট এবং অতিরিক্ত দামের কারণে কৃষকরা এবার আলুর ফলনে বিল্পব ঘটাতে চলেছে। ধানের পাশাপাশি সঙ্কট মোকাবিলায় কৃষকদের বিভিন্ন ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণে এখন কৃষকেরাও টাকার মুখ দেখছে।
এদিকে ভালো আবহাওয়া এবং টানা শৈতপ্রবাহ না থাকায় আলুর ক্ষেতে রোগ বালাই নাই বললেই চলে। ফলে কৃষকেরা আলুর ফলন নিয়ে খুব খুশি। তবে বাম্পার ফলনের পরও যদি দাম নেমে যায় তাহলে কৃষকের কপাল পুড়বে। তাই এখন থেকেই আলুর দাম নিশ্চিত করার বিষয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে সজাগ হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
খাদ্যে উদ্বৃত্ত দিনাজপুর জেলাকে ধানের জেলা বলা হতো। দিনাজপুর জেলায় চালের আকারে খাদ্য চাহিদা হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন। সে ক্ষেত্রে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষকের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় দিনাজপুর জেলা পর্যায়ক্রমে আম-লিচু-ভুট্টাতে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে। এবার দখল করতে শুরু করেছে আলু। কথায় আছে যত সঙ্কট ততই আশান।
গতবারের আলুর কৃত্রিম সঙ্কট কৃষকদের উৎসাহিত করেছে। ফলে এবার আলু উপযোগী অধিকাংশ জমিতে আলু রোপণ করেছে। ইতিমধ্যেই আলু তুলতে শুরু করেছে কৃষকেরা। গতবারের চেয়ে এবার দিনাজপুর জেলায় ৪ হাজারের বেশি জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এবার মোট ৪৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ আশা করছে দশ লাখ ৭১ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের।
সাধারনত দেশীয় আলুর পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল জাতের কারেজ, কার্ডিয়াল, স্টারিক্স, ডায়মন্ড, রুমানা, গ্রানুলাসহ বিভিন্ন জাতের আলু আবাদ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে ১৮ থেকে ২২ টন আলু উৎপাদিত হয়ে থাকে। আলু আবাদে কিটনাশকের খরচ অনেক কম। বীজ ভাল হলে ছাইসহ স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত সার যথেষ্ট হয়ে থাকে। এদিকে আলু উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে ওই জমিতে বোরো আবাদ করে থাকে কৃষকেরা।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইসলাম জানালেন গতবার আলুর কৃত্রিম সঙ্কট এবং অতিরিক্ত দামের কারণে প্রান্তিক কৃষকেরা অতিষ্ট হয়ে উঠে। চ্যালেঞ্জ হিসাবে আলু আবাদে ঝুঁকে পড়ে। মাঠের পর মাঠ এখন আলুতে ভরপুর। আলুর ফলন দেখে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান বীজ উৎপাদন ও বিপণনে মাঠে নেমেছে। চলছে রমরমা ব্যবসা। কৃষকদের মাটিতেই বীজ উৎপাদনে সহযোগিতা প্রদান করার মাধ্যমে উৎপাদিত বীজ ক্রয় করে নিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলি কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করছে। কৃষি বিভাগ আশা করছে আগামীতে কৃষি প্রধান দিনাজপুর জেলা আম-লিচুর মতো আলু উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন