মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হে আল্লাহ! আমাদের নরকাগ্নি হতে বাঁচান

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৫ এএম

ইসলামী বিশ্বাসমতে পাপাচারীদের শাস্তির জন্য রয়েছে জাহান্নাম এবং অগ্নিগহ্বর। এ শাস্তি তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে, যারা তাদের প্রভু ও প্রতিপালককে অস্বীকার করেছে। আল কোরআনে স্পষ্টতই বলে দেয়া হয়েছে : অতঃপর যারা হতভাগ্য তারা থাকবে অনলকুন্ড এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে চিৎকার ও আর্তনাদ; সেখানে তারা স্থায়ী হবে ততদিন পর্যন্ত যতদিন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে, যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন। (সুরা হুদ : আয়াত ১০৬-১০৭)।

৭ সংখ্যাটি আল্লাহপাকের প্রশাসনের প্রতি ইঙ্গিতবহ। আল্লাহপাক আল কোরআনে পাপী, অপরাধী ও নাফরমানদের শাস্তি প্রদানের কথা ঘোষণা করেছেন। শাস্তি প্রদানের স্থান হলো জাহান্নাম ও নার উভয় শব্দের আক্ষরিক অর্থ আগুন, নরকাগ্নি। ‘জাহান্নাম শব্দটি আল কোরআনে ৭৭ বার এসেছে এবং ‘নার’ শব্দটি এসেছে ১৪৫ বার। দুঃখময় ও কঠোর শাস্তির স্থানই হলো ‘জাহান্নাম’ ও নার।

জাহান্নাম ও নার-এর মধ্যে অপরাধ অনুপাতে শাস্তির তারতম্য হবে। এ তারতম্যের ভিত্তিতে জাহান্নামের ৭টি স্তরের কথা আল কোরআনে বিবৃত আছে। যথা : ১. প্রথম স্তর- ‘জাহান্নাম’। আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : আর যখন তাকে বলা হয়, আল্লাহকে ভয় কর, তখন তার আত্মাভিমান তাকে পাপ করতে উৎসাহ দেয়। সুতরাং জাহান্নামই তার জন্য যথেষ্ট এবং তা কতইনা মন্দ ঠিকানা। (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২০৬)। ২. দ্বিতীয় স্তরÑ ‘হাবিয়াহ’: আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : আর যার (নেকের) পাল্লা হালকা হবে, তার নিবাস হবে হাবিয়াহ। (সূরা ক্বারিয়া : আয়াত ৮-৯)।

৩. তৃতীয় স্তর- ‘জ্বাহিম’ : আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় আমি তোমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছি, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে এবং তোমাকে আগুনের অধিবাসী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। (সুরা-বাকারাহ : আয়াত ১১৯)।

৪. চতুর্থ স্তর- ‘সাক্বার : আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : অচিরেই আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাব। কিসে তোমাকে জানাবে সাক্বার কি? এটা কোনো কিছু অবশিষ্ট রাখবে না এবং ছেড়েও দেবে না। (সুরা মুদ্দাসসির : আয়াত-২৬)।

৫. পঞ্চম স্তর- ‘সায়ীর’ : আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় যারা এতিমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, তারা তো তাদের পেটে আগুন খাচ্ছে। আর অচিরেই তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। (সুরা নিসা : আয়াত ১০)।

৬. ষষ্ঠ স্তর- ‘হুতামাহ’ : আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : কখনো না, অবশ্যই সে হুতামায় নিক্ষিপ্ত হবে। আর কিসে তোমাকে জানাবে ‘হুতামাহ’ কি? (তা) আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন, যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। (সুরা হুমাযাহ : আয়াত ৪-৫-৬-৭)।

৭. সপ্তম স্তর- ‘লাযা’ : আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে : কখনো না, এটা তো লেলিহানময় আগুন, যা মাথার চামড়া খসিয়ে নেবে। (সুরা মায়ারিজ : আয়াত ১৫-১৬)। জাহান্নামের আগুনকে ৩ হাজার বছর উত্তাপ দেয়া হয়েছে। প্রথম হাজারে তার রং লালবর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয় হাজারে শ্বেতবর্ণ ধারণ করেছে। তৃতীয় হাজারে নিবিড় কালো অন্ধকারে রূপান্তরিত হয়েছে। (জামে তিরমিজি : ৫ম খন্ড, জাহান্নাম পরিচ্ছেদ)।

দুনিয়ার ভোগবিলাস (ও আল্লাহর নাফরমানি-জাহান্নামকে পরিবেষ্টন করে আছে। (মোসনাদে আহমদ : ১২/৭৫২৯)। যারা ‘বেঈমান, নাফরমান, কাফির, মুশরিক, মোনাফেক, পাপী, দুরাচার, যাদের গোনাহের পাল্লা ভারী হবে, তাদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরাক্বাফ : আয়াত-২৪)।

জাহান্নামের অগ্নি দুনিয়ার অগ্নি হতে ৭০ গুণ বেশি দাহিকা শক্তিসম্পন্ন হবে। (সহিহ মুসলিম : জাহান্নাম পরিচ্ছেদ : ৭ম খন্ড, পৃ. ৩৩২)। প্রকৃতই জাহান্নাম ও তার শাস্তি কাফির, মুশরিকদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে। কোনো মুসলমান ঘটনাক্রমে তাতে প্রবেশ করলেও এক সময় তাকে বের করে আনা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টতই বলেছেন : যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে ও তার অন্তরে যবের ওজন পরিমাণ ঈমান আছে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। (জামে তিরমিজি : ২/৫৪০)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
দুলাল ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:১৬ এএম says : 0
আমিন
Total Reply(0)
জুয়েল ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:১৮ এএম says : 0
আল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানকে জাহান্নামের আগুন ও কষ্টদায়ক শীতলতা ইত্যাদি শাস্তি থেকে মুক্তি দিন। আমিন।
Total Reply(0)
বুলবুল আহমেদ ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:১৯ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে অচিরেই আমি তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো, যখনই তাদের চামড়া জ্বলে যাবে তাদেরকে ভিন্ন চামড়া দিয়ে পরিবর্তন করে দিবো যাতে করে তারা পরিপূর্ণভাবে আযাব অনুভব করতে পারে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী এবং প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা, আয়াত ৫৬)
Total Reply(0)
রুহান ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:২২ এএম says : 0
কোরআনের বিধান অনুযায়ী কেবল ইমানদাররা জান্নাতে যাবেন। আর কাফিররা বা যারা ইমান আনেননি তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবেন। এটা আল্লাহতায়ালার মৌলিক নীতি। কিন্তু এমন কিছু ইমানদার রয়েছেন, যারা মুসলমান হওয়ার কারণে জান্নাতে যাবেন। তবে এর আগে জাহান্নাম থেকে পাপের শাস্তি ভোগ করে আসবেন।
Total Reply(0)
ডালিম ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:২২ এএম says : 0
আল্লাহর নির্দেশিত পথে আমাদেরকে চলতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন