মুসলমানরা জ্ঞানের সাধক। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে ঈমানদার সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রথম বাণী ছিল ‘পড়’। নবী করিম (সা.) বলেছেন, আমাকে প্রেরণই করা হয়েছে বিশ্ব মানবতার শিক্ষকরূপে।
ইসলামের প্রথম দিন থেকে এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত জ্ঞান ও শিক্ষা। বিশেষ করে পবিত্র কোরআন, মহান সুন্নাহ, দীর্ঘ প্রায় দেড় হাজার বছরের বৃহৎ ও বিশ্বময় গড়ে উঠা ইসলামী মহাগ্রন্থাগারের সাথে দুনিয়ার আর কোনো ধর্ম, জাতি ও সভ্যতার তুলনাই হয় না। শিক্ষা ও বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে অন্তত সাড়ে তেরশ’ বছর মুসলিম জাতি বিশ্বকে দার্শনিক ও ব্যবহারিকভাবে অতুলনীয় সফল নেতৃত্ব দিয়েছে। দুনিয়ার সকল শুভকর জ্ঞান, বিজ্ঞান ও দর্শন আল্লাহর তরফ থেকে ওহী কিংবা ইলহামের মাধ্যমে এসেছে।
একজন ব্যক্তি, বিজ্ঞানী বা মনীষীর অন্তরে ও ভাবনায় ‘ইলকা’ করেও কল্যাণকর বহু কিছু মানবজাতির জন্য আল্লাহ দান করেছেন। অতীতের এসব জ্ঞান, আল্লাহর নামে যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একটি ঝুলন্ত বস্তুর বিকাশ পরিক্রমার মাধ্যমে। এসব জ্ঞান মহান আল্লাহর নামে পড়তে বলা হয়েছে, যিনি মানুষকে শিক্ষা দান করেছেন কলমের মাধ্যমে। আজও পর্যন্ত দুনিয়ার সব দার্শনিক ও বাস্তবিক জ্ঞান এবং বর্তমানে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জয়জয়কার এসবের আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পথ প্রদর্শক, অগ্রপথিক হলেন ইসলামের অনুসারী ব্যক্তিগণ।
ইসলাম ছাড়াও মুসলিম শাসকরা সারা বিশ্বের সব অঞ্চলের বিলুপ্তির শিকার জ্ঞান, শিক্ষা ও ভাব সম্পদকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে জিইয়ে রেখেছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে এক দেড়শ’ বছর কিংবা আরো বড় ফ্রেমে আড়াই থেকে তিনশ’ বছর ধরে মুসলিম জাতি বিশ্বের সকল বিদ্বেষী ও শত্রুর দ্বারা চরমভাবে আক্রান্ত ও পর্যুদস্ত। শত্রুর চতুর্মুখী ও সম্মিলিত এমন আক্রমণে, আল্লাহ তায়ালার কোরআন ও দীন হেফাজতের ওয়াদা থাকায় এবং দীনের বাতিকে পূর্ণতা দানের চ্যালেঞ্জ থাকায় কেবল ইসলামই নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে দুনিয়ার আর কোনো ধর্ম, দর্শন বা মতবাদ নিঃসন্দেহে নির্মূল হয়ে যেত। ইসলাম শত্রুর ষড়যন্ত্র ও ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়েছে বটে, তবে এক সেকেন্ডের জন্যও থমকে দাঁড়ায়নি। ইসলাম ও মুসলিম জাতি আল্লাহর চিরন্তন ও শেষ বিধানের বাহক। অতএব, এটি ধ্বংস করা যাবে না। কবি ইকবালের ভাষায় মুসলমান পৃথিবীতে সূর্যের মতো বিচরণ করছে। কোথাও ডুবে যায়, কোথাও উদিত হয়।
আধুনিক সময়ের প্রতিযোগিতায় মুসলিমদের দুঃসময়ে তারা হয়তো খানিকটা পিছিয়ে পড়ে থাকবে। কিন্তু তারাই মূল পাইওনিয়ার। তারাই পথিকৃত। সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের পাদপ্রদীপের আলোয় এখন থেকে আবার ইনশাআল্লাহ মুসলিমদেরই দেখা যাবে। কারণ, মানবতার জন্য কোনো ঐশী বার্তা বহন করে না এমন প্রাণহীন, পয়গামহীন, মনুষ্যত্ব ও নৈতিকতাহীন, জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য অজানা লোকেদের হাতে বিশ্ব নেতৃত্ব বেশি দিন থাকতে পারে না। আল্লাহর ফযলে এমন একটি জ্বলন্ত জাগরণ একবিংশ শতাব্দীজুড়েই ধীরে ধীরে মানুষের ভাবনার, দৃষ্টির ও অভিজ্ঞতার দিগন্তে সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন